
রাত ১১ টা। বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে!
সেই সাথে ধমকা হাওয়া। জানালার সামনে দাঁড়াতেই বৃষ্টির ছাট এসে ভিজিয়ে দিলো অনেকখানি। যতদূর চোখ গেলো কিছুই দেখা গেলো না। আমি একটা সিগারেট শেষ করে বিছানায় গেলাম। আর কি আশ্চর্য সাথে সাথে ঘুমিয়ে গেলাম। গভীর ঘুম। এমন তো কখনও হয়! হয়তো, বৃষ্টির কারনে আবহাওয়া ঠান্ডা- এই জন্যই বোধহয় ঘুম এসে গেলো। বৃষ্টি মানুষের মনকে নরম করে দেয়। এক বৃষ্টির দিনে এক কৃপণ লোককে দেখেছিলাম পরপর দুই কাপ চা আর দুটা বেনসন সিগারেট খেয়ে নিলো। যদিও মানুষের বয়স যত বাড়ে, আকাঙ্ক্ষা তত বাড়ে। ঘুরেফিরে আমার সেই মেয়েটার কথা মনে পড়ে। তার সাংঘাতিক ভালোবাসাই তার প্রতি মনোযোগী করে তুলেছিলো আমায়। সহজ সরল একটা মেয়ে। দেখলেই বুঝা যায়- কোনো পাপ তাকে স্পর্শ করেনি।
সেই মেয়েটা সারা জীবন আমার সঙ্গে থাকলে ভালোই হতো!
মেয়েটা প্রতিদিন সন্ধ্যা নদীর ধারে বেড়াতে আসে। এটা আমি খুব ভালো করেই জানতাম। আর আমি প্রতিদিন এই নদীর ধারেই হেঁটে বেড়াই। দীর্ঘদিনের অভ্যাস। যাইহোক, একদিন ভোরবেলা নদীর পাড়ে এসেছি। তখনও আকাশ ভালো করে পরিস্কার হয়নি। পাখিদের ঘুম ভাঙ্গেনি। তবে চমৎকার স্বচ্ছ পবিত্র বাতাস। অতি মনোরম পরিবেশ। শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে। দেখলাম লাবনী নদীর পাড়ে অর্জুন গাছের নিচে বসে আছে। বিষন্ন তার মুখ! দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে- সুন্দর একটা চিত্রকর্ম। জায়গাটা এত নিরিবিলি তাকে জড়িয়ে ধরলেও কেউ দেখবে না। মেয়েটাকে নাম ধরে ডাকলাম- লাবনী? লাবনী চমকে গেলো! আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। ঠিক তখন অনেক গুলো ফুলের সৌরভ এসে আমাকে ধাক্কা দিলো। সুন্দর গন্ধ মানুষকে মুগ্ধ করে দেয়!
কোনো ভনিতা না করেই বললাম- তোমার সাথে কথা আছে।
লাবনী হাসলো। হাসিটা সুন্দর, সহজ সরল। একদম বুকে এসে লাগে! আমি খেয়াল করে দেখেছি- জটিল কুটিল মানুষদের হাসি সুন্দর হয় না। বললাম, তুমি এত ভোরে নদীর পাড়ে কেন? এই গ্রামে তো বহু মেয়ে আছে। তাঁরা তো কেউ এত ভোরে নদীর পাড়ে আসে না। লাবনী বলল, আমি তোমাকে দেখতে আসি। বোকা মেয়ের কথা শুনে আমি হাসলাম। বললাম, আমার তো বউ আছে, বাচ্চা আছে। লাবনী বলল, আমি তোমার বউয়ের সতীন হতে চাই। নির্লজ মেয়ের কথা শুনে আমি বেশ অবাক হলাম। বললাম, কি হাবিজাবি বকছো! লাবনী বলল, তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে- তুমি খুব লজ্জা পেলে? আমি বললাম, দেখো লাবনী বিশ্ব সংসার সম্পর্কে তোমার কোনো ধারনাই নেই। তুমি একটা ছোট্র গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছো! ভালো করে তাকিয়ে দেখো আকাশ কত বিশাল!
লাবনী অন্যদশ জন মেয়ের মতো নয়।
তার চরিত্রে একটা রহস্যময় দিক আছে। যা আমাকে আসলেই মুগ্ধ করে, আনন্দ দেয়। লাবনীর চেহারায় ধার আছে, প্রচন্ড আকর্ষনীয়। তবে সুন্দরী নারী দেখে আমি দুর্বল হয়ে যাবো এরকমই আমি নই। কিন্তু এই লাবনী আমাকে কিছুটা প্রসন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। এর কারন কি? তাই আমি কিছুটা অস্থির, বলা চলে চিন্তিত। আমি খেয়াল করেছি লাবনী সান্নিধ্য আমার ভালো লাগে। মন নেচে ওঠে। রক্তে যেন ভুমিকম্প হয়। এক একজন মানুষ থাকে তাঁরা অনেকখানি দখল করে নিতে জানে। সম্মোহন শক্তি তাদের প্রবল। তাঁরা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে। ঠেকায় তাদের কে! তাঁরা নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই লিখে। আমি কি লাবনীর কাছ থেকে দূরে চলে যাবো? নাকি লাবনীর খুব কাছাকাছি চলে যাবো। কোনটা সঠিক হবে?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


