somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জীবনের গল্প- ৮৬

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ আমার তোলা।

আমার চোখের সামনে, আমার স্ত্রী এবং বাচ্চা মারা গেল।
আমি কিছুই করতে পারলাম না। স্ত্রীর হাত ধরে বসে থাকলাম, স্ত্রীর চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। ডাক্তার বলল- যে কোনো একজনকে বাঁচানো সম্ভব হবে। এক মিনিটের মধ্যে ভেবে বলুন- আপনি কাকে চান? আমি বললাম- আমি দু'জনকেই চাই। একটুপর ডাক্তার বললেন- দুঃখিত আমরা কাউকেই বাঁচাতে পারব না। ঈশ্বরকে ডাকুন। প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পেটের মধ্যে বাচ্চা দু'টি মরে গেল। তার দুই মিনিট পর মরে গেল আমার স্ত্রী। এমন সময় যেন আল্লাহ কাউকে না দেন। আমি কাঁদছি কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। বুকের মধ্যে আর গলার মধ্যে কি যেন দলা পাকিয়ে উঠছে বারবার। সতের মিনিটের মধ্যে সব শেষ।

আমার স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর আমি নিয়মিত ডাক্তার দেখিয়েছি।
ডাক্তার বলেছেন- আপনার স্ত্রী খুব ভালো আছেন। কোনো প্রকার সমস্যা নেই। ডাক্তার জেরিন খান, আমার স্ত্রীকে সব সময় বলতেন- আপনার স্বামী আপনার অনেক টেককেয়ার করেন। আপনি অনেক ভাগ্যবতী। আমি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী- দশ মাস আমার স্ত্রীকে ডাবের পানি খাইয়েছি। চুলে তেল দিয়ে আঁচড়ে দিয়েছি। রাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতাম। সময় মত ওষুধ খাওয়াতাম। আমার স্ত্রী বারবার একটা কথা বলত- আমার খুব ভয় করে, আমি যদি মরে যাই। তুমি একা কিভাবে বাচ্চাকে পালবে? আমি বলতাম- দূর বোকা মেয়ে, কিচ্ছু হবে না। কোনো ভয় নেই। আমি আছি না!

আমার স্ত্রী ছিল একদম সহজ সরল একটি মেয়ে।
তার চোখে মুখে সারাক্ষণ খেলা করত- এক আকাশ মায়া। মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখলে কেঁদে ফেলত। আমি আমার স্ত্রীকে আদর করে- বাবু বলে ডাকতাম। আর আমাকে বাবুই বলে ডাকতো। তিন বছর প্রেম করেছি আমরা। তারপর বিয়ে। লঞ্চে করে বরিশাল যাওয়ার পথে প্রথম পরিচয়। তখন রাত আড়াইটা। শীতকাল। তিনতলা লঞ্চের ছাদে আমি অন্ধকারে বসে ছিলাম, হঠাৎ দেখলাম একটি মেয়ে একা একা হাঁটছে। বাতাসে তার চুল-ওড়না পতাকার মতন উড়ছে। মেয়েটি পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সময়- আমি বাংলা সিনেমার নায়কের মতন করে মেয়েটিকে ধরে ফেলি। সময় মত না ধরতে পারলে- মেয়েটি করতোয়া নদীতে পড়ে যেত।

আমরা দু'জন মিলে আমাদের বাচ্চার জন্য অনেক কেনাকাটা করেছি-
গুলশানের একটা মার্কেট থেকে। এই মার্কেটে শুধু বাচ্চাদের নানান জিনিসপত্র পাওয়া যায়। সাত মাসের সময় জানতে পারি যমজ বাচ্চা হবে। আমরা দু'জন অনেক চিন্তা ভাবনা করে- দু'টি নাম ঠিক করি। টাপুর-টুপুর। টাপুর-টুপুরকে নিয়ে আমরা দু'জন অনেক স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। আমার স্ত্রীর অনুরোধেই আমি অপরেশন থিয়েটারে যাই। 'ও' শুধু বলতো- তুমি আমার হাত শক্ত করে ধরে থাকবে, তাহলে আমার কোনো ভয় লাগবে না। হাসপাতালে ভরতি হওয়ার দু'দিন আগেও আমি আমার স্ত্রীর পেটে কান রেখে শুনেছি- টাপুর-টপুরের নড়াচড়ার শব্দ। আমাদের পরিবার আমাদের প্রেমের বিয়ে মেনে নেয়নি। আমরা আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকতাম। দুই রুমের ছোট্র একটা ফ্লাট।

