শাহেদ জামালের ডায়েরী থেকেঃ
আমি নিজেই একজন সুখী মানুষ।
আমার কোনো চিন্তা ভাবনা নেই। আপন মনে আছি। আনন্দে আছি। যা মন চায় তাই করছি। ঢাকা শহরের মধ্যে শুধুমাত্র রমনা পার্কে গেলে অনেক গাছ দেখা যায়। গাছপালা আমার ভালো লাগে। আজ সারা বিকাল রমনা পার্কে বসে কাটিয়ে দিলাম। গতকাল বিকেলটা কাটালাম কমলাপুর রেলস্টেশনে। চারপাশে কত কি দেখার! এর আগের দিন বিকেলটা কাটিয়ে দিলাম এয়ারপোর্টে। কত মানুষ যাচ্ছে, কত মানুষ আসছে। আমি সবাইকে মন দিয়ে দেখি। তাদের বুঝতে চেস্টা করি। এটা আমার এক ধরনের খেলা। ঝামেলা বিহীন খেলা।
আমি একা মানুষ। দুনিয়াতে আমার কেউ নেই।
স্ত্রী পুত্র কন্যা, ভাই বোন, বাবা মা কেউ নেই আমার। পুরান ঢাকার এক মেসে থাকি। চাকরি বাকরি নেই। সারাদিন টো টো করে ঘুরি। মা মারা গেলো চোখের সামনে। কিছুই করতে পারি নাই। বাবা মারা গেলো করোনায়। এরপর আমার ভাইয়েরা আমাকে বাসা থেকে বের করে দিলো। ভাইবোনদের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই আজ পাচ বছর ধরে। আত্মীয় স্বজনদের সাথেও যোগাযোগ নেই। রাস্তায় কারো সাথে দেখা হলে, না দেখার ভান করে। এখন আমি নিজেকে এতিম মনে করি। আত্মহত্যা তো আর করতে পারি না। দেখি, নিয়তি শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যায়! আর কত খেলা খেলে।
কলকাতাবাজার এলাকায় একটা ছোট হোটেল আছে।
সেই হোটেলের ম্যানেজার মঞ্জু ভাই। মঞ্জু ভাই আমাকে খুব স্নেহ করেন। তার কাছে গেলে তিনি আমাকে জোর করে খাইয়ে দেন। ফেরার সময় জোর করে পকেটে দুইশ টাকা গুজে দেন। আমার খুব লজ্জা করে। দুনিয়াতে আমার কোনো কিছু নিয়ে বিলাসিতা নেই। আমার কোনো চাহিদা নেই। শুধু মাত্র চা এবং সিগারেট ছাড়া। চা এবং সিগারেটের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। সারাদিনে কমপক্ষে আমাকে দশ কাপ চা আর বিশটা সিগারেট খেতে হয়। জানি সিগারেট খাওয়া ভালো নয়।
কলেজে পড়ার সময় ফাতিমা নামে এক মেয়েকে খুব ভালো লেগেছিলো।
মেরুর রঙের গাড়িতে করে ফাতিমা চলাচল করতো। আমি প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে ফাতিমাকে দেখতাম। আমি মনে মনে চাইতাম ফাতিমা আমাকে একটা প্রেমপত্র লিখুক। আমি রাতে না ঘুমিয়ে ফাতিমাকে ভাবতাম। কি যে ভালো লাগতো! ফাতিমাকে নিয়ে কত যে স্বপ্ন দেখেছি! সেই ফাতিমা মালোশিয়া ফেরত রফিক ভাইকে বিয়ে করে ফেলল। কি কষ্ট! কি কষ্ট! স্বর্ন যত পুড়ে তত খাটি হয়। ঠিক তেমনি মানুষ যত কষ্ট পায় তত খাটি হয়। আমি দুখ কষ্ট অপমান অবহেলা পেতে পেতে একজন খাটি মানুষ হয়ে গেছি।
রাস্তায় হাটতে হাটতে যখন ক্লান্ত হয়ে যাই,
তখন কোনো মসজিদে ঢুকে যাই। ঢাকা শহরের মসজিদ গুলো সুন্দর। এসি আছে। নামাজের সময় এসি ছাড়ে। দুপুরবেলা আমি মসজিদে ঘুমাই। সুন্দর ঘুম হয়। দারুণ সব স্বপ্ন দেখি। মাঝে মাঝে কোনো উপলক্ষে ধনীরা মসজিদে খাবার দেয়। মিলাদ শেষ হওয়া মাত্র কেউ একজন হাতে একটা বাক্স ধরিয়ে দেয়। মিষ্টি ছানা সিংগাড়ার চেয়ে আমার পছন্দ তেহারি। গরুর মাংসের তেহারি। গরম গরম তেহারি খেতে দারুণ লাগে। আমার মা দারুণ তেহারী রান্না করতো। অনেক দিন হয়ে গেলো, তেহারী খাই না!
হ্যা আমি সুখী মানুষ।
আমার শরীরে কোনো রোগ নেই। গত দশ বছরে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি। আমার কোনো চাহিদা নেই। আমার কোনো চিন্তা নেই। কেউ আমার কাছ থেকে টাকা পায় না। ব্যাংকে আমার কোনো লোন নেই। মুদি দোকানে বাকি নেই। আমার নামে থানায় কোনো মামলা নেই। আমার কোনো শত্রু নেই। মেসের সুমন ভাই তার ল্যাপটপ আমাকে ব্যবহার করতে দেয়। আমি কোরা ব্যবহার করি, মুভি দেখি। গান শুনি। বেশ কেটে যাচ্ছে দিন-রাত। আগামীকাল টংগী যাবো। সেখানে সপ্তাহে একদিন কবুতরের হাট বসে।