somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সত্যকা
রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

বইখানা অনন্তযৌবনা-যদি তেমন বই হয়

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বুদ্ধিমান কৃষক মাত্রই বিশ্বাস করেন, তিনি যে বীজ রোপন করছেন ভবিষ্যতে সে বীজেরই ফল পাবেন । কোন কৃষক যদি গমের বীজ বপন করে তা থেকে ধানের আশা করে তবে নিঃসন্দেহে সবাই তাকে বোকা উপাধিতে ভূষিত করবে । ছাত্রজীবন নিঃসন্দেহে জ্ঞান অর্জনের উপযুক্ত সময় । জ্ঞান আহরণের যতগুলো মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম মাধ্যম হল বই পঠন । বই হল এমন বন্ধু যে চিরকাল স্বার্থহীনভাবে পাঠককে সঙ্গ দিয়ে যাবে এবং বিনিময়ে কিছু চাইবে না । বই শত্রুতা করতে জানে না । মানুষের অসময়ে কিংবা দুঃসময়ে বই নিরবে নিভৃতে পাঠককে উত্তম বন্ধুর মত সহচর্য দিয়ে থাকে । পল্লীকবি জসিমউদ্দিন বইয়ের গুরুত্ব বুঝাতে বলেছেনে, ‘বই আপনাকে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে তথা সকলকালে নিয়ে যেতে পারে । যে দেশে আপনার কোনদিন যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, বইয়ের রথে চেপে আপনি অনায়াসে সে দেশে যেতে পারেন ।’ কোন দুঃখী মানুষ যদি বই পড়াকে যথার্থ সঙ্গী হিসেবে গ্রহন করতে পারে তবে তার জীবনের দুঃখ কষ্টের বোঝা অনেকাংশে লাঘব হয়ে যায় । মানুষের সুদিন ও দুর্দিনে বই একান্ত সাথীর ভূমিকা নিতে পারে । এজন্য মানুষের মনে বই কেনার আগ্রহ জন্মানো উচিত । প্রমথ চৌধুরী যথার্থ বলেছেন, ‘বই কিনে কেউ কোন দিন দেউলে হয়না ।’ বই আমাদের জীবনের কীরূপে সহচর্য দিতে পারে তার প্রমাণ মেলে কবি আলাওলের উক্তিতে, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্তযৌবনা-যদি তেমন বই হয় ।’ প্রশ্ন জাগতে পারে, কোন ধরণের বই আমাদের পড়া উচিত এবং কোন ধরণের বই পড়া উচিত নয় ।
…..
বই অধ্যয়ণের ক্ষেত্রে কোন ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ কিংবা সীমা নির্ধারণ করা মোটেও সহজ কাজ নয় । তবুও মানুষের আগামীর প্রয়োজনে কিছু বই উপেক্ষা এবং অন্য কিছু বইকে উত্তমরূপে আঁকড়ে ধরা আবশ্যক । মহামতি দার্শনিক প্লেটো তার আদর্শ নাগরিকদের শিক্ষা ব্যবস্থা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, আদর্শ রাষ্ট্রের নাগরিকদের ধূর্ত লেখকদের বই এবং কাল্পনিক ও বাস্তবতা বিবর্জিত বই পাঠ করতে নিষেধ করেছেন । খ্রিষ্টীয় ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বই-মিসেস ঈলেন জী, হোয়াইট লিখিত ‘মণ্ডলীর জন্য উপদেশ’ গ্রন্থের ৩৮৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়ছে, ‘ছেলেমেয়েরা ও যুবকযুবতীদের শিক্ষার জন্যে এক্ষণে রূপকথা বা পরী বিষয়ক কাহিনী, উপকথা, এবং কাল্পনিক কাহিনীকে দেয়া হয় । অথচ এই বইগুলোর পাঠ থেকে তাদেরকে বিরত রাখতে হবে ।’ যেসব বই সত্যের বিরুদ্ধ-ভাবাপন্ন, তা ছেলেমেয়েদের তথা যুবকযুবতীদের হাতে দেয়া উচিত নয় । শিক্ষাগ্রহন করতে গিয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন এমন ধারণাদি গ্রহন না করে, যেগুলো পরিণামে কোন অর্থ বহন করে না ।
