somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" সিটিংবাসের যাত্রাপথে একদিন "

০৩ রা জুলাই, ২০১৮ ভোর ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ বারিধারা যাবার প্রয়োজন বোধ করল অনিক। যেই ভাবা সেই কাজ। বেরিয়ে পড়ল। পাসপোর্ট অফিসের সামনে কড়া রোদে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর কাঙ্ক্ষিত গাড়ির সন্ধান মিললো অবশেষে। কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল । হাত উঁচিয়ে সিগন্যাল দিতেই গাড়ি সামনে এসে থামলো। উঠে পড়লো সে। সিট খালি তো নেইই বরং দাঁড়িয়ে যেতেও হিমসিম খেতে হচ্ছে ঢাকা শহরের সিটিং বাস বলে কথা।সরকারের নির্ধারিত ভাড়াতালিকার তোয়াক্কা করেন না বাস কর্তৃপক্ষ। যেখানেই নামুন না কেন আপনাকে শেষ গন্তব্যস্থলের পুরো টাকাই দিতে হবে। আর স্টুডেন্টদের অর্ধেক ভাড়া দেবার সরকারি যে নির্দেশনা রয়েছে সেটা যেন তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে একটা অবৈধ নিয়ম ছাড়া আর কিছুই নয়। অনিক ভেবে কিছুটা অবাক হয় মাত্র একজন কন্ডাক্টর বীরদর্পে কিভাবে এতগুলো যাত্রীর কাছ থেকে এভাবে ভাড়া আদায় করে! যদিও কথা না বাড়ানোর ভয়ে সেও পুরো ভাড়া দিয়ে দিল।
গরমে ছটফট করছে তার মতো অনেকেই। একসময় পাশের সীটের লোকটা উঠে যাওয়ায় বসার সুযোগ হল তার। আয়েশ করে বসে পড়ল, কিন্তু তাতেও শান্তি নেই! পাশেই দাঁড়িয়েছেন ছোটখাটো একটা লোক। দেখে ভদ্রলোক বলেই মনে হচ্ছে। সে যেন লোকটার ভূড়ির সাথে ছোটখাটো একটা পাহাড়ের সাদৃশ্য খুঁজে পাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপরই যেন সে এই ছোট পাহাড়টার নিচে চাপা পড়ছে। লোকটারও খুব একটা দোষ খুঁজে পাচ্ছে না সে। নিউটনের তৃতীয় সূত্রের কথা মনে পড়ে গেল তার। অনেক দিন আগে পড়েছিল। "প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে "।এরকমই হবে সূত্রটা। দন্ডায়মান যাত্রীদের দ্বারা পেছন থেকে যে বল /চাপ প্রয়োগ হচ্ছে লোকটির ওপর সেই বল/চাপের প্রতিক্রিয়ার ভারসাম্য রক্ষা করতেই তিনি এমনটা করছেন। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে অনিক কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

যাহোক, একটু পর লোকটা নেমে গেলেন।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। পরক্ষণেই তার পাশের ওই স্থানটা দখল করল একজন কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সুন্দরী রমনী। তার ওড়নার আঁচলটা অনিকের উপর এসে পড়েছে কিন্তু সে নিরুপায়! কিছুই বলতে পারছে না। ইতিমধ্যে পায়ে পায়ে দু 'একটি হালকা ধাক্কাও লেগেছে যদিও অনিক নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। একবার ভাবলো উঠে গিয়ে মেয়েটিকে বসার জায়গা করে দেবে কিনা। একবার এক বুড়োমিয়াকে লম্বