
ডাক্তার পাথরের মতো মুখ করে বলেছেন -মিসির আলি সাহেব, আপনার শরীরের কলকব্জা সবই নষ্ট হয়ে গেছে। এটা কি আপনি জানেন?
মিসির আলি হাসতে হাসতে বললেন, জানি।
আরও কিছুদিন বেচে থাকতে চান, না এখনই মরে যেতে চান?
অল্প কিছুদিন বাচতে চাই।
কত দিন?
এই ধরুন এক বছর।
মিসির আলি ভেবেছিলেন ডাক্তার বলবেন, এক বৎসর কেন? ডাক্তার সে প্রশ্ন করলেন না, খস খস করে প্রেসক্রিপশন লিখতে লাগলেন।
গতকাল রাতের স্বপ্ন-
এমন এক জায়গায় চলে গিয়েছি যেখানে কোন গাছপালা নেই। হঠাৎ করে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হল, মনে হল যেন দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। তখন দূর থেকে কে যেন বলল, গাছ না থাকলে তো কষ্ট হবেই! আমি বললাম, গাছ না থাকলে কষ্ট কেন হবে? গাছ না থাকলে অক্সিজেন আসবে কোথা থেকে? রোদের মধ্যে ছায়া পাওয়া যাবে কোথায়? সমুদ্রের পানি উপচে পৃথিবী ভেসে যাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীটা সুন্দর করে সাজাবার জন্য- সবুজ একটা পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে আমাদের'ই। বোকা মানুষ শুধু টাকা-টাকা করে। আরে... গাছ না থাকলে, পৃথিবী থাকবে না, তখন টাকা দিয়ে কি করবি? আগে তো পৃথিবীটাকে বাঁচাতে হবে।
আমরা সবাই ঢাকা থাকি শুধু আমার লাল চাচা গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
আমাদের গ্রামের বাড়ি অনেক রকম গাছ আছে। সব গুলো গাছ অনেক বড় বড়। একদিন লাল চাচা'র টাকার দরকার হলো, তিনি কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে সব গুলো গাছ কেটে বিক্রি করে দিলেন। এক শুক্রবার আমি আর আব্বা গ্রামের বাড়িতে গেলাম। গিয়ে দেখি উঠান ফাঁকা। একটা গাছও নেই। আব্বা খুব রাগারাগি করলো লাল চাচার সাথে। এই গাছ গুলো অনেক যত্ন নিয়ে লাগিয়ে ছিলেন, আমার দাদা আর আব্বা। লাল চাচার এই কর্মকাণ্ডে আব্বা খুব কষ্ট পেলেন। তিনি রাগ করে বললেন- আমি আর গ্রামের বাড়ি যাব না। লাল চাচা একদিন আমাকে ফোন করে জানালেন, তিনি আবার নতুন করে অনেক গুলো গাছের চারা লাগিয়েছেন। সারাদিন তিনি গাছের যত্ন নিতে খুব ব্যস্ত। তার খাওয়া-দাওয়া, গোছল, ঘুম সব হারাম হয়ে গেছে। আব্বা যেন একবার গ্রামে গিয়ে দেখে আসে।
গাছ কেটো না, গাছ মেরো না, গাছ আমাদের ভাই।
মন দিয়ে আজ শোনো সবাই- বলতে শুধু চাই- গাছের মতো এমন ভালো বন্ধু নাই। কিন্তু এই সহজ কথাআটা কেউ বুঝে না। বুঝতে চায় না। মানতে চায়। সবাই আপন আপন লইয়া আছে। রোমান আমলে স্টেডিয়ামের মধ্যে ক্ষুধার্ত সিংহের সামনে ক্রীতদাসদের ছেড়ে দেওয়া হতো, হাতে একটা অস্ত্র দিয়ে। সিংহের সাথে কোনো মানুষ পারে? সিংহ সেই লোকটাকে মেরে কামড়ে-কামড়ে খেত আর স্টেডিয়াম ভরতি হাজার হাজার মানুষ তাই দেখে আনন্দ পেত। তারপর কত বছর কেটে গেছে, মানুষ অনেক সভ্য হয়েছে, তবু অনেক মানুষের মধ্যে সেরকম নিষ্ঠুরতা রয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


