somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের গ্রামের গল্প

৩১ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



লোকটার নাম রমিজ উদ্দিন।
অথচ সবাই তাকে ডাকে বিজু নামে ডাকে। ১৯৭২ সালে বিজু একদিন পদ্মা নদীতে করে বিক্রমপুর চলে আসে। তখন তার বয়স পনের বছর। তার বাবা-মা নেই। দুনিয়াতে তার কেউ নেই। সে বাংলা পড়তে পারে, লিখতে পারে। বিজু বন্ধুক হাতে নিয়ে যুদ্ধ করেনি। কিন্তু সে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছে। শ্রী নগর বাজারের কাছে আসে বিজু। এক কাপড়ের দোকানে সামনে আসে। সে জানে কাপড় ছাড়া মানুষের কোন উপায় নেই। লজ্জা নিবারণের জন্য কাপড় লাগবেই। এবং এই কাপড়ই একদিন তার ভাগ্য বদলে দেবে। সে কাপড়ের দোকানের মালিককে বলল, বাকিতে আমাকে কিছু কাপড় দেন। আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাপড় বিক্রি করে আপনার টাকা পরিশোধ করে দেবো। দোকান মালিক বলল, আমাকে বোকা মনে হয়? যা ভাগ। ভন্ড। তখন বিজুর সাথে দেখা মোয়াজ্জেম হোসেনের। তিনি বিজুকে কিছু টাকা দেন কাপড়ের ব্যবসা করার জন্য। এই মোয়াজ্জেম হোসেন আমার দাদা।

বিজু কিছু শাড়ি, লুঙ্গি আর গামছা কিনলো।
সে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে এসব বিক্রি করতে লাগলো। তার বিক্রি খুব ভালো হলো। কারন বিজু হাস্যমূখী। কথায় রস আছে। তার গ্রাহক হলো গ্রাম বাংলার সহজ সরল নারীরা। সারাদিন কাপড় বিক্রি করে সে আলামিন বাজারের এক মসজিদে ঘুমায়। বিনিময়ে তাকে মসজিদ দুইবেলা পরিস্কার করে দিতে হয়। টানা পাঁচ বছর বাড়ি বাড়ি শাড়ি, গামছা আর লুঙ্গি বিক্রি করে বিজু নিজেই একটা দোকান দিতে সক্ষম হয়। এর আগে বালাসুর এলাকায় সে এক খন্ড জমি কিনেছে। জমিতে ঘর তুলেছে। দোকান দেওয়ার পর বিজুর বিয়ের শখ হয়। কিন্তু সে বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজে পায় না। কারন সে হচ্ছে জোলা। জোলার কাছে কে মেয়ে বিয়ে দেবে? একসময় যারা কাঁধে করে শাড়ি লুঙ্গি আর গামছা বিক্রি করতো তাদের জোলা বলা হতো। জোলা বলতে নিচু জাত মনে করা হতো। আমার দাদা বিজুর বিয়ের ব্যবস্থা করে দেন। বিয়েতে দাদা বিজুর স্ত্রীকে একটা সীতা হার উপহার দেন।

সুখের সংসার বিজুর।
দোকানে বেচা বিক্রি ভালো। বিজু আগেই বুঝেছিলো কাপড় মানুষের লাগবেই। একবেলা না খেয়ে থাকা যায় কিন্তু একবেলা ন্যাংটা থাকা যায় না। বিজুর দুই কন্যা জন্ম হলো। জমজ কন্যা। দেখতে দেখতে মেয়েরা বড় হলো। স্কুল পাশ দিলো। তাদের বিয়ের বয়স হলো। বিজু ধুমধাম করে দুই কন্যার বিবাহ দিলো। খরচে কোনো কার্পন্য করেনি বিজু। এই বিয়েতে আমার বাবা উপস্থিত ছিলো। যাইহোক, দুই কন্যার বিয়ের পর বিজুর স্ত্রী মারা গেলো। বিজু একা হয়ে গেলো। এদিকে এক কন্যাকে দিয়েছে শ্রীনগরের কাপড়ের দোকান অন্য কন্যাকে দিয়েছে গ্রামের বাড়ি। এখন বিজু শূন্য। এজন্য বিজুর মন খারাপ হয় না। কারন সে শূণ্য হাতেই বিক্রমপুর এসেছিলো। তাঁরা মেয়েরা ভালো থাকুক, তাহলেই সে খুশি। তাঁরা জীবন শেষের দিকে। এখন মৃত্যু হলেও সমস্যা নাই। দুই কন্যাকে ভালো পাত্রের সাথে বিবাহ দিয়েছেন। বাকি জীবনটা সে আনন্দ নিয়ে কাটাতে পারলেই খুশি।