……
আনন্দের বিষয় এই যে, বর্তমান সময়ের সহজে নষ্ট হতে পারার স্রোতেও আমাদের অসংখ্য তরুণ-তরুণীর মধ্যে উল্লেখ করার মত পাঠাভ্যাস পরিলক্ষিত হচ্ছে । পাঠাভ্যাসের থেকে অন্য কোন অভ্যাস শ্রেষ্ঠত্ব পেতে পারে না । তবে কিছুটা দুঃখের সাথে বলতে হয় আমাদের তরুণ ও যুবক সমাজের মধ্যে যারা নিয়মিত বইয়ের সাথে যোগাযোগ রাখে তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন ধরণের ফিকশন, হরর গল্প, উপন্যাস এবং অর্থহীন, সাহিত্যের রসহীন এবং বাস্তবতা বিবর্জিত লেখা পাঠ করেন । এ ধরণের লেখা পাঠে নিষেধ নাই তবে এমন বিষয়কে পাঠের বিষয়রূপে গ্রহন করা উচিত যেগুলো আমাদের ভবিষ্যত জীবনকে আলোকিত করবে এবং সত্যের পথ দেখাবে । এজন্য আমাদের তরুণ পাঠকদের মনোযোগ প্রত্যাশা করি । পাঠের লক্ষ্য তো কেবল সাময়িক তৃপ্তি কিংবা উত্তেজনা নয় বরং এটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে নিজেকে জ্ঞানীরূপে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমও বটে । সুতরাং গল্প, উপন্যাসের সাথে বাস্তবতার নিরিখে লিখিত বই এবং বিদগ্ধ লেখকের লেখা পড়া আবশ্যক । শুধু গল্প এবং ফিকশন পড়ে যদি কেউ ভবিষ্যতের পন্ডিত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চান তবে তার সাথে মূর্খ কৃষকের খুব বেশি পার্থক্য আছে বলে মনে হয়না ।
……
যে বেই পড়ার মত সে বই অবশ্যই কেনার মত । বাঙালীদের বড় বদ অভ্যাস হচ্ছে আমাদের বই কেনার মানসিকতা নাই । আবার যারা ঘটা করে রাশি রাশি বই ক্রয় করে তারা বইকে কেবল তাদের ড্রয়িংরূম সজ্জিত করণে ব্যবহার করে । প্রত্যেকের প্রতিমাসে একটি দু’টি কিংবা সামর্থ্য অনুযায়ী বই কেনার মানসিকতা তৈরি হওয়া দরকার । কিনে হোক কিংবা ধার করে হোক-বই পাঠের বিকল্প নাই । কেননা বই না পড়লে মানুষের আত্মমর্যাদাবোধ জন্ম নেয়না কিংবা জাগ্রতও হয়না । আমরা যদি দেশকে গড়ার স্বপ্ন দেখি তবে আমাদের সুলিখিত, সৃষ্টিশীল ও মননশীল বইয়ের পাঠাভ্যাস করা আবশ্যক । টলষ্টয়ের মত হয়ত বলতে(জীবনে মাত্র তিনটি জিনিস প্রয়োজন বই, বই এবং বই) পারবো না তবে শুধু অবসরে নয় বরং ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকেও প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য বই পড়ার চেষ্টা করতে হবে । সকল নেশা বাদ দিয়ে বই পড়াকে প্রধান নেশা বানাতে হবে । ভালো ভালো বইগুলো প্রথমে পড়ে ফেলতে হবে কেননা পরবর্তী সময়ে সে বইগুলো পাঠের সুযোগ আর নাও আসতে পারে । ‍তবে নিকৃষ্ট বই সর্বদা বর্জনীয় । এ প্রসঙ্গে ইতালীয় প্রবাদে বলা হয়, ‘খারাপ বইয়ের চেয়ে নিকৃষ্টতর তষ্কর আর হয়না’ । শ্রেষ্ঠ বইগুলো হোক আমাদের উত্তম বন্ধু ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×