somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মৃতরা মাঝে মাঝে ফিরে আসে!

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই কিছুদিন আগের কথা।
রাত তখন আড়াইটা। বই পড়ছিলাম। হঠাৎ সিগারেট খেতে ইচ্ছা করলো। আমার স্ত্রী আর কন্যা গভীর ঘুমে। আমি আগে বিছানায় শুয়ে আরাম করে সিগারেট খেতাম। বাচ্চা হওয়ার পর ঘরে সিগারেট খাই না। ছাদে চলে যাই। আমি ছয় তলায় থাকি। কাজেই ছাদে যাওয়া কষ্টকর নয়। যাইহোক, মেঘ মুক্ত স্বচ্ছ আকাশ। মুগ্ধ হয়ে আকাশ দেখছি আর সিগারেট টানছি। হঠাৎ ছাদের কোনায় খেয়াল করে দেখি, কেউ একজন চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছে! মনে মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়ে গেলো। এত রাতে ছাদে কে? ছাদের দরজা সব সময় লাগানো থাকে। চাবি শুধু আমার কাছে আছে। আমাদের বাড়িতে কোনো ভাড়াটিয়া নেই। তাহলে এই লোক কে? ছাদে কি করে এলো? আমার মধ্যে কোনো কুসংস্কার নেই। রসিকে আমি সাপ মনে করি না।

আমি এখন কি করবো?
ভয়ে চিৎকার দিবো? অজ্ঞান হয়ে যাবো? দৌড়ে ঘরে চলে যাবো? নাকি লোকটার কাছে যাবো, চাদর সরিয়ে দেখিব কে? আমি সাহসী মানুষ নই। সব কিছুতেই আমার ভয়। তাই বলে আমি রসিকে সাপ মনে করি না। লজিক। আমার আছে লজিক। লজিকের বাইরে কিচ্ছু নেই দুনিয়াতে। আইনস্টাইনের সুত্রে কোনো ভুল নেই। হাতের সিগারেট এখনো শেষ হয়নি অথচ কত কি ভেবে যাচ্ছি। আমার মনে হচ্ছে চাদরটা সরালেই দেখতে পাবো একটা মেয়ের মুখ। মেয়েটার নাম নীলা। নীলার সাথে আমার হয়তো প্রেম ছিলো। কত বিকেলবেলা আমরা হাত ধরাধরি করে ফুলার রোডে হেটেছি। হাটতে হাটতে আমরা শহীদ মিনার গিয়েছি। নীলা আমার পাশে থাকলেই আমার নিজেকে মিশরের সম্রাট বলে মনে হয়। তখন আমি বেকার। দেখা হলেই নীলা আমাকে এক প্যাকেট বেনসন কিনে দিতো। বলতো তুমি সস্তার সিগারেট খাও এটা আমার ভালো লাগে না।

আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, দৌড়ে আমি ঘরে চলে যাবো না।
ছাদের কোনায় কে, সেটা আমি দেখিব। দেখি না কি হয়। ভয়ের কি আছে! আমি কাছে গেলাম। বললাম কে আপনি? ছাদে কি করে এলেন? মানুষটা আমার কোনো কথার জবাব দিলো না। শুধু এপাশ থেকে ওপাশ ফিরলো। আমি হাত বাড়িয়ে চাদরটা সরিয়ে দিলাম। হায় আল্লাহ! বাবা! আমার বাবা! আব্বা এখানে কি করে? এটা কি করে সম্ভব? আব্বা তিন বছর আগে করোনাতে মারা গেছে। আব্বার লাশ যখন কবরে নামায় আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। আব্বা আমার দিকে তাকালো। কিছু বলল না। যেন আব্বা খুব ভয় পেয়েছে। আমি আব্বার পাশে বসলাম। নাকি একজন মৃত মানুষের পাশে বসলাম! নিশ্চয়ই কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। মৃতরা ফিরে আসে না। সম্ভবত আমি ঘুমিয়ে আছি। স্বপ্ন দেখছি। নিজেকে আমি নানান রকম বুঝ দিতে থাকলাম। মিথ্যা বুঝ। আমি মদ গাজা খাই না। তাই বিভ্রম আমার হওয়ার কথা না।

এরকম একটা ঘটনা আমার জীবনে আরেকবার ঘটেছিলো।
আমার বন্ধু জাহাঙ্গীর সৌদি থাকে। স্কুল কলেজে আমরা একসাথে লেখাপড়া করেছি। একই এলাকায় থাকতাম আমরা। জাহাঙ্গীর এক মেয়েকে ভালোবাসতো। সেই মেয়ে জাহাঙ্গীরকে পাত্তা দিতো না। একদিন জাহাঙ্গীর আমাকে নিয়ে নোয়াখালী যায়। মেয়ের বাড়ি মাইজদী। সেখানে গিয়ে বিরাট এক বিপদে পড়ি। যাইহোক, সেই গল্প অন্যকোনো সময় বলব। সৌদিতে বন্ধু জাহাঙ্গীর স্ট্রোক করে মারা যায়। ইদের দিন সকালে জাহাঙ্গীরের বড় ভাই আমাকে ফোন করে জানান। বন্ধুর মৃত্যুতে আমি দারুণ ব্যথিত হই। মৃত্যুর তিন বছর পরে একদিন জাহাঙ্গীর আমার বাসায় আসে। একদিন ভর সন্ধ্যায় বাসায় আমি একা। টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখছি। কলিং বেল বাজে। আমি দরজা খুলে দেখি জাহাঙ্গীর। বন্ধুকে দেখে আমি খুশি। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে জাহাঙ্গীর সৌদিতে মারা গেছে।

জাহাঙ্গীর কোনো কথা বলে না।
আমার পাশে চুপ করে বসে আছে। টিভি দেখছে। বললাম চা খাবি? জাহাঙ্গীর মাথা নাড়লো। হ্যা চা খাবে। বললাম দোস্ত প্লীজ তুই চা বানা। আমি খেলা দেখি। মাত্র পাচ ওভার বাকি। জাহাঙ্গীর রান্না ঘরে গেলো। টুংটাং শব্দ পাচ্ছি। আমি টিভিতে খেলা দেখছি। তখনও আমার মনে পড়েনি যে জাহাঙ্গীর বেচে নেই। দুটা ঘটনা বাস্তব হওয়ার কোনো চান্স নেই। এরকম হতে পারে না। মৃতরা ফিরে আসে না। নিশ্চয়ই এটা আমার অবচেতন মনের কারসাজি। প্রথম ঘটনা ছাদে এত রাতে চাদর গায়ে দিয়ে কেউ বসে থাকবে না। তাও আবার আমার বাবা। এটা আমার কল্পনা। কোথাও একটা ভুল করেছি আমি। দ্বিতীয় ঘটনা বন্ধু জাহাঙ্গীর। সেদিন বাসায় আমি একা ছিলাম। একা একা খেলা দেখে আনন্দ নেই। তাই আমার অবচেতন মন জাহাঙ্গীরকে নিয়ে আসে। আমি ক্লান্ত ছিলাম, ক্ষুধার্ত ছিলাম এবং অবশ্যই বিষন্ন ছিলাম। তাই বন্ধু জাহাঙ্গীরকে দেখে ছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩
১২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×