আমার স্ত্রী এবং বাচ্চারা মারা গেল আজ প্রায় দুই বছর হলো।
আমি ভাবি- আমি কেন মরলাম না? এই কষ্টটাই আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়। গত দুই বছরে আমার সমস্ত আত্মীয় স্বজন আর বন্ধু বান্ধব অনেক শান্তনার কথা বলেছে। দুই বন্ধু মিলে- আমার মনের অবস্থা পরিবর্তন করার জন্য আমাকে নিয়ে গেল ঈন্দিরা রোডের এক বাসায়। সেখানে গিয়ে দেখি- বেশ কয়েকটা আধুনিক সুন্দরী মেয়ে। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। আমার এক মুহূর্তের জন্যও ইচ্ছা করে নি- কোনো মেয়েকে জড়িয়ে ধরি অথবা একটি চুমু দেই। আমি কিছুতেই আমার স্ত্রী আর বাচ্চা দু'টার কথা ভুলতে পারছি না। প্রায়-ই স্বপ্নে দেখি- বাচ্চা এবং বাচ্চার মাকে। স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তারপর সারারাত ব্যালকনিতে কাটিয়ে দেই। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ে।

এরপর থেকে আমি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি না।
বরং ঈশ্বরকে ঘৃনা করি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি ঈশ্বরকে ঘৃনা করেই যাবো। মূর্খ ঈশ্বর মানুষের সুখ কেড়ে নিয়ে কি শান্তি পায়? কি সুন্দর সুখের সংসার ছিল আমার। বেঁচে থাকলে এই দুই বছরে আমার বাচ্চা দু'টা অনেক বড় হয়ে যেত । তারা সারা ঘর ছোট ছোট পায়ে হেঁটে বেড়াত। আমাকে বাবা-বাবা বোলে ডাকতো। বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যেতাম। পড়াতে বসাতাম। বোকা ভূতের গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াতাম। গোছল করিয়ে দিতাম। ছুটির দিন গুলোতে আমরা সবাই মিলে বেড়াতে যেতাম। বাচ্চার মা বাচ্চাদের বকা দিলে- আমি বাচ্চার মাকে আচ্ছা করে বকে দিতাম। সুখে- আনন্দে দিন চলে যেত। আসলে কিছু কিছু মানুষের জীবনে সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:২৫
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কথা রাখেনি। না, রাখার ক্ষমতা নেই ?

লিখেছেন স্প্যানকড, ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ ভোর ৪:২৪

ছবি নেট ।

ন হন্যতে বইটি মৈত্রীয় দেবীর যা উনি লিখেছিলেন ফরাসি লেখক মির্চা এলিয়াদের লা নুই বেংগলীর জবাব স্বরুপ।মৈত্রীয় দেবীর দাবি তিনি মির্চার প্রেমে পড়েন নি তিনি প্রেমে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসলেই কি সরকার এবার পারবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ ভোর ৬:৫৫




সরকারী দলের কোন প্রার্থী হারতে চাইবে না। অত:পর যারা হারবে তাদের সবাই যদি বলে নির্বাচন সুষ্ঠ হয় নাই। যারা নির্বাচনে আসে নাই তারা তো বলবেই নির্বাচন সুষ্ঠ হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ সেই মহান এক এগার দিবস।

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৫

এক মাস এগার বছর আগে আমি এই মহান ব্লগে মহান আইডি "বাকপ্রবাস" নাম করনে লেখালেখির সূত্রপাত করি। প্রবাসে থাকি তায় নামটা দিয়েছিলাম বাকপ্রবাস। প্রথমে আমি সোনার বাংলা ব্লগে লিখতাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

পুরুষ আমি মাংস খুঁজি

লিখেছেন পাজী-পোলা, ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৩১

দীর্ঘ নিঃশ্বাসের হিমেল হাওয়ায় কেঁপে ওঠে হৃদয়
শিশিরের আদ্রে ভিজে যায় চোখ
ঝড়া পাতায় খসখসে দুঃখ।
একাকীত্বের সৃতির চাঁদরে নিজেকে ঢাকি, মনেপড়ে
মনেপড়ে উষ্ণতার জন্য তোমার বুক খুঁজছিলাম
তুমি বলেছিলে 'পুরুষ আমি মাংস খুঁজি।'
সেই থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি আছে শুধু বিএনপি নেতা-কর্মীদের মা-বোন আর স্ত্রীদের ধর্ষণ করা। এ যেন ৭১রে রাজাকারদের কার্বন কপি।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৩



এই মেয়েটার নাম নুরী। বাবা বিএনপি করে। বাবাকে বাড়ীতে ধরতে এসে না পেয়ে মা কে ধরে নিয়ে গেছে। মেয়েটার দাদী ওর কান্না থামাতে পারছে না। এটাই বাংলাদেশ।

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×