somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আফ্রিকান মেয়ে বারাকাহ’র গল্প

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সময় তখন ৫৭০ সাল।
সেই সময় পুরো আরবের গজব অবস্থা ছিলো। জ্ঞান, বিজ্ঞান, মনুষ্যত্ব ও মানবিকতাহীন একটি ভূখণ্ড। চারিদিকে শুধু মরুভূমি। আর গাছপালা না থাকাতে রোদের কি তাপ! বাজারে নারী কেনাবেচা চলতো। বেপারিরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারী কিনে আনতো। তাদের সাজিয়ে গুছিয়ে বিক্রি করতো। আরবের প্রধান ব্যবসাই ছিলো নারী বেচাকেনা। খুব জমজমাট ব্যবসা। আব্দুল্লাহ নামের একলোক বাজারে গিয়েছে। সে একটা মেয়ে কিনতে চায়। না সহবাস করার জন্য নয়। ঘরে তাঁর মমতাময়ী স্ত্রী আছে আমেনা। আমেনার দেখাশোনা ও ঘরের কাজ করানোর জন্য একটা মেয়ে দরকার। আমেনা প্রেগন্যান্ট। তাছাড়া আব্দুল্লাহ ব্যবসার কাজে সিরিয়া যাবেন অনেকদিনের জন্য। তাই ঘরে একটা দাসী রেখে যেতে চান। তাহলে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে।

আব্দুল্লাহ পুরো বাজার ঘুরলেন।
বেপারিরা অনেক দাম চায়। এত দাম দিয়ে দাসী কেনা তার পক্ষে সম্ভব নয়। হঠাত তিনি দেখলেন এক বেপারি একটা কালো মেয়ে নিয়ে এসেছে। বয়স অনেক কম। আব্দুল্লাহ বেপারিকে জিজ্ঞেস করলেন এই মেয়ে কোন অঞ্চলের? বেপারি বলল- আফ্রিকান আবিসিনিয়ার মেয়ে। নিয়ে নিন জনাব। কমদামে দিয়ে দিব। কালো মেয়েদের কোনো চাহিদা নেই বাজারে। আব্দুল্লাহর কালো মেয়েটাকে দেখে ভীষন মায়া হলো। সহজ সরল চোখ মুখ। রোগা। চোখে মুখে মেয়েটার অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। হোক কালো তাতে কি? ঘরের কাজ পারলেই হলো। আব্দুল্লাহ কিনে নিলো কালো মেয়েটিকে। তার স্ত্রী আমেনা তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। আমেনা কালো মেয়েটিকে দেখে ভীষন খুশি হলেন। আব্দুল্লাহ আর আমেনা মিলে মেয়েটির নাম দিলো- বারাকাহ।

মেয়েটি বলল- নামটা খুব সুন্দর হয়েছে। আমার পছন্দ হয়েছে।
দেখা গেলো- বারাকাহ খুব ভালো মেয়ে। ঘরের কাজে খুব এক্সপার্ট। কোনো কাজের কথা তাকে বলতে হয় না। নিজ থেকেই সমস্ত কাজ করে হাসিমুখে। আব্দুল্লাহ এবং আমেনা অনেক খুশি। যাইহোক, এদিকে আব্দুল্লাহর হাতে টাকা পয়সা নেই। ক'দিন পর তার স্ত্রী বাচ্চা হবে। অনেক টাকা পয়সার ব্যাপার। একদিন ভোরবেলা আব্দুল্লাহ ব্যবসার কারণে সিরিয়া রওনা দিলেন। আব্দুল্লাহ জানতেন না- সিরিয়া থেকে তিনি আর ফিরে আসতে পারবেন না। তাঁর স্ত্রী ও কাজের মেয়ে বারাকাহ'র সাথে আর কোনোদিন দেখা হবে না। এমনকি আব্দুল্লাহ তার সন্তানের মুখ দেখতে পাবেন না। সিরিয়া যাওয়ার পথে স্ট্রোক করে আব্দুল্লাহর মৃত্যু হয়। এদিকে আমেনা একটা খারাপ স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নটা তার স্বামী আব্দুল্লাহকে নিয়ে। আমেনা ঘুম থেকে উঠে অনেক কান্না করলেন।

