somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

প্রিয় কন্যা আমার- ৮১

০৮ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রিয় কন্যা আমার-
আমার মন ভীষন খারাপ। আজ দু'দিন ধরে তুমি বাসায় নেই। তুমি কক্সবাজার গিয়েছো- তোমার বড় চাচার সাথে। সাথে আছে রোজা, মোহাম্মদ আর ভাবী। যখন তোমার বড় চাচা বলল- ফারাজা কক্সবাজার যাবো। প্লেনে করে। তুমিও আমাদের সাথে যাবে। তখন থেকে তুমি খুশিতে অস্থির। কক্সবাজার যাবে। তাও আবার প্লেনে করে। তুমি ব্যাগ গোছাতে শুরু করলে। তোমার বয়স মাত্র সাড়ে চার বছর। তুমি বাবা মাকে ছেড়ে কিভাবে থাকবে! তোমার মা তোমার জন্য সুইমিং সুট কিনলো। তুমি সুইমিংপুলে স্নান করবে। তুমি চলে যাবে, আমার ভীষন মন খারাপ। এদিকে আবহাওয়া ভালো না। যাইহোক, তুমি সত্যি সত্যি বাবা মাকে রেখে কক্সবাজার চলে গেলে। তোমার মা তোমাকে এয়ারপোর্ট দিয়ে এলো। আমি বাসায় ফিরে দেখি তুমি নাই। আমার খুবই খারাপ লাগছে। রাগ লাগছে। নানান রকম চিন্তায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।



তোমাকে ফোন দিলাম।
তখন তুমি কক্সবাজার এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যাচ্ছিলে। হোটেল থেকেই গাড়ি এসেছে। বড় হোটেল। খুব সুন্দর। সাজানো গোছানো। তিন বেলাই ব্যুফের ব্যবস্থা। তুমি তোমার ঘর দেখালে। আলমারি টিভি ফ্রিজ সব দেখালো। যাক, তুমি আনন্দে আছো। ভালো আছো। রাতে তোমার মা আমাকে জোর করে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো। রাতে তোমার মা রান্না করে নাই। আমি আর তোমার মা এক ঘন্টা ঘুরলাম রিকশায় করে। রাতে বিছানায় গিয়ে দেখি ঘুম আসে না। এই সাড়ে চার বছর তুমি আমার পাশে ছিলে। ঘুমের সময় বলতে- বাবা পা টিপে দাও। চুল টেনে দাও। এক গ্লাস পানি দাও। তোমার বড় বাবা কি রাতে তোমার পা টিপে দিবে? চুল টেনে দিবে। গল্প শোনাবে? যাইহোক, আজ শুক্রবার তুমি ঢাকা ফিরবে। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ৯ টা বেজে যাবে। তোমার অপেক্ষায় আছি।



ফারাজা তাবাসসুম খান-
কক্সবাজার যাওয়ার কারণে তোমার দু'দিন স্কুলে যাওয়া হলো না। স্কুল বন্ধ দেওয়া আমার পছন্দ না। তুমি ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করো। বিলাসিতা তোমার পছন্দ। দামী রেস্টুরেন্ট তোমার পছন্দ। এই অভ্যাস তুমি পেয়েছো তোমার মায়ের কাছ থেকে। যে শপিংমলে এসি নেই, সেখানে তুমি যেতে চাও না। কমপক্ষে তিন রকমের খাবার অর্ডার করতে হয়- তোমার জন্য। এদিকে বিলাসিতা আমার পছন্দ নয়। অপচয় তো আমি সহ্যই করতে পারি না। সেদিন স্কুল শেষ করে তুমি গেলে তোমার বান্ধবীর বাসায়। মেয়েটার নাম মনে হয়- আজিফা। তোমার সাথে স্কুলে পড়ে। সারাদিন আজিফাদের বাসায় থাকলে। তোমার মা গল্প করতে পছন্দ করে। মেয়েরা গল্প বেশি করে। বাসায় তুমি সারাদিন রোহার সাথে গল্প করতেই থাকো।
ফাজ্জা, বিলাসিতা করা আমার পছন্দ নয়। তোমাকে মনে রাখতে হবে, তুমি দরিদ্র দেশে জন্ম নিয়েছো। এই দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৪ বছর হয়ে গেছে। এখনও মানুষ রাস্তায় ঘুমায়। রাস্তায় বের হলেই অনেক ভিক্ষুক। চারিদিকে দরিদ্র মানুষের ছড়াছড়ি। চারিদিকে অসংখ্য বেকার। ঘুষ, চাঁদাবাজি, দূর্নীতি, ছিনতাই, ডাকাতি নিত্যদিনের ঘটনা। এই দেশের মানুষ গুলোও বেশি ভালো না। এরা দিনেদুপুরে মানুষ কুপিয়ে মেরে ফেলে। গতকালও দুজনকে কুপিয়ে মারা হয়েছে। এই দেশে কোনো নিয়ম কানুন নেই। উলটো পথ দিয়ে গাড়ি চালায়। ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করে রাখে। ফুটপাত দিয়ে বািক চালায়। দেশের মানুষ গুলো ভালো না বলেই, দেশে এত অরাজকতা।



