
আমার কন্যা ফারাজা।
তার বয়স এখনও পাঁচ হয়নি। সে দারুন বুদ্ধিমতি, মানবিক এবং বড় মনের অধিকারী। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পর আমি এক কাপ চা খাই। তারপর বই পড়ি অথবা টিভি দেখি। তখন ফারাজা এসে আমার মোবাইল নেয়। সে আমার মোবাইল লক খুলতে পারে। আমার মোবাইল সব সময় লক থাকে। ফারাজা লক খুলতে পারে। আমার পাসওয়ার্ড কিভাবে জানলো কে জানে! যাইহোক, ফারাজা মোবাইল নিয়ে ছবি তোলে। হাতের কাছে যা পায় সব কিছুর ছবি তোলে। দারুন আগ্রহ নিয়ে ছবি তোলে। শত শত ছবি তোলে। আমি কিছু বলি না। অবসর সময়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি মোবাইল ভরতি ছবি। সব ফারাজার তোলা। ছবির ফ্রেমিং, লাইট, এক্সপোজ, কম্পোজ কিছুই ঠিক নেই। অবশ্য ফারাজার এগুলো বুঝার কথাও না। আমি আগ্রহ নিয়ে কন্যার তোলা ছবি দেখি। এবং মুগ্ধ হই। আমার জায়গায় অন্য কোনো বাপ হলেও মুগ্ধ হতো। বাবা মা ছেলেমেয়েদের যা দেখে তা দেখেই মুগ্ধ হয়! আমার চেয়ে বেশি মুগ্ধ হয় সুরভি। খেতে বসে ফারাজা আমার প্লেটে ভাত তরকারি বেড়ে দেয়। সেটা দেখে সুরভি মুগ্ধ! কিন্তু আমি বিরক্ত হই। কারন ভাত, মাছ, ভাজি, ডাল, ভর্তা সব একসাথে আমি খেতে পারি না।

একসময় আমি ফোটোগ্রাফী করতাম। পত্রিকা অফিসে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। সারাদিন ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। ফারাজা সেসব জানে না। কমপক্ষে পাঁচ লাখ ছবি আমি তুলেছি। এখন পাঁচ শ' ছবিও আমার কাছে নেই। কোনো কিছু জমিয়ে রাখার অভ্যাস আমার নাই।

আমি সব সময় নাইকন ক্যামেরা ব্যবহার করেছি। ক্যানন আমার ভালো লাগে না। ঘরে আমার এখনও নাইকন ক্যামেরা আছে। গত সাত বছর ক্যামেরা ধরেও দেখি নাই। মনে হয় নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট না হলেও ছত্রাক জমেছে নিশ্চয়ই লেন্সে। আমি নতুন আরেকটা ক্যামেরা নিবো। তারপর নতুন করে ছবি তোলা শুরু করবো।

কন্যা বড় হলে তাকে আমি ছবি তোলা শিখাবো। কন্যাকে আমি তিনটা বিষয় শিখাবো। এক, কিভাবে ক্যামেরা ধরতে হয়। দুই, ফেমিং এবং লাইট। তিন, হচ্ছে- ছবিটা তোলার আগে, কেমন ছবি তুমি তুলতে চাও সেটা মনের চোখ দিয়ে আগে দেখে নাও। কেউ যদি মনে প্রানে চায়- আমি ভালো ছবি তুলবো। তাহবলেই সম্ভব ভালো ছবি তোলা।

ছোটবেলা থেকেই ক্যামেরা বিষয়টা আমার কাছে বড় অদ্ভুত লাগে। একসময় রিল ক্যামেরা ছিলো। ৩২ টা ছবি তোলা যেতো। প্রিন্ট করার আগে বুঝা যেতো না কেমন ছবি তুলেছি। তখন আমার বয়স ১১ বছর আব্বা একটা কোডাক কোম্পানির ক্যামেরা এনে দেয়। সেসময় আমি প্রচুর ছবি তুলেছি।

একসময় আমি প্রতি বছর ইদের দিন স্টুডিওতে গিয়ে ছবি তুলতাম। এখন তো ছবি তোলা ডালভাত হয়ে গেছে। সবার হাতে হাতে ক্যামেরা। নবীজির আমলে ক্যামেরা থাকলে ভালো হতো। নবীজির জন্মের বহু বছর আগে এরিস্টটলের জন্ম হয়েছে। এরিস্টলের ছবি আছে কিন্তু নবীজির ছবি নেই। কেন নেই? নবীজির ছবি থাকলে সমস্যা কি হতো?

ফারাজা আর একটু বড় হলেই তাকে নিয়ে বের হবো। বলব, তোমার যা ভালো লাগে, ছবি তোলো। বাঁকা হোক, ত্যাড়া হোক- কোনো সমস্যা নাই। তুমি শুধু ক্লিক করে যাও। ছবি গুলো কম্পিউটারে নামিয়ে তারপর ছবিতে কি কি সমস্যা আছে, সেটা খুঁজে বের করবো।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