বুড়ো বয়সে বিজু নদীর পাড়ে চলে গেলো।
পদ্মানদীর পাড়ে। সেখানে কোনো বাড়িঘর নেই। মানুষের কোলাহল নেই। আছে নির্মল বাতাস। যা মনকে শান্ত করে দেয়। অদেখা ভুবনের আনন্দ পাওয়ায় যায় গভীর রাতে। কামারগাও বাজারের পেছনে এক মাইল হেঁটে গেলেই বিশাল পদ্মানদী। সেখানেই পদ্মার পাড়ে বিজু একটা দোকান দিলো। সেই দোকানেই বিজু ঘুমায়। লোকজন বলাবলি করলো- শেষ বয়সে বিজু গেছে পাগল হয়ে। টানা সাত দিন পার হয়ে যায়, তার পাঁচ টাকার সদাই বিক্রি হয় না। কিনবে কে? সেখানে কোনো বাড়ি ঘর নেই। সে পথ দিয়ে মানুষও যাতায়াত করে না। বিজু চায়ও না তার বেচাকেনা হোক। এই নদীর দিকে তাকিয়ে থাকাতেই তার আনন্দ। মাঝে মাঝে কিছু লঞ্চ চলে যায় ভোট ভোট শব্দ করে। ছোট বড় কিছু নৌকা প্রায় সারাদিনই দেখা যায়। এগুলো মাছ ধরার নৌকা। বিজুর বড় ভালো লাগে। তার অবশ্য একটা দুঃখ আছে। সে তার বাবা মায়ের মুখ মনে করতে পারে না। তাঁরা দেখতে কেমন ছিলেন, সেটা বিজু জানে না।

বিজুর নতুন অভ্যস হয়ে পত্রিকা পড়া।
সে পুরো পত্রিকা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে। নদী পাড়ে পত্রিক আরাম করে পড়া যায় না। বাতাস পত্রিকার পাতা ওলট পালট করে দেয়। বিজু নিজের চা বানায়। চায়ে চুমুক দেয়, পত্রিকা পড়ে, নদীর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার বড় ভালো লাগে। নদীর পাড়ে কিছু গাছ লাগিয়েছে। সেই গাছের যত্ন নেয়। এই শেষ বয়সে এসে সে অনুভব করে জীবন আনন্দময়। লাইফ ইজ বিউটিফুল। এখন তার দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে। এখন গ্রামের অনেকেই তার কাছে আসে। গল্প করে। বিজু তাদের চা খাওয়ায়। বিজুর ধারনা সে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবে। যুদ্ধের ময়দানে সে মুক্তিবাহিনীর সাথে থেকেছে। তার পাশে থাকা লোক গুলিতে মরে গেছে। তার কিচ্ছু হয়নি। খালি হাতে এই অঞ্চলে এসে সে দোকান করেছে, বাড়ি করেছে, বিয়ে করেছে, তার সন্তান হয়েছে। সন্তানদের বিয়ে দিয়েছে। নিজের কথা কখনও ভাবে নি। এই পদ্মার পাড়ে এসে সে যেন নতুন জীবন পেয়েছে। এই জীবনটাই তার কাছে সবচেয়ে আনন্দময় লাগছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:৫৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×