টানা চার বছর আমাকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়াতে হয়েছে।
টিউশনিতে কোনো সম্মান নেই। আছে অপমান আর অবহেলা। আমি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেই ঢাকায় চলে আসি। একটা মেসে উঠি। জগন্নাথে ভরতি হই, বাংলাভাষা ও সাহিত্যে। অনার্স করি, মাস্টার্স করি। যাইহোক, ঢাকা আমি নতুন এসেছি। এর আগে কখনও ঢাকা আসি নাই। রাস্তাঘাট কিছুই চিনি না। বলতে লজ্জা নেই, আমার দরিদ্র পরিবারের জন্ম। ঢাকা এসেই আমি মনে মনে ভেবে রেখেছি- বাবার কাছ থেকে কোনো টাকা নিবো না। নিজের লেখাপড়ার খরচ আমি নিজেই চালাবো। পারলে বাবা মাকে টাকা পাঠাবো।
আমি চারটা টিউশনি পেয়ে গেলাম।
মনে মনে ভাবছি আরো দুটা টিউশনি পেলে খুব ভালো হতো। ভীষন ব্যস্ততা আমার। আমার মধ্যে ফাঁকিবাজি নেই। ছাত্র ছাত্রীদের মন দিয়ে পড়াই। নিজেও মন দিয়ে পড়ি। নিজের পড়াশোনা, ক্লাশ আবার টিউশনি। দম ফেলার সময় নেই আমার। আমার মেস থেকে জগন্নাথ কলেজ অনেক দূর। জ্যামের রাস্তা। সব কিছু মিলিয়ে অনেক কষ্ট আমার। আমি গরীবের সন্তান। চিন্তা একটাই কোনো রকমে পাশ করে বেড়িয়ে আমাকে একটা চাকরি পেতে হবে। সংসারের দায়িত্ব নিতে হবে। আব্বার অনেক বয়স হয়েছে। প্রেম, ভালোবাসা এবং কোনো প্রকার বিলাসিতা আমার জন্য নয়। এটা আমাকে কেউ বলেনি, কেউ শিখিয়ে দেয়নি। বাস্তবতা থেকেই নিজে নিজেই শিখে নিয়েছি। এবং আমি সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।
কিন্তু একদিন এক ছাত্রের মা আমার দিকে যেন কেমন-কেমন করে তাকায়।
তার তাকানোর স্টাইলটা সহজ সরল না। মহিলার বয়স ৩৫ হবে। স্বাস্থ্য বেশ ভালো। দেখতে সুন্দর চেহারা। মিথ্যা বলব না, আমি দেখতে সুন্দর। আমার স্বাস্থ্য ভালো। সব সময় আমি পরিপাটি থাকি। শহরের মানুষেরা যাকে স্মার্ট বলে। মহিলার স্বামী দুবাই থাকেন। মহিলা আমাকে ডেকে তার শোয়ার ঘরে নিয়ে গেলো। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। জোর করে আমার ঠোঁটে চুমু খাচ্ছে। মনে হচ্ছে মহিলা আমার ঠোঁট ছিড়ে ফেলবে। মহিলার বিশাল বক্ষ আমার শরীরের সাথে লেগে আছে। আমি মহিলার সাথে শক্তিতে পারছি না। এই মহিলার চেয়ে বয়সে আমি কমপক্ষে ১২ বছরের ছোট হবো। মহিলা আদুরে গলায় বলল- তুমি একটা বোকা ছেলে। কত দিন ধরে তোমাকে কত রকম ইশারা করছি, তুমি কিছুই বুঝ না। আজ তোমাকে ছাড়বো না।
আরেকটা ঘটনা বলি- ঝিগাতলা একটা প্রাইভেট পড়াই।
ক্লাস ফোরের এক ছেলেকে। ছেলেটা লেখাপড়ায় ভালো। আমাকে খুব খাটতে হয় না। অল্পতেই ছেলেটা সব বুঝে যায়। এই ছেলের এক খালা আছে। নাম রুবা। বয়স আমার সমনাই হবে। নানান উছিলায় রুবা বেশ কয়েকবার এসে আমার সাথে খাতির জমাতে চেষ্টা করে। একদিন পড়াচ্ছি। তখন রুবা এসে বলল- আজ বাসায় কেউ নেই। রুবা আমার পাশে এসে বসলো। বুকে ওড়না নেই। তার বুক দিয়ে আমার বাহুতে বারবার ঘসা দিচ্ছে। তার পা দিয়ে আমার পা জড়িয়ে ধরতে চেষ্টা করছে। আমি আমার ছাত্রকে বললাম, তুমি আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো। প্লীজ। তারপর ছাত্র চলে গেলে রুবাকে বললাম, রুবা আমি গরীবের সন্তান। আমাকে নিজের খরচ নিজে চালাতে হয়। আপনি এরকম করলে এই প্রাইভেটটা আমাকে ছেড়ে দিতে হবে। কথা শেষ হওয়ার আগেই রুবা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল- তুমি আমাকে বিয়ে করবে? আমার নামে ঢাকায় দুটা ফ্লাট আছে। সেটা দিয়ে আমাদের হয়ে যাবে।
আরেকটা ঘটনা বলে লেখাটা শেষ করছি।
একটা মেয়েকে পড়াই। মেয়েটার বাবা হুজুর। মেয়েটা এসএসসি পরীক্ষার্থী। মেয়েটার মা আমাকে অনেক স্নেহ করেন। প্রায়ই বলেন, মেসে কি খাও, না খাও। আজ আমাদের এখানে খেয়ে যাও। দেশী মুরগী রান্না করেছি। কেউ কেউ অনেক ভালোবাসা নিয়ে অনুরোধ করেন, আমি মানা করতে পারি না। যাইহোক, একদিন পড়াচ্ছি। আমার ছাত্রী বললো পড়তে ভালো লাগে না স্যার। আমি বললাম, কি ভালো লাগে? ছাত্রী বলল, প্রেম করতে ভালো লাগে। আমি বললাম, দুষ্টমি বাদ দিয়ে পড়ায় মন দাও। তিন মাস পর তোমার পরীক্ষা। ছাত্রী করলো কি- হঠাত আমার কোলে এসে বসলো। তারপর আমার একটা হাত নিয়ে তার বুকের উপর রাখলো। এই ঘটনার পর আমি এই মেয়েটাকে আর পড়াতে যাইনি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:১৫