প্রিয় কন্যা আমার-
তুমি দুদিন ধরে বাসায় নেই। আমার কিছুই ভালো লাগছে না। একবার আমার ইচ্ছা হলো- আমি আর সুরভি চলে আসি কক্সবাজার। প্লেনে করে আসতে সময় তো বেশি লাগবে না। আমাদের দেখে তুমি ভীষন অবাক হবে! সুরভি বলল, ''যাওয়ার দরকার নেই। এই কক্সবাজার যাওয়া হচ্ছে মেয়ের জন্য শিক্ষাসফর। বাবা মা ছাড়া থাকুক দুদিন। জন্মের পর তো বাবা মা ছাড়া থাকেনি''। ফাজ্জা, তুমি বুদ্ধিমতি মেয়ে। বোকাসোকা নও। তবে তুমি কিছুটা দুষ্ট। সেদিন আমি অফিস থেকে বাসায় ফিরেছি। তুমি তোমার মাকে বললে- মা, মা তোমার হাসবেন্ড এসেছে। চা বানিয়ে দাও। তোমার কথা শুনে আমি হাসি, তোমার মা হাসে। তুমিও হাসো। হাসতে হাসতে আমার সারাদিনের ক্লান্তি মুছে যায়। বড় ভালো লাগে। সেদিন তোমার জন্ম হলো! এতটুকু ছিলে তুমি! মাথা নড়াতে পারতে না। বসতে পারতে না। হাঁটতে পারতে না। খাইয়ে দিতে হতো। ভাবতেই অবাক লাগে। আর এখন তুমি সারাদিন কথা বলো!

ফারাজা তাবাসসুম খান-
হেসে খেলে সময় চলে যাচ্ছে আমাদের। এই মাত্র তোমার সাথে মোবাইলে কথা হলো। তুমি সমুদ্রে নামবে না। বড় ভাই, ভাবি সবাই তোমাকে সমুদ্রে নামতে বলেছে। তুমি নামলে না। তুমি বললে ঢেউ তোমাকে নিয়ে যাবে। তুমি শুরু করলে কান্না। সবাই এখন হোটেলে ফিরে গেছে। তুমি বললে, সুইমিং পুলে নামবে। সুইমিংপুল তোমার পছন্দ হয়েছে। ফাজ্জা, সমুদ্র ভয় পাওয়ার কি আছে? আমার পছন্দ সমুদ্র আর পাহাড়। তুমি কেন সমুদ্র ভয় পাবে ফাজ্জা? নাকি আমি সাথে নেই এজন্য তুমি সমুদ্রে নামোনি? আমি নিশ্চিত আমি সাথে থাকলে তুমি হাসিমুখে সমুদ্রে নামতে। বাবা সাথে নেই বলে তুমি সমুদ্রে নামোনি। ভয় পেয়েছো। তোমার জন্মের পরই আমার খুব শখ ছিলো- তোমাকে নিয়ে সমুদ্রে যাবো। বিশাল সমুদ্র দেখে তুমি কি করো! এটা দেখার আমার খুব শখ ছিলো। সমুদ্র মানুষকে মহৎ করে। সমুদ্র মানুষকে সঠিক পথে নেয়। সমুদ্র মানুষকে আশা জাগায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৩
১৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×