
প্রিয় কন্যা আমার-
জীবনে কয়েকটা বিষয়কে খুব গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। এক নম্বর হচ্ছে- শিক্ষা। একজন মানুষের জীবনে শিক্ষাটা সবচেয়ে বেশি জরুরী। হোক সে ধনী বা দরিদ্র। যত লেখাপড়া করবে, তত শিখবে। নিজেকে সমৃদ্ধ করার উপায় হচ্ছে- জ্ঞান অর্জন করা। জ্ঞানের চেয়ে সুন্দর দুনিয়াতে আর কিছু নেই। জ্ঞান আপনা-আপনি আসে না। জ্ঞান অর্জন করতে হয়। আসলে দুনিয়াতে সব কিছুই অর্জন করে নিতে হয়। প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। চুদুর বুদুর টাইপ পড়াশোনা করলে হবে না। ভালো সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। যেন চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে না ঘুরতে হয়। চাকরি'ই করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তুমি বিজনেস করতে পারো। উদ্যোক্তা হতে পারো। আমাদের সমাজে বহু অনার্স-মাস্টার্স পাশ করা ছেলেমেয়ে আছে। অথচ একপাতা দরখাস্ত লিখতে পারে না ইংরেজিতে। এজন্য লেখাপড়া নিয়ে ফাঁকিবাজি করা যাবে না। ফাজ্জা, আমি এই বয়সে এসে বুঝতে পারি পড়াশোনার চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কিছু নেই। জীবনে একটা লক্ষ্য ঠিক করে এগিয়ে যেতে হবে। কাউকে কখনও বলি নাই, আজ তোমাকে বলি, আমার জীবনে ইচ্ছা ছিলো আমি বাংলা সিনেমার নায়ক হবো। লাল শার্ট, জিন্স প্যান্ট, কেডস আর মাথার চুল গুলো উলটো করে আচড়াতাম।
প্রিয় কন্যা আমার-
পরিশ্রম। জীবনে পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রম করা ছাড়া জীবনে কিছু অর্জন করতে পারবে না। পরিশ্রম করতে ভয় পাবে না। চার জনের কাজ একা করবে। স্বর্ন যত পুড়ে, তত খাটি হয়। মানুষ যত পরিশ্রম করবে, তত সফলতা পাবে। কেউ এসে তোমার মাথায় সোনার মুকুট পড়িয়ে দেবে না। পরিশ্রম দ্বারা তোমাকে অর্জন করে নিতে হবে। জীবনে কারো উপর আশা ভরসা করার প্রয়োজন নেই। তুমি ভরসা রাখবে শুধু নিজের উপর। মনে রাখবে তোমার বিপদেআপদে কেউ তোমার পাশে এসে দাঁড়াবে না। হ্যা আমি আছি। কিন্তু আমি তো চিরদিন বেচে থাকবো না। এই পৃথিবীতে তোমাকে একা লড়াই করে দাপটের সাথে বেঁচে থাকতে হবে। ভালো কাজ করলেই মানুষ তোমাকে ভালোবাসবে। ফাজ্জা, আমি যেখানে কাজ করি, প্রচুর পরিশ্রম করি। যথাসময়ে উপস্থিত হই। সময় অপচয় করি না। তিনজনের কাজ আমি একা করি। এজন্য সবাই আমাকে ভালোবাসে। অর্থ্যাত কাজ দিয়ে আমি মানুষের মন জয় করে নিয়েছি। মানুষের মন জয় করার উপায় হচ্ছে কাজ। যার কাজ সুন্দর, তার সব সুন্দর। কর্ম ক্ষেত্রে অগোছালো, এলোমেলো থাকা যাবে না। এবং নিজেকে সব সময় ফিটফাট টিপটপ রাখবে। মানুষ সুন্দরকে সহজে গ্রহন করে।
ফারাজা তাবাসসুম খান-