আমেনার ব্যথা উঠেছে। সন্তান প্রসবের সময় হয়েছে।
জন্ম হলো এক মহামানবের। পরম মমতায় নবজাতককে প্রথম কোলে তুলে নেয় দাসী বারাকাহ। এত সুন্দর বাচ্চা সে আগে কখনও দেখেছি। কি সুন্দর গায়ের রঙ। চোখ দুটায় অনেক মায়া। বারাকাহ এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে নবজাতকের কপালে চুমু খেলো। আফ্রিকান ক্রিতদাসী যার নাম রাখা হয়েছে- বারাকাহ, সে বলল- এই শিশু অন্যদশ জনের মতো হবে না। সে সবার থেকে আলাদা। এই ছেলে চাঁদের চেয়েও সুন্দর। সে একদিন চাঁদকে স্পর্শ করবে। ১৩/১৪ বছরের একটা ভিনদেশী কালো মেয়ে নবজাতককে কোলে নিয়ে প্রার্থনা করলো- এই ছেলে যেন সবার থেকে আলাদা হয়। সে যেন মানুষকে মহান সত্যের পথ দেখায়। এদিকে বাচ্চা জন্মের পর আমেনা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। বারাকাহ এই শিশুকে খাওয়াচ্ছে, ঘুম পাড়াচ্ছে, গোছল করাচ্ছে, পটি পরিস্কার করছে।

আমেনা আর সুস্থ হলেন না। তিনি মারা গেলেন।
আমেনা মারা যাওয়ার আগে বলে গেলেন- বারাকাহ তুমি আমার ছেলেটাকে দেখো। যত্ন নিও। অবহেলা করো না। বারাকাহ সেবা যত্নের কোনো ত্রুটি করেনি। শিশুটা এতিম হয়ে গেলো। জন্মের আগে বাবাকে হারালেন। জন্মের কিছুদিন পর মাকে হারালেন। দাদা আবদুল মোত্তালিব শিশুকে কোলে তুলে নিলেন। নিজের কাছে এনে রাখলেন। সাথে দাসী বারাকাহ তো আছেই। মোহাম্মদের যখন পাঁচ বছর হলো। তখন তিনি বারাকাহকে বললেন, আপনি চলে যেতে পারেন। আপনি মুক্ত। বারাকাহ বলল- আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না। নো নেভার। আমৃত্যু আমি তোমার সাথে থাকবো। আমি তোমার মাকে কথা দিয়েছি। পাঁচ বছরের মোহাম্মদ বললেন, তাহলে থাকুন। আমিও চাই না আপনি চলে যান। আপনিই আমার মা।

একদিন আবদুল মোত্তালিব বারাকাহকে বলল-
তুমি খুব ভালো মেয়ে। তুমি বিয়ে করো। ঘর সংসার করতো। খরচ আমি দিবো। বারাকাহ বলল- মোহাম্মদকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না। প্লীজ আমাকে বিয়ের কথা বলবেন না। আল্লাহর দোহাই লাগে। এরপর আবদুল মোত্তালিবের বারাকাহকে আর বিয়ের কথা বলেন নাই। বারাকাহ মোহাম্মদকে আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করতে লাগলেন। মোহাম্মদ একদিন বড় হয়ে গেলেন। তনি খাদিজা নামের এক বয়স্ক ধনী মহিলাকে বিয়ে করে ফেললেন। মোহাম্মদ খাদিজাকে নিজের বাসায়া নিয়ে এলেন। বারাকাহ'র সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন- উনার নাম বারাকাহ। উনি আমার মা। উনিই আমাকে লালন পালন করে বড় করেছেন। মোহাম্মদ আদর করে বারাকাহ'কে 'উম্মি' বলে ডাকতেন সেই ছোটবেলা থেকেই। খাদিজা উম্মিকে খুব পছন্দ করলেন।

