
রমজান মাস এসে গেলো।
অলরেডি দুটা রোজা শেষ। ইফতারের সময় পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। ভাঁজাপোড়া না খাওয়াই ভালো। ত্রিশ বছর হয়ে যাবার পর- শুধু মাত্র খাবারটা বেছে বেছে খেলে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা যায়। আমি এবার রোজার আগেই ভেবে রেখেছিলাম- ভাঁজাপোড়া খাবো না। কিন্তু টেবিলে বসার পর সব ভুলে যাই। একটার পর একটা খেতে থাকি। খেতেই থাকি। যদিও বেশির ভাগ খাবার বাসায় বানানো। টানা আধা ঘন্টা খেয়ে যাই। এরপর কষ্ট হয়। হাঁসফাঁস লাগে। রাতে না খেয়েই ঘুমাতে যাই। অতিরিক্ত খাওয়ার জন্য ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখি। গতকাল রাতেও ভয়ানক স্বপ্ন দেখেছি। সকালে সুরভি বলল, ঘুমের মধ্যে তুমি এত নড়াচড়া করো কেন? রাতের দুঃস্বপ্নের কথা আমি আর সুরভিকে বললাম না। আমি দেখেছি, রাতের স্বপ্নের কথা দিনে বললে কেমন হাস্যকর শোনায়।
আমার সেই ধার্মিক ভাবীর কথা বলি-
ভাবী আমাদের বাসায় এলেন ভর সন্ধ্যায় 'আজওয়া' খেজুর নিয়ে। বললেন, আগামীকাল থেকে রোজা শুরু হবে। চলো, ছাদে চলো। রমজানের চাঁদ দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ন। বাড়ির সবাইকে নিয়ে ছাদে গেলেন। আমিও সাথে গেলাম। চাঁদ দেখে ভাবী মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেন। বাচ্চাদের কোলে নিয়ে চাঁদ দেখালেন। চাঁদের দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে সূরা বললেন। সূরা তার মুখস্ত ছিলো না। এজন্য মোবাইল দেখে দেখে সূরা বললেন। তারপর সূরা পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিলেন। আমি বললাম, ভাবী আমাকে একটু ফুঁ দেন। দীর্ঘদিন ধরে বড় সময় খারাপ যাচ্ছে। ভাবী বললেন, রোজা রাখো, নামাজ পড়ো, দেখবে সময় ভালো হয়ে যাবে। আমি বললাম, আপনি ফুঁ দিলে কোনো উপকার পাবো না? ভাবী আমার কথার জবাব দিলেন না।
এবার রমজানের চাঁদ অন্যান্য বছরের মতো হয়নি।
এই নিয়ে ফেসবুকে অনেক আলাপ আলোচনা হয়েছে। এবারে চাঁদের নিচে একটা তাঁরা জ্বলজ্বল করছিলো। এটা দেখে সমস্ত মুসলিমরা অনেক খুশি। তাদের ধারনা ইমাম মাহাদি আসার সময় হয়েছে। আমাদের নবীজি যেসব ইঙ্গিত দিয়েছেন সেসব মিলে যাচ্ছে। নবীজি আরো বলেছেন, আকাশ থেকে বিকট শব্দ হবে। সেই শব্দে অনেকে অজ্ঞান হয়ে যাবে। অনেকে কালা হয়ে যাবে। এজন্য নবীজি বলে দিয়েছেন, ঘরের ভিতর থাকতে। নামাজ পড়তে, আল্লাহকে স্মরণ করতে। অবশ্য নাসা এসব বিষয়ে এখনও কিছু বলে নাই। নাসা কি বলে সেটা শোনার অপেক্ষায় আছি আমি। ইমাম মাহাদি আসুক। সমাজের দুষ্টলোকদের শায়েস্তা করুক। আমাদের দেশের দূর্নীতিবাজদের শিক্ষা দিক, পুতিনকে শিক্ষা দিক। অসৎ রাজনীতিবিদদের শিক্ষ দিক।
মানুষের যখন বয়স বাড়তে থাকে- তখন অতীরের কথা খুব বেশি মনে পড়ে।
আমার বয়স বাড়ছে। মাথায় বেশ কয়েকটা সাদা চুল দেখা যায়। একবার চিল্লায় গিয়েছিলাম। সেখানে নামাজের পর ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়। আমাদের চিল্লার প্রধান ব্যাক্তি আজাদ ভাই আমাকে বললেন, নূর তুমি মুফতি হও। এটা আমি চাই। আমি চুপ করে আছি। আজাদ ভাই বললেন, তুমি মালোশিয়া চলে যাও। ওদের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি টা খুব ভালো। আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমি বললাম, মুফতি, শায়েখ তো দূরের কথা মসজিদের 'খাদেম' হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। আজাদ ভাই বললেন, তুমি পারবে। আমি তোমার মধ্যে সে সম্ভবনা দেখতে পারছি। একসময় এই আজাদ ভাই আধুনিক মানুষ ছিলেন। টাইট গেঞ্জি, জিন্স প্যান্ট আর কেডস পড়তেন। তার একটা লাইব্রেরী ছিলো। তার লাইব্রেরীতে গিয়ে আমি অনেক প্রেমের উপন্যাস পড়েছি। এখন সে দেশবিদেশ চিল্লা করে বেড়ান।
বর্তমানে আজাদ ভাই মালোশিয়া আছেন।
তিনি চিল্লা করতে গেছেন। এর আগে আফ্রিকা গিয়েছিলেন চিল্লায়। মালোশিয়া থেকে চিল্লা শেষ করে সৌদি যাবেন। হজ্ব করে দেশে ফিরবেন। বাংলাদেশে প্রায় সব জায়গায় তিনি চিল্লা করেছেন। এখন চিল্লা করতে যান দেশের বাইরে। তার সাথে এতদিন থাকলে আমি মুফতি হতে না পারলেও বড় কোনো হুজুর হতে পারতাম। ওয়াজ করতে পারতাম গ্রামে গঞ্জে গিয়ে। মাদ্রাসায় বাচ্চাদের আরবী শেখাতে পারতাম। কোনো শোরুম উদ্বোধন হলে আমাকে ডেকে নিয়ে যেত। আমি দোয়া করে দিতাম। হয়তো এত দিনে আমি বায়তুম মোকারম মসজিদের প্রধান খতিব হয়ে যেতাম। আজাদ ভাইয়ের সাথে না থেকে মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছি। এখন তো মনে হয় হাশরের ময়দান পার হতে পারবো না। বড় চিন্তা যুক্ত আছি। দয়াল দয়া করো।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১০:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