জীবনে সৎ থাকা ভীষণ জরুরী। কেউ দেখুক বা কেউ না জানুক তুমি সৎ থাকবে। কর্ম, চিন্তায়, ভালোবাসা আর মানবিকতা সব কিছুতেই সৎ থাকবে। সততার দাম আছে। সমাজের মানুষ গুলো সৎ নয়। একজন অসৎ মানুষ পর্যন্ত সৎ মানুষকে সম্মান করে। তোমাকে একটা ঘটনা বলি, একবার আমি চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম। একলোক দূর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে। আমাকে প্রশ্ন করলো- আপনার যোগ্যতা কি? আমি গর্ব করে উত্তর দিয়েছলাম, আমি একজন সৎ মানুষ। এটাই আমার যোগ্যতা। আরেকটা কাজ আমি পারি, সেটা কোনো যোগ্যতার মধ্যে পড়ে কিনা আমি জানি না। আমি মাথা নিচে, পা উপরে দিয়ে পাঁচ মিনিট থাকতে পারি। আমি জানি, এই যোগ্যতায় চাকরি পাওয়া যায় না। চারিদিকে এত এত অসৎ মানুষ! কিন্তু যখন আমি কোনো সৎ ও পরিশ্রমী মানুষের দেখা পাই- তাদের আমি শ্রদ্ধা করি। যোগ্য ও দক্ষ লোকের কদর সব জায়গায় আছে। কর্মক্ষেত্রে যোগ্য, দক্ষ, পরিশ্রমী ও সৎ লোক এগিয়ে যায়। জীবন শুধু হাসাহাসি করে পার করে দেওয়ার জন্য নয়। কর্মের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিতে হয়। তুমি তোমার সমস্ত ভালোত্ব, সমস্ত সততা, সমস্ত মহত্ব দিয়ে এগিয়ে যাও। ফাজ্জা- আমার কথা তোমার শুনতে হবে না, মানতে হবে না। আমি শুধু তোমাকে ভালো পথ এবং মন্দ পথ দেখিয়ে দিতে চাই। এরপর তোমার ইচ্ছা তুমি কোনো পথে যেতে চাও।
প্রিয় কন্যা আমার-
জীবনে ইনকাম করা ভীষণ জরুরী। প্রতিটা মানুষকে সাবলম্বী হতে হয়। এই সমাজে যার টাকা নেই, তার কোনো মূল্য নেই। তাই টাকা ইনকাম করতে হবে এবং সৎ পথে। তুমি লেখাপড়া করলে, চাকরি পাবে। চাকরি করলে টাকা পাবে। তোমার টাকা। নিজের ইনকাম করা টাকা। প্রচুর টাকা ইনকাম করবে। মন ভরে খরচ করবে। আমাদের সমাজে বেশির ভাগ মেয়ে লেখাপড়া করে। কিন্তু চাকরি করে না। বিয়ে করে ঘরসংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তুমি এমনটা করো না। স্বামীর কাছে হাত পাতবে না। তুমি নিজে ইনকাম করবে। তোমার প্রয়োজন মতো খরচ করবে। কৃপনতা করবে না। অল্প টাকা ইনকাম করলে মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে। যারা ঠিকঠাক ভাবে লেখাপড়া করেনি, তারা ভালো চাকরি পায় না। যারা অল্প টাকা আয় করে তাদের বারো মাস অভাব থাকে। অভাব খুব খারাপ একটা বিষয়। অভাব মানুষকে অনেক নীচে নামিয়ে দেয়। মিথ্যুক বানিয়ে দেয়। যেমন ধরো- আমাদের বাসায় এক হুজুর আসে। রোজা আর আরিশকে আরবী পড়ায়। সে যে টাকা ইনকাম করে সেই টাকায় তার হয় না। ফলাফল প্রতিমাসে মানুষের কাছ থেকে টাকা লোন নিতে হয়। এই হুজুর যদি মাস্টার্স পাশ করতো ভালো একটা সাবজেক্ট নিয়ে, তাহলে সে ভালো একটা চাকরি পেতো। মানুষের কাছে হাত পাততে হতো না। এক মেয়ে আমাদের পাশের বাসায় থাকে। সেই মেয়ের বাবা মারা গেছে অনেক আগে। মা মারা গেছে কিছুদিন আগে। এই মেয়ে এখন বিরাট বিপদে পড়েছে। হ্যা মেয়েটি লেখাপড়া করেছে। কোনো রকমে পাশ করে গেছে। তবু একটা ভালো চাকরি পাচ্ছে না। কারণ মেয়েটি কোনো কিছুতেই দক্ষ নয়।
প্রিয় কন্যা আমার-
