
প্রিয় কন্যা আমার-
আজ ৭ ডিসেম্বর। বুধবার। এই ডিসেম্বরের শেষ দিনটি অর্থ্যাত ৩১ ডিসেম্বর তোমার জন্মদিন। তুমি তিন বছর শেষ করে চারে পা দিবে। দেখো সময় কত দ্রুত সময় চলে যায়। ফারাজা তুমি শুনলে অবাক হবে, ৭ তারিখে তোমাকে নিয়ে লিখতে বসেছিলাম। দুই লাইন লিখে আর লিখি নাই। আজ আবার লিখতে বসেছি। আজ ২৯ তারিখ। অথচ তোমাকে নিয়ে লেখার অনেক কথা জমা হয়ে আছে। এখন তুমি সারাদিন প্রচুর কথা বলো। মোবাইলে ইউটিউব ছেড়ে 'ডায়না এন্ড রোমা' দেখো। রাতে আমি বাসায় ফিরলে ছুটে আমার কাছে আসো। আনন্দে নাচো। আর বলো- বাবা এসেছে, বাবা এসেছে। ইদানিং তুমি রাত দুটার আগে ঘুমাও না। অথচ আমি আর তোমার মা ঘুমিয়ে পড়ি। অবশ্য তুমি বিকেলে অনেকক্ষন ঘুমাও। এর জন্য হয়তো রাত জাগো।
৩১ ডিসেম্বর তোমার জন্ম হলো।
সেদিনকার কথা আমার সব স্পষ্ট মনে আছে। সকালবেলা তোমার জন্ম হলো। তখন চারিদিকে করোনা। তোমার জন্ম উপলক্ষ্যে আমাকে আর আলাদা করে আতশবাজি ফুটাতে হয়নি। বছর শেষ উপলক্ষ্যে পুরো এলাকার মানুষ আতশবাজি ফুটিয়েছে। যাইহোক, এবার তোমার জন্মদিন ঘটা করে করা হবে না। তবে সারাদিন আমি আর তোমার মা, আমরা তিনজন একসাথে থাকবো। আমরা সারাদিন ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াবো। রেস্টুরেন্টে খাবো। তোমার বড় বোন পরী (রোজা) হয়তো আমাদের সাথে যাবে না। তার পরীক্ষা। তোমার জন্য অনলাইন থেকে একটা জামা অর্ডার করা হয়েছে। ইদানিং তোমার পছন্দ পার্পেল কালার। সব কিছুই তুমি পার্পেল কালার চাও। এজন্য তোমার বড় চাচা অস্টেলিয়া থেকে আসার সময় তোমার জন্য পার্পেল কালারের কেডস নিয়ে এসেছে।
আমার বাবা মারা যাবার পর আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।
কিন্তু তার কয়েকদিন পর তোমার জন্ম হলো। তুমি আমাকে বাবা হারানোর কষ্ট ভুলিয়ে দিলে। তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। তুমি শুনলে অবাক হবে, এখন দুনিয়াতে তুমিই আমার সবচেয়ে আপন। সারাদিন আমি বাইরে থাকলে তোমার মায়ের একটা খোজ নিই না। কিন্তু আমি তোমার খোজ খবর নিই। তুমি খেলে কিনা, ঘুমালে কিনা, গোছল করলে কিনা? ভিডিও কলে বেশ কয়েকবার কথা বলি তোমার সঙ্গে। তোমার মা প্রায়ই বলে, সারাদিন মেয়ে মেয়ে করো, আমার তো কোনো খোজ খবর নেও না! তখন আমি বলি, আমি আমার মেয়ের খোজ নিবো, তোমার বাবা তোমার খোজ খবর নেবে। ব্যস শেষ। বোধহয় নিজ সন্তানের চেয়ে দুনিয়াতে আর কিছু প্রিয় হয় না। এখন শীত কাল চলছে। অথচ রাতে তুমি কম্বল গায়ে দাও না। ঘুমের মধ্যেও কম্বল গা থেকে শরীর দাও।
ফারাজা তাবাসসুম খান-
আজ ৬ জানুয়ারি। তোমাকে নিয়ে লিখতে বসেছি। আজ হরতাল। আগামীকালও হরতাল। বিএনপি দুই দিন হরতাল দিয়েছে। গতকাল রাতে কে বা কারা একটি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়। চারজন আগুনে পুড়ে মারা যায়। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমাদের দেশে এরকম ঘটনা অনেক ঘটে। বাসে আগুন দিয়েও মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়। রাজনীতি এবং ধর্ম এই দুই কারনে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা যুগ যুগ ধরেই হয়ে আসছে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে এরকম ঘটনা অনেক ঘটে। আগামীকাল ভোট। আমি ভোট দিতে যাবো না। অনেকেই যাবে না। একদিন তুমি বড় হবে। তখন তুমিও ভোটার হবে। আমি ভোট দিতে যাবো না কারণ আমাদের আসনে যিনি দাঁড়িয়েছেন। তাকে আমার যোগ্য ও দক্ষ লোক বলে মনে হয় না। আমার ধারনা এবার ৬৫% লোক ভোট দিতে যাবে না।
প্রিয় কন্যা আমার-
তোমার তৃতীয় জন্মদিন শেষ। এখন তুমি বড় হয়ে গেছো। সব কথা বলতে পারো। এখন তোমাকে ডায়পার পরাতে হয় না। আজ এবং আগামীকাল আমি সারাদিন তোমার সাথে আছি। আমার ছুটি। নির্বাচন এবং হরতালের কারণে বাস, গাড়ি, সিএনজি সব বন্ধ। তাই বাইরে যেতে পারবো না। ফারাজা আমাদের বাসায় একজন নতুন সদস্যের আগমন হয়েছে। তোমার ছোট চাচার ছেলে কিয়ান। চলতি মাসে আমাদের পরিবারে আরেকজন নতুন সদস্য আসবে। আফসোস আমার বাবা ওদের দেখে যেতে পারলো না। তোমাকেও দেখে যেতে পারেনি। দেখলে অনেক খুশি হতো। আমার বাবার কমপক্ষে আরো দশ বছর বেঁচে থাকা দরকার ছিলো। করোনায় বাবার মৃত্যু হলো। বাবা স্বাস্থ্যবান এবং স্মার্ট মানুষ ছিলো।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




