
১৭ বছর পর শফিক আমার বাসায় এসে উপস্থিত!
শফিক আমার বন্ধু। গত ১৭ বছর শফিকের সাথে একবারও যোগাযোগ বা দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। শফিকের সাথে আমি একই স্কুলে লেখাপড়া করেছি। কোনো পুরোনো বন্ধুর সাথে আমার যোগাযোগ নেই। আমি ঘরকুনো স্বভাবের। কারো সাথেই নিজ থেকে যোগাযোগ বা সম্পর্ক রাখি না। আমি মনে করি, যারা আমাকে ভালোবাসবে তারা ঠিকই আমার সাথে যোগাযোগ রাখবে। বাসায় আসবে, ফোন করবে। আর এখন তো ফেসবুক আছেই। যাইহোক, আজ শফিককে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছি! কিন্তু গাধা এত বছর কোথায় ছিলো? আর এতদিন গাধা কেন দেখা করতে এলো না! শফিক অনেক টাকা ইনকাম করে কিন্তু তার বুদ্ধির ঘাটতি আছে।
আজ সকাল সাতটায় আমার বাসা থেকে বের হওয়ার কথা।
সুরভি সকাল সাতটায় কন্যাকে নিয়ে স্কুলে গেছে। যাওয়ার আগে আমাকে ঘুম থেকে ডেকেছে। বলেছে, নাস্তা খেয়ে যেও। কন্যা একটা চুমু দিলো। আর বলল, বাবা আমি স্কুলে গেলাম। তুমি আসার সময় আমার জন্য আপেল নিয়ে এসো। আমার উচিৎ ছিলো, তখনই বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে যাওয়া। কিন্তু আমি আর দশ মিনিট ঘুমাবা বলে, বিছানা ছাড়লাম না। সেই ঘুম থেকে উঠলাম, সকাল সাড়ে দশ টায়। হায় কপাল! তাড়াহুড়া আমার ভালো লাগে না। দেরী হইছে হোক। আমি আস্তে ধীরে ব্রাশ করলাম, গোছল করলাম। এবং বরাবরের মতো নাস্তা না করে সিড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম। নিচে নেমেই দেখি, শফিক! আমাদের শফিক।
শফিক ছাত্র হিসেবে ভালো ছিলো না।
কিন্তু এখন সে প্রতিমাসে চার লাখ টাকা ইনকাম করে। শফিক থাকে কুয়েত। আগে কোম্পানির বাস চালাতো। এখন সে নিজের কার্গো বাস চালায়। যাইহোক, শফিককে আমার মনে আছে কারণ, শফিক স্কুলে গজল গাইতো। শফিকের গজল আমরা কেউ পছন্দ করতাম না। কিন্তু আমাদের লতিফ স্যার শফিকের গজলের ভক্ত ছিলেন। স্যারের মাথা ব্যথা করলেই স্যার শফিককে ডেকে বলতেন, গজল গাও। শফিক স্যারের পাশে দাড়িয়ে দুই হাত নামাজের সময় যেভাবে পেটের কাছে রাখে, ঠিক সেভাবে রেখে, একের পর এক গজল গেয়ে যেতো। স্যার চোখ বন্ধ করে শফিকের গজল উপভোগ করতো।
শফিকের সাথে আমার শেষ দেখা হয়, তার বিয়েতে।
একদিন হঠাৎ শফিক আমার বাসায় এসে উপস্থিত। এসেই বলল, দোস্ত রেডি হয়ে নাও। আগামীকাল আমার বিয়ে। আজ সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ। শফিকের সাথে গেলাম তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। গৌরীপুর। রাতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হলো। পরের দিন বাসে করে গেলাম কনের বাড়ি। সেখানে গিয়ে বিরাট বিপদে পড়লাম। এক মেয়ে আমার জন্য পাগল হয়ে গেলো। মেয়েটা আমার জন্য যথেষ্ট মায়া দেখালো, ভালোবাসা দেখালো। এমনকি মেয়েটা একদিন আমার বাসায় চলে এলো। বাসার ঠিকানা কোথাও পেলো, কে জানে! মেয়েটা আমাকে বিয়ে করতে চায়। সে বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তাদের অনেক জমি আছে। ইত্যাদি অনেক কথা।
গতকাল শফিকের কুয়েত যাওয়ার কথা।
সে এয়ারপোর্ট পৌছে দেখে তার প্লেন চলে গেছে। সে মন খারাপ করে সারারাত এয়ারপোর্টে বসে ছিলো। সেখান থেকে সকালবেলা সরাসরি আমার বাসায় চলে আসে। বাসায় কেউ নেই। আমি নিজেই দু কাপ চা বানালাম। শফিকের সাথে টানা এক ঘন্টা গল্প করলাম। শফিক বিদায় নিলো। আমি আমার কাজে গেলাম। একটু আগে শফিক প্লেনে উঠার আগে ফোন করলো। ভিডিও কল দিলো। রাস্তার জ্যামের জন্য এবার সে আর প্লেন মিস করতে চায় না। তাই সে তিন ঘন্টা আগেই এয়ারপোর্টে পৌছে গেছে। শফিকের পরিবার কঠিন ধার্মিক। তার দুই ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলেকে শফিক মাদ্রাসায় দিয়েছে। শফিকের ছেলে মাদ্রাসায় থাকতে চায় না। কিন্তু শফিকের স্বপ্ন তার ছেলে হাফেজ হবে। তার নিজের কোরানে হাফেজ হওয়ার ইচ্ছে ছিলো। সে পারেনি। বাবা মা যা হতে পারেনি, সময় পেরিয়ে গেছে, তাই বাবা চায় তার ছেলে মেয়ে যেন পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



