somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (কায়দে আযম)

২৪ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সময়টা তখন ১৮৭৬ সাল।
অক্টোবর মাস। বর্তমান বরিশাল (বাকেরগঞ্জ) অঞ্চলে মারাত্মক ঝড় হয়। এই ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রায় দুই লাখ মানুষ এই ঝড়ে প্রান হারায়। সেই সাথে গবাদি পশুসহ হাঁস মূরগী সব মরে শেষ। পুরো অঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। সে বছরই পশ্চিমবঙ্গে সেপ্টেম্বর মাসে জন্ম হয় জনপ্রিয় লেখক শরৎচন্দ্রের। এবং বছরের শেষ মাসে অর্থ্যাৎ ডিসেম্বরে করাচি শহরে জন্ম হয়- জিন্নাহর। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তার বাবা মা ছিলেন গুজরাটি। তাঁরা মাছের ব্যবসা করতেন। এই পরিবারটি শিয়া ইসমাইলি মতের অনুসারী। যাইহোক, বাংলাদেশের বদমাশ খন্দকার মোশতাকের সাথে জিন্নাহর বেশ মিল আছে। চেহারা এবং কাজে কর্মে।

ছোটবেলা থেকেই জিন্নাহ মেধাবী ছিলেন।
মেট্রিক পাশ করেই জিন্নাহ লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়তে যান। লন্ডন যাওয়ার আগে বিয়ে করেন। তখন তার পনের বছর। বিয়ের এক বছর পর জিন্নাহ লন্ডন চলে যান। জিন্নাহর স্ত্রী নাম এমিবাই। সে গ্রামের মেয়ে। লেখাপড়া কিছুই জানে না। জিন্নাহ লন্ডন যাবার এক বছর পর এমিবাই মারা যায়। এরপর পচিশ বছর কেটে যায়। জিন্নাহ আর বিয়ে করেন নি। তার বোন ফাতেমার অনুরোধে ১৯১৮ সালে জিন্নাহ আবার বিয়ে করেন। তখন জিন্নাহর বয়স ৪২ বছর। যাকে বিয়ে করেন তার নাম রতনবাই। রতনবাইয়ের বয়স ১৮ বছর। সে ছিলো হিন্দু। জাতপাত নিয়ে জিন্নাহর মাথা ব্যথা ছিলো না। তবে সে কোনো এক কারনে হিন্দুদের পছন্দ করতেন না।

২০ বছর বয়সে জিন্নাহ বোম্বেতে তার আইন পেশা শুরু করেন।
আইন পেশা ভালো না লাগাতে জিন্নাহ রাজনীতি নিয়ে মেতে উঠেন। আমরা জানি, জিন্নাহর মত ছিল যে ব্রিটিশদের বিদায়ের আগেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যদিকে গান্ধী চাইছিলেন যে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর দেশ বিভাগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হোক। এরপর দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। আমাদের জাতির জনক 'শেখ মুজিব' আর পাকিস্তানের জাতির জনক মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ। পাকিস্তানের জনগন জিন্নাহকে ভালোবেসে স্মরণ করে। জিন্নাহর কবর করাচী শহরে ৬০ একর জায়গা জুড়ে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ তার মাজার দেখতে যায়।

জিন্নাহকে বলা হয়- কায়েদে আজম।
কায়েদ মানে নেতা, আর আজম মানে- মহান। অর্থ্যাত মহান নেতা। ১৯৩৮ সালে মৌলানা মাযহার উদ-দীন (কবি ও সম্পাদক) জিন্নাহকে এ উপাধি দেন। জিন্নাহ মৃত্যুর কিছু দিন আগে ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় আসেন। তখন তিনি পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল। ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এবং ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনে ভাষণ দেন তিনি। এটাই তার জীবনের শেষ ভাষন ছিলো। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর করাচীতে নিজ বস ভবনে তিনি দীর্ঘদিন রোগে ভূগে মারা যান। এম্বুলেন্স এসেছিলো। কিন্তু এম্বুলেন্সে আর উঠতে হয়নি। তার আগেই শেষ। জিন্নাহ ঢাকায় এসে বঙ্গভবনে উঠতেন। বুড়িগঙ্গা নদী দেখতে যেতেন। লঞ্চে করে বুড়িগঙ্গা নদীতে ঘুরতেন।

জিন্নাহ সাহেবের বন্ধু-বান্ধব খুব কম ছিল।
তাঁর একমাত্র নারী বন্ধু ছিলেন সরোজিনী নাইডু। যিনি 'দ্য নাইটেঙ্গেল অব ইন্ডিয়া' নামে পরিচিত ছিলেন। সরোজিনী ছিলেন কবি ও রাজনীতিক। সরোজিনী এবং তার বোন ফাতেমা এই দুইজন নারী জিন্নাহর জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ন। ফাতিমা জিন্নাহ তার ভাইকে নিয়ে লিখেছেন, 'মাই ব্রাদার' নামে একটি বই। একজন বাঙ্গালী হিসেবে আমি জিন্নাহ কে ভালোবাসতে পারি না। কারন সে আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিলো। জিন্নাহর দুটা কথা আমার খুব ভালো লেগেছে- এক, 'পুরুষের সাথে নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া কোন সংগ্রামই সফল হতে পারে না'। দুই, 'এই পাকিস্তান রাষ্ট্রে আপনারা মসজিদ বা যেকোনো উপাসনালয়ে যাওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন'। ধর্ম নিয়ে জিন্নাহর কোনো মাথা ব্যথা ছিলো না।

জিন্নাহ প্রচুর সিগারেট খেতেন।
নামাজ রোজা করতেন না। মদ খেতেন। শুয়রের মাংস খেতেন। কুকুর পুষতেন। তবে বিনা দ্বিধায় বলা যায় জিন্নাহ হিন্দুদের পছন্দ করতেন না। ছোটবেলা হিন্দুদের দ্বারা তার পরিবার অপমানিত হয়েছিলো। অনেক বুদ্ধিজীবি মনে করেন- নেহরু, গান্ধী ও জিন্নাহ এই তিনজনের কারনে দেশ ভাগ হয়েছে। পাকিস্তানের সমস্ত সরকারী অফিসে জিন্নাহর ছবি দেখতে পাওয়া যায়। এমনকি টাকার মধ্যেও জিন্নাহর ছবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের আগের নাম ছিলো জিন্নাহ হল। কলকাতা ও ঢাকাতে অনেকবার হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা হয়েছে। নোয়াখালী দাঙ্গা এবং কলকাতায়ও ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মূল হোতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৩
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×