
গতকাল মিরপুর এসেছিলাম এক কাজে।
অল্প সময়েই কাজ শেষ, হাতে সময় আছে। তাই চলে গেলাম মিল্লাত ক্যাম্পে। মিরপুর এগারো'তে। এই ক্যাম্পে বিহারীরা থাকে। আজও তারা নিজেদের মধ্যে উর্দুতে কথা বলে। ক্যাম্প গুলোতে যারা থাকে তারা ভয়ানক দরিদ্র। ঘর গুলো জাস্ট মূরগী ঘরের মতো। একটা ছোট্র রুমে ৭/৮ জন থাকে। শুনেছি মিল্লাত ক্যাম্প মাদকের জন্য বিখ্যাত। অথচ সামনেই পল্লবী থানা। ভর সন্ধ্যায় আমি এক বিহারীর দোকান থেকে চা খেলাম। চা টা ভালো ছিলো। চায়ের মধ্যে একগাদা দুধের সর দিয়েছে। আগুন গরম চা। এক কাপ চা খাওয়ার পর মনে হলো- আরেক কাপ খাওয়া যেতে পারে। চায়ের মধ্যে এত সর! এরকম চা আমি সাধারনত খাই না। মোহাম্মদপুরের জেনিভা ক্যাম্প আর মিরপুর এগারোর মিল্লাদ ক্যাম্প সারারাত জমজমাট থাকে। এখানকার কাবাবের দোকান গুলো খুব জমজমাট।
সুরভি ফোন দিয়ে বলল- কমলা নিয়ে এসো।
ফারাজার স্কুল থেকে বলা হয়েছে কমলা নিয়ে যেতে। কমলা কোথাও খুঁজে পেলাম না। কমলা কি বারো মাস পাওয়া যায় না? মালটা আছে। কমলার মতোন দেখতে কেনু আছে। কিন্তু কমলা কোথাও নেই। কমলা নেই কেন? কমলা কি শীত কালের ফল? শেষমেষ মালটা ও কেনু নিয়ে নিলাম। মালটার কেজি ৩৫০ টাকা। কেনুও ৩৫০ টাকা কেজি। গতকাল আপেল নিয়েছি। আপেলের কেজিও নিলো ৩৫০ টাকা। একলোক ভ্যানে করে শশা বিক্রি করছে। দেশী শশা। শশা দেখে মনে পড়লো- ফারাজা শশা পছন্দ করে। তিন কেজি শশা কিনে নিলাম। সুরভি তিন ধরে বলছে কাচা মরিচ লাগবে। সব কেনা হলেও কাচামরিচ কিনতে মনে থাকে না। ৮০ টাকার কাচা মরিচ কিনে নিলাম। কিন্তু গত তিন দিন কাচা মরিচ ছাড়া রান্না হয়েছে?
দিন বদলেছে, যুগ বদলেছে।
সবাই নিজেদের বদলে নিয়েছে। ভিক্ষুকরাও নিজেদের বদলে নিয়েছে। করোনার পর থেকেই দেশে ভিক্ষুকদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এখন আমার লোকাল বাসে উঠা হয় না। মেট্রোরেলে উঠি। সেদিন অনেক দেরি হয়ে গেছে। মেট্রোরেল বন্ধ। বাসে উঠেছি। বাসে এক ছেলে উঠেছে। স্মার্ট ছেলে। মাস্ক পরা। সেই ছেলে- নরম সুরে, ভদ্রভাবে বলছে, আমার মায়ের অপারেশন। ধারধেনা করে মায়ের অপারেশন করেছি। এখন ওষুধ কেনার টাকা নেই। বাধ্য হয়েছি হাত পাততে। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন। মায়ের ওষুধ কিনবো। বাসের লোকজন কমবেশি সবাই সাহায্য করলো। একজন দিলো দুইশ টাকা। ছেলেটা সব মিলিয়ে পাঁচ শ' টাকার মতো ইনকাম হলো। এক মহিলা তারা দুই ছেলে মেয়েকে রাস্তায় শুইয়ে ভিক্ষা করে। ছোট ছোট দুই বাচ্চা। প্রতিদিন একই দৃশ্য! বাচ্চা দুটা ঘুমে। গভীর ঘুমে। বাচ্চাদের কি ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে?
অনেকে বাসা বাড়িতে কুকুর বিড়াল পালে।
ঢাকা শহরে বাসা বাড়ি ছোট ছোট। এর মধ্যে কুকুর বিড়াল পালা কি দরকার? কুকুর বিড়াল প্রতি মাসে কয়েক লাখ মানুষকে খামচি/আচড় দেয়। কুকুর বিড়াল আচড় দিলে রেবিস ভ্যাকসিন দিতে হয়। এই ভেকসিনের আবার অনেক নিয়ম কানুন আছে। যে বাড়িতে কুকুর বিড়াল পালে, আমি সেসব বাসায় যাই না। আমার খালা গতকাল ফোন দিয়েছেন। বাসায় আয়। অনেকদিন তোর কোনো খোজ খবর নাই। আমি অসুস্থ আমাকে দেখতে আয়। আমি খালার বাসায় যাই না। খালার এক মেয়ে কুকুর, বিড়াল দুটাই পালে। কুকুর বিড়াল নিয়ে কি যে আহ্লাদ করে। দেখলেই মেজাজ খারাপ লাগে। ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির এক প্রফেসরের বাসায় আমি যেতাম। সেই প্রফেসরের বাসা ভরতি খরগোস। বসার জন্য আমি পরিস্কার কোনো জায়গা খুঁজে পেলাম না। খরগোস পিসাব করে, পটি করে। পুরো ঘরে বাজে গন্ধ! এখানে সেখানে গাজর, বাধাকপি পড়ে আছে।
আমার এক বন্ধু মুহিব।
মুহিব বিয়ে করেনি। সে ঘোষনা দিয়েছে কোনোদিন বিয়ে করবে না। মুহিবের বাবা মা চাকরির জন্য সাউথ আফ্রিকা থাকেন। মুহিবের অন্য ভাইবোনরা সব বিয়ে করে ফেলেছে। মুহিব থাকে তার খালার কাছে দিনাজপুর। খালার ব্যবসা দেখাশোনা করে। মুহিব ঢাকায় এলে আমাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়। বছরে দুই একবারের বেশী মুহিব ঢাকায় আসে না। মুহিব শুধু ঘুরে বেড়ায়। বছরের এগারো মাস কাজ করে, এক মাস ঘুরে বেড়ায়। আমিও মুহিবের সাথে অতি দুর্গম এলাকায় গিয়েছি। জঙ্গলের মধ্যে ছোট তাবুর মধ্যে থেকেছি। আমরা সব বন্ধুবান্ধব বিয়ে করে ফেলেছি। বাচ্চা-কাচ্চাও হয়ে গেছে। মুহিব বিয়ে করে না। আমরা ধরেই নিয়েছি মুহিব কোনোদিন বিয়ে করিবে না। সেই মুহিব শালা কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। মানুষ বোধহয় কথা দেয়, কথা না রাখার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





