
১। জগতে অনেক ঘটনা ঘটে, যা কেউ বিশ্বাস করবে না।
সেরকম একটা ঘটনা বলি- আমার স্কুল ফ্রেন্ড লতিফ মালোশিয়াতে ছিলো। মাঝে মাঝে আমার সাথে মোবাইলে কথা হয়। একদিন বৃষ্টির দিনে আমি নিউ মার্কেট গিয়েছি। বন্ধু লতিফের সাথে দেখা। আমি তো ভীষন অবাক! বললাম, তুই না মালোশিয়াতে? ঢাকায় ফিরলি কবে? লতিফ কিছু বলল না, সামান্য হাসলো। সেদিন লতিফের সাথে অনেক গল্প করলাম। আমরা দুজনে চা খেলাম। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম। সাথে সাথে আমার মোবাইলে ফোন এলো। ফোন করেছে লতিফের বড় ভাই। আমাকে বলল, লতিফ গতকাল রাতে স্ট্রোক করেছে। এবং মারা গেছে। আগামী সপ্তাহে তার লাশ মালোশিয়া থেকে দেশে আসবে। আমি ভীষন অবাক। তাহলে নিউ মার্কেটে লতিফের সাথে আমার দেখা হলো কি করে?
২। আমরা মনে করি, মৃত মানুষদের কবর দেওয়া হলে-
তাদের চ্যাপ্টার শেষ। আসলে মৃত মানুষেরা অদৃশ্য ভাবে আমাদের আশেপাশেই থাকেন। করোনাতে আমার বাবা মারা গেলো। গ্রামের বাড়িতে বাবাকে কবর দিলাম। দুঃখভারাক্রান্ত মন। গ্রাম থেকেই রাতেই ঢাকায় ফিরলাম। গোছল করলাম। বসার ঘরে গিয়ে দেখি আব্বা সোফায় বসে আছেন। অথচ আব্বাকে আমি নিজের হাতে কবরে শুইয়ে দিলাম। আব্বা এখন চুপ করে সোফার কোনায় বসে আছেন। হয়তো অনেকে বলবে, মানসিক চাপ থেকে এমনটা হয়েছে, মৃত আব্বাকে দেখতে পাচ্ছি। না আমার কোনো ভুল হচ্ছে না। আমি মদ খাই না। আমি জানি দুনিয়ার কেউ এটা কথা বিশ্বাস করবে না। এই ঘটনা অন্য কেউ বললে আমি নিজেও বিশ্বাস করতাম না। মাঝে মাঝে আমি আব্বার মোবাইলে ফোন দেই। ফোনে রিং হয়।
৩। গ্রামের বাড়ি গিয়েছি।
আমাদের পাশের গ্রামের নাম হচ্ছে পয়সা। পয়সা গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলা হচ্ছে। সেই খেলা আমি দেখতে গিয়েছি। হঠাত শুরু হলো বৃষ্টি। মাঠের মধ্যে তুমুল লড়াই হচ্ছে দুই দলের মধ্যে। বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজেই খেলা দেখছি। কোনো কারন ছাড়াই আমার মনে হলো এখন আমার বাড়ি ফেরা উচিত। কিন্তু খেলা শেষ হতে এখনও অনেক বাকী। আমার বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে না। আমি খেলা শেষ পর্যন্ত দেখলাম। আমি যে দলকে সাপোর্ট করেছি সেই দল শেষ পর্যন্ত জিতেনি। মন খারাপ করে বাড়ি ফিরছি। তখনও বৃষ্টি হচ্ছে। দেবযানী খালের কাছে আসতেই আমার মনে হলো ছোট মামা যেন বলল, তাড়াতাড়ি বাড়ি আয় রাজীব। অথচ আমার আশে পাশে কেউ নেই। বাড়ি ফিরে দেখি মামা মারা গেছেন। আমি অনুভব করি- মাঝে মাঝে অলৌকিক ব্যাপার ঘটে বলেই জীবন আনন্দময়। ঢাকা শহরের ভিড়ের মধ্যে প্রায়ই আমি ছোট মামাকে দেখি। এক পলক দেখি। তারপর মামা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
৪। তখন আমি ছোট।
ক্লাশ সিক্স বা সেভেনে পড়ি। একদম গুড বয় ছিলাম। এলাকার সবাই আমাকে ভালোবাসতো। অন্য ছেলেদের মতো রাস্তায় খেলাধূলা করতাম না। প্রতিদিন স্কুলে যেতাম। স্কুলের স্যার ম্যাডাম আমাকে আদর করতেন। কারন লেখাপড়ায় আমি ভাল ছিলাম। কেউ বিপদে পড়লে তাদের সাহায্য করতাম। যেমন কাউকে রাস্তা পার করে দিতাম। চাপকল টিপে বালতি ভরে দিতাম। কাউকে ফার্মেসী থেকে ওষুধ এনে দিতাম। বাজার থেকে সদাই এনে দিতাম। ভোরবেলা মাঠে গিয়ে ব্যয়াম করতাম। কেউ রাস্তায় ময়লা ফেললে, সেই ময়লা আমি তুলে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসতাম।
একদিন আমাদের এলাকায় আজমী শরীফ থেকে একলোক আসেন। দরবেশ টাইপ। উনি আমাকে দোয়া করে দিলেন। বললেন, তোমার জীবনযাপন সুন্দর হবে এবং আমি কখনও বিপদ হবে না তোমার। বিপদ এলেও বিপদ কেটে যাবে। ম্যাজিয়ানের মতোণ শূন্য থেকে একটা চকলেট এনে আমাকে খেতে দিলেন। যাওয়ার আগে দরবেশ বললেন, আমি যেন কখনও দুই চাকার যানে না উঠি। সত্যি সত্যি আমার বিপদ এলে অল্প সময়ের মধ্যে বিপদ কেটে যায়। দরবেশের কথা ভুলে গিয়ে যে ক'বার বাইকে উঠেছি, একসিডেন্ট করেছি।
৫। সুকন্যা নামে একটা মেয়ের সাথে আমার খুব ভাব ছিলো।
সুকন্যার বাবা সরকারী চাকরি করতেন। এজন্য সুকন্যারা এক এলাকায় বেশি দিন থাকতে পারতো না। এই রাজশাহী, নওগা, সিলেট, বরিশাল। পুরো বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াতে হতো। কিন্তু আমার সাথে সুকন্যার যোগাযোগ ছিলো। তখন মোবাইল ফোন ছিলো না। আমরা চিঠিতে নিয়মিত কথা বলতাম। সুকন্যা ঢাকা এলে আমাদের দেখা হতো। এই সুকন্যা একদিন লঞ্চ ডুবে মারা যায়। তার লাশ পাওয়া যায়নি। হয়তো সুকন্যা বেচে থাকলে তাকেই আমি বিয়ে করতাম। এই সুকন্যা মরে গিয়েও যেন মরে যায়নি। আমি তাকে অনুভব করি। চোখ বন্ধ করলেই তাকে দেখতে পাই। যখন কোনো সমস্যায় পড়ি, সে এসে হাজির হয়। আমাকে সাহস দেয়, ভরসা দেয়। এমনকি স্বপ্নে এসে সুকন্যা আমাকে নানান রকম বুদ্ধি পরামর্শ দেয়। তাতে আমার উপকার হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




