কোরআনে ২৭ টি সুরায় সর্বমোট ৭৪বার ফেরাউনের কথা উল্লেখ আছে।
ফেরাউন শুধু অত্যাচারী শাসকই ছিল না, সে নিজেকে খোদা দাবি করতো, আল্লাহর পরিবর্তে মানুষকে তার ইবাদত ও পূজা করতে বলতো। ফেরাউন তার রাষ্ট্র ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মানুষের ওপর নির্মম নির্যাতন চালাতো এবং সে যুগের শিশুদের হত্যা করতো। হজরত মুসা (আ.)-এর সময় পরপর দুজন ফেরাউন ছিল। আমরা জানি, ফেরাউন’ কোনো ব্যক্তির নাম নয়। এটি তৎকালীন মিসরের সম্রাটদের উপাধি। ফেরাউনদের নাম যাইহোক, তৎকালীন শাসকদের খেতাব ছিল ফেরাউন।
যীশুর জন্মের বহু বছর আগে জন্ম নিয়েছিলেন- ফেরাউন।
মিশরে নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছিল খ্রীস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে। পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন হল- মিশরীয় সভ্যতা। যাইহোক, আমি আমার গল্পে ফিরে যাই। ফেরাউনের এক দাসী ছিল। এই দাসীর ছোট ছোট দুই মেয়ে ছিলো। একটার বয়স এক বছর, আরেকটার বয়স তিন বছর। একদিন দাসীটি গোপনে মুসলমান হয়ে যায়। এ ঘটনা ফেরাউন ঠিকই জেনে যায়। এবং প্রচন্ড রেগে যায়।
ফেরাউন বড় কড়াইতে তেল গরম করে।
গরম তেল টগবগ করে ফুটতে থাকে। ফেরাউন দাসীকে ডেকে আনে। বলে, ধানাইপানাই করবা না। এখন তোমার সামনে পথ দুটা। এক, চিৎকার করে- মূসার খোদাকে অস্বীকার করো। তাহলে তোমাকে মুক্ত করে দেওয়া হবে। সেই সাথে তোমাকে পর্যাপ্ত টাকা পয়সা দেওয়া হবে। যেন তুমি দুই মেয়েকে নিয়ে বাকি জীবন আরামে পার করে দিতে পারো। দুই হচ্ছে, তোমার দুই কন্যাকে ফুটন্ত কড়াইতে ছেড়ে দেওয়া হবে তাঁরা ছটফট করতে করতে তোমার চোখের সামনে মরবে। এরপর তোমাকেও গরম তেলে ছেড়ে দেওয়া হবে। আমার রাজত্বে থেকে তুমি যাদুকর মূসার তাবিদারি করবে সেটা আমি মেনে নিবো না।
দাসী বলল, ওহে ফেরাউন আমার তো মাত্র দুটি সন্তান-
যদি আমার বারোটি সন্তান থাকতো এবং তাদের প্রত্যেককে যদি তুমি ফুটন্ত তেলে ফেলে হত্যা করো তবু আমি তোমার কথা শুনব না। মানবো না। নো নেভার। আমার ঈমান আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। মিঃ ফেরাউন তোমার যা খুশি করো। আর শুনে রাখো মূসা আমার নবী। আল্লাহ্ আমার রব। এই রব'ই আমার সব। তোমার মতো বদ লোককে আমি প্রভু বলে মানতে পারবো না। ফেরাউন মনে মনে বলল- নির্বোধ নারী।
দাসীর কথা শুনে ফেরাউনের খুব রাগ হলো।
বেজায় রাগ। দাসীর ছোট ছোট দুই মেয়েকে ফেরাউন গরম তেলের মধ্যে ছেড়ে দিলো। মুহুর্তের মধ্যে শিশু দুজন ছটফট করতে করতে মরে গেলো। তবু দাসী তার সদ্ধান্তে অটল রইলো। এরপর ফেরাউন হাসতে হাসতে দাসীটি কে গরম তেলে নিক্ষেপ করলো। বড় মর্মান্তিক ঘটনা। এই ঘটনায় আল্লাহর আরশ কেঁপে কেঁপে উঠলো। আল্লাহ্ এই মা এবং তার দুই কন্যাকে বিনা বিচারে বেহেশতে দাখিল করলেন। (সুবাহানাল্লাহ)
আমাদের প্রিয় নবীজি এই ঘটনার কিছুই জানতেন না।
একবার নবীজি সাত আসমানে গেলেন। সেখানে নবীজি বাইতুল মোকাদ্দাসে দুই রাকাত নামায আদায় করেন। তারপর অনন্ত নক্ষত্র পথ পাড়ি দিচ্ছিলেন বোরক যানে করে। নবীজির সাথে ছিলেন, গ্রেট জিবরাঈল। হঠাত নবীজি খুব সুন্দর গন্ধ পান। এই ঘ্রানে নবীজির মন প্রান নেচে ওঠে। অতি মনোরম সেই ঘ্রান। বিশ্ব নবী বিমোহিত হয়ে গেলেন। মুগ্ধ হয়ে গেলেন! নবীজি বললেন, ভাই জিবরাঈল এত সুন্দর গন্ধ কোথা থেকে আসছে? জিবরাঈল তখন নবীজিকে ফেরাউন ও দাসীর ঘটনাটি বলেন। ঘটনাটি শুনে নবীজির চোখে পানি চলে আসে। জিবরাঈল নবীজির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলেন- হুজুর এই মনোমুগ্ধকর গন্ধ আসছে ফেরাউনের দাসীর কবর থেকে। (সুবহান আল্লাহ)
মূলত এসব গল্পের কোনো ভিত্তি নেই।
মুখে মুখে এসব গল্প তৈরি হয়েছে যুগ যুগ ধরে। এক মুখ থেকে যখন এসব গল্প আরেক মুখে যায় তখন- ডালপালা গজাতে থাকে। ডাপালা গজাতে গজাতে গল্প গুলো হয়ে যায় অলৌকিক রুপকথা। এসব গল্প কয়েক লাখ আছে। ওয়াজ করার সময় হুজুরেরা রস লাগিয়ে এসব গল্প বলে থাকেন। ধার্মিকেরা শুনে আর চিৎকার করে 'সুবাহানাল্লাহ' বলে। বাচ্চারা ননসেন্স রাইম নামে কিছু গল্প-ছড়া পড়ে। যার কোনো মানে থাকে না। ঠিক তেমনি ধার্মিকদের এসব গল্পে লজিক থাকে না। এসব গল্প গুলোকে 'ননসেন্স স্টোরি' বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:০২