একদিন মোহাম্মদ উম্মিকে (বারাকাহ) বললেন,
আমি আপনাকে একটা কথা বলব। সেই কথা আপনাকে রাখতে হবেই। উম্মি আমি আপনার জন্য একটা ছেলে দেখেছি। এবার আপনাকে বিয়ে করতেই হবে। অনেক করেছেন আপনি আমার জন্য। যাইহোক, ছেলেটার নাম জায়েদ। খুব ভালো ছেলে। উম্মি রাজী হলেন। খুব ধূমধাম করে উম্মির বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ের খরচ দিলেন নবীজির প্রথম স্ত্রী খাদিজা। বিয়ের এক বছর পর বারাকাহ জন্ম দিলেন এক শিশু। শিশুর নাম রাখা হলো- আইমান। কিন্তু দুর্ভাগ্য। আইমানের জন্মের তিন মাস পর উম্মির স্বামী জায়েদ মারা গেলেন স্ট্রোক করে। তখন নবীজি বললেন উম্মি আমি আপনাকে আবার বিয়ে দিবো। নবীজি তার সাহাবীদের ডেকে বলবেন- একটা বিধবা মেয়ে আছে। এতিম। তার এক ছেলে আছে। দরিদ্র মহিলা। কিন্তু এই মহিলা নিশ্চিত জান্নাতী। কে তাকে বিয়ে করতে চাও?

হারিশা নামের এক সাহাবী নবীজির কথা শুনে,
জান্নাতী নারী বারাকাহকে বিয়ে করে নিলেন। বিয়ের দিন নবীজি হারিশাকে বুকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করলেন। আর বললেন, হারিশা জানো তুমি কাকে বিয়ে করেছো? জানো? তুমি আমার মাকে বিয়ে করেছো। এই মা আমাকে আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন। নিজে না খেয়ে আমাকে খাইয়েছেন। তার ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না। একসময় নবীজি ইসলাম ধর্ম প্রচারের কাজে ভীষন ব্যস্ত হয়ে গেলেন। কিন্তু মাঝে মাঝে দুধ মার সাথে দেখা হতো। আমাদের নবীজি দুধ মা হালিমাকে দেখলে নবীজি নিজের গায়ের চাঁদর খুলে বিছিয়ে দিতেন হালিমাকে বসার জন্য। আর উম্মিকে দেখলে নিজের গায়ের চাদর দিয়ে উম্মির কপালের ঘাম মুছে দিতেন। এবং বলতেন দুনিয়াতে আপনি অনেক কষ্ট করেছেন। জান্নাতে আপনার কোনো কষ্ট হবে না।

শেষ বয়সে নবীজি অনেক অসুখ বিসুখ বাধালেন।
কিছু খেতে পারেন না। জোর করে কিছু খেতে গেলে বমি হয়ে যায়। বিছানায় প্রসাব পায়খানা করেন। কোনো চিকিৎসাতেই নবীজি সুস্থ হচ্ছেন না। বিশ্ব মানব, শ্রেষ্ঠ মানব, যিনি জন্ম না নিলে এই দুনিয়া আল্লাহপাক সৃষ্টি করতেন না- তিনি প্রায় মৃত্যু শয্যায়। তার সময় ফুরিয়ে এসেছে। মৃত্যুর আগে নবীজি অনেক কথাই বলে গেলেন তার সাহাবীদের। সাহাবীরা সমানে বিলাপ করে কান্না করতে থাকলো। নবীজি বললেন- আমার চলে যাবার সময় হয়ে এসেছে। তোমরা আমার মাকে দেখো রেখো। তোমরা উম্মির যত্ন নিবে, তিনি আমার মায়ের মত। তিনিই একমাত্র নারী, যিনি আমাকে জন্ম থেকে শেষ পর্যন্ত দেখেছেন। আমার পরিবারের একমাত্র সদস্য, যিনি সারাজীবন দুঃখে সুখে আমার পাশে ছিলেন। তাঁর তুলনা হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:৫১
১৩টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তারেক ৩০০০ কোটী টাকার লোভেই দেশে ফিরেছে

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০



তারেক এসেছে, বলেছে, I have a plan; তারেকের প্ল্যানটা কি? এই মহুর্তে তার প্ল্যান হতে পারে, নমিনেশন বাণিজ্য করে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি টাকা আয়। ৩০০ সীটে গড়ে ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাদ্রাসা শিক্ষা, বৈশ্বিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


লেখাটির শুরুতে একটি ভূমিকা দেওয়া যাক। সর্বশেষ দেশে গিয়ে কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। উত্তরবঙ্গে, নিতান্ত অনুন্নত আমাদের সেই গ্রামে এতগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। আগে গ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×