
আমি বিয়ে করেছি দশ বছর হয়ে গেছে।
কিন্তু আমি কখনও সুরভিদের গ্রামের বাড়ী যাইনি। বেশ কয়েকবার যাই যাই করে শেষমেশ আর যাওয়া হয়নি। এবার আমার শ্বশুর ঠিক করেছেন সবাইকে নিয়ে বরিশাল যাবেন। বিদেশ থেকে তার আরেক মেয়ে জামাই এসেছে। সেও যাবেন। দুটা বড় গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। আমরা সব মিলিয়ে তেরো জন। সুরভি অনেক খুশি। সে ১৬ বছর পর গ্রামে যাচ্ছে। সুরভির মা মারা যাওয়ার পর তার আর গ্রামে যাওয়া হয়নি। সুরভি ব্যাগ গুছিয়ে নিলো। আগামীকাল ভোরে রওনা দেওয়া হবে। আমার ছোট কন্যা ফারাজা সেও অনেক খুশি। খুশিতে সে নাচতে শুরু করেছে।
সুরভির ভাগ্য খারাপ। তার গ্রামে যাওয়া হলো না।
আমাদের কন্যা ফারাজার হঠাত জ্বর এলো। প্রচুর জ্বর। সেই সাথে বমি। এখন জ্বর এলেই বুকের মধ্যে কামড় দেয় ডেঙ্গু নয়তো। সুরভি বলল, তুমি যাও। নইলে আব্বার মন খারাপ হবে। তার অনেক দিনের ইচ্ছা মেয়ে জামাইদের সাথে করে গ্রামে নিয়ে যাবেন। পরের দিন ভোরে আমরা রওনা হলাম। দুই গাড়ির জায়াগা এক গাড়ী গেলো। ভোর ছয়টায় আমরা রওনা দিলাম। একসময় বরিশাল যেতে ৮/১০ ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন সময় লাগে মাত্র ৪ ঘন্টা। সুরভিদের গ্রামের বাড়ি না গেলেও আমি বিয়ের আগে দুবার বরিশাল গিয়েছি। বরিশাল শহরটা খুব সুন্দর। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। যাইহোক।
সুন্দর রাস্তা হয়েছে।
আছে পদ্মাসেতু। কোন যানজট পাইনি। ভাঙ্গা এলাকায় আমরা সকালের নাস্তা করলাম। সকাল এগারোটার মধ্যে সুরভিদের গ্রামের বাড়ি চলে গেলাম। একদম গ্রাম। দেখলে মনে হয় অজপাড়া গা। অথচ সবাই পাকা বাড়ি করেছে। সুরভিদের গ্রামের দুইপাশে দুটা নদী আছে। সন্ধ্যা আর সুগন্ধা নদী। কীর্তনখোলার সাথেই সংযোগ সন্ধ্যা নদীর। একসময় ঢাকা সদরঘাট থেকে সুরভিরা কীর্তনখোলা নদী হয়ে এই সন্ধ্যা নদীতে এসে নামতো। তারপর দশ মিনিট হেঁটে তাদের বাড়ি। আমার শ্বশুর ঘুরে ঘুরে পুরো গ্রাম দেখালেন আমাদের। শ্বশুর সাহেব তার নিজের জায়াগাতে মসজিদ করেছেন। এতিমখানা মাদ্রাসা করেছেন। শ্বশুর সাহেব এ গ্রামেই বড় হয়েছেন।
আমি ভীষন রকমের লাজুক মানুষ।
গ্রামের অনেক মানুষজন সুরভির স্বামীকে দেখতে এসেছে। তাঁরা প্রশ্ন করেন, কোনজন সুরভীর স্বামী? আমি হাসি মুখে হাত তুলি। সারাটা দিন অসংখ্য মানুষ এলেন আমাকে দেখতে। এক বুড়ি বললেন, আমি রুনুর বান্ধবী ছিলাম। রুনু হচ্ছে সুরভির মায়ের নাম। বয়স্ক মানুষেরা এসে আমার মাথায়, পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। সুরভির ফুপু দুপুরে বিরাট খাওয়ার আয়োজন করেছে। দেশী মূরগী রোষ্ট ও ভূণা, গরুর মাংস, অন্তত ৮/১০ রকমের দেশী মাছ, ইলিশ মাছ, সাত রকমের ভরতা, আরো অনেক কিছু। পায়েস, পিঠা। জামাই প্রথমবার গ্রামে এসেছে। তাকে জোর করেও হলেও গলা পর্যন্ত খাওয়াতে হবেই।
সুরভির মামা খবর পেয়েছেন, আমরা বরিশাল গিয়েছি।
উনি ফোন করে শ্বশুর মশাইকে কে বললেন, জামাইদের নিয়ে আমাদের বাড়ি আসতেই হবে। আর কিছু শুনতে চাই না। বিকেলে গেলাম সুরভির মামার বাড়ি। সুরভিদের বাড়ি থেকে দেড় ঘন্টার পথ। সুরভির দুই মামা আমাকে ধরে কান্না শুরু করে দিয়েছেন। আজ যদি তার বোন রুনু (সুরভির মা) বেঁচে থাকতো। ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কথা। মামা খাসি জবো দিলেন। নিজের পোষা ৮/১০ মূরগী জবো করলেন। বাড়ির মহিলারা পিঠা বানাতে লেগে লেগেন। এলাহি কান্ড কারখানা। আমাকে পুরো গ্রাম ঘরে দেখালেন। তাদের জমিজমা দেখালেন। পথে যার সাথেই দেখা হয়, আমাকে দেখিয়ে বলেন, এটা আমাদের বাড়ীর জামাই।
সুরভির বাবা আর মায়ের গ্রাম দেখলাম।
সহজ সরল সুন্দর গ্রাম। প্রতিটা বাড়িতে পুকুর আছে। গাইগরু আছে। পুরোও গ্রাম গাছপালা দিয়ে ভরা। গাছ ভরা ফল, কেউ খায় না। গুঠিয়া এলাকায় এক মসজিদ দেখলাম। বিশাল মসজিদ। এত বড় এবং সুন্দর মসজিদ বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। এক ফাঁকে দুর্গাসাগর দিঘীও দেখে নিলাম। বিশাল দীঘি। দিঘীর চেয়ে আমাকে বেশি মুগ্ধ করলো একটা বটগাছ। বিশাল এক বটগাছ। প্রতিটা গ্রামের ভিতরের দিকের রাস্তা গুলো পর্যন্ত পাকা। মাটির রাস্তা খুঁজে পেলাম না। চারিদকে প্রচুর গাছপালা। মন ভরে অক্সিজেন নিয়ে নিলাম। বেশ কিছু ছবি তুলেছি। যথেষ্ট আদর ভালোবাসা আর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে থাকলাম।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