তুমি মানুষ। তোমার অনেক দায়দায়িত্ব আছে। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব আছে। সমাজের প্রতি দায়দায়িত্ব আছে। লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি মানুষের জন্ম হয়। তারা সমাজ বা দেশের জন্য কোনো অবদান রাখতে পারে না। কেউ তাদের মনে রাখে না। কোনো রকমে বেচে থাকে, তারপর একদিন হুট করে মরে যায়। ইহা কি সঠিক? দুঃখের বিষয় আমি নিজেই জীবনে কিছু করতে পারলাম না। এটা আমার বিরাট আফসোস। বিরাট হাহাকার। তুমি আমার মতো ভুল করো না। তুমি সমাজের জন্য কিছু করবে। ধরো, একটা লাইব্রেরী করলে। অথবা কিছু অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিলে। দরিদ্র পিতা মাতার সন্তানকে স্কুলে ভরতি করিয়ে দিলে। তাদের লেখাপড়ার খরচ দিলে। বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে। ক্ষুধার্থ মানুষকে পেট ভরে খাইয়ে দিলে। আসলে ভালো কাজ করার ইচ্ছা থাকলে, করা যায়। আর ভালো কাজ করার জন্য রাজনীতিতে নামার কোনো প্রয়োজন নেই। মন্ত্রী এমপি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। রাজনীতি তারাই করে যারা ক্ষমতা আর অবৈধ উপায়ে টাকা কামাতে চায়। দেশকে ভালোবেসে রাজনীতি করতে কেউ আসে না। ফাজ্জা, আমি যা পারিনি, সেগুলো তোমাকে পারতে হবে। এবং আমি জানি তুমি পারবে।
প্রিয় কন্যা আমার-
আমি মরে গেলেই এই পৃথিবীতে কেউ তোমাকে আগলে রাখবে না। তোমার মা মাস্টার্স পাশ করেও চাকরি বাকরি কিছু করলো না। ঘরসংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তোমাকে নিয়ে মহা ব্যস্ত হয়ে গেলো। তুমি আজীবন মানবিক থাকবে। বড় মনের মানুষ হবে। কেউ টাকা ধার চাইলে দিয়ে দিবে। সেই টাকা কোনো দিন ফেরত চাইবে না। নিজ থেকে দিলে দিবে। না দিলে নাই। অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে সব সময় সাহায্য করবে। যা মন চায় কিনবে, যা মন চায় খাবে। ইচ্ছে মতো খরচ করবে। মনের সকল আশা শখ মিটিয়ে নেবে। নিজে ইনকাম করবে, খরচ করবে। কোনোদিন কারো কাছে কিছু আশা করবে না। দুনিয়ার কোনো কিছুর প্রতি লোভ করবে না। লোভ খুব খারাপ জিনিস। লোভ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। বাংলাদেশের মেয়েরা জীবনে বড় হবে এই স্বপ্ন দেখে না। তারা মনে করে ধনী একটা ছেলে দেখে বিয়ে করলে আর কোনো চিন্তা নাই। এই চিন্তাটা ভুল। প্রতিটা মেয়ের উচিৎ নিজের পায়ের নিচের মাটিটা শক্ত করা। নিজেকে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলা। একজন মেয়ে যদি যোগ্য ও দক্ষ হয়, নিজের যোগ্যতায় প্রচুর টাকা ইনকাম করে- তাহলে তার স্বামীও তাকে নিয়ে গর্ব করবে। শ্বশুর বাড়ির লোকজনও তখন সমীহ করতে বাধ্য হয়। এজন্য মেয়েদের নিজ পায়ে দাঁড়াতে হবে। মেয়েরা আর কতকাল বিয়ের আগে বাবা আর বিয়ের পর স্বামীর কাছ থেকে টাকা নেবে?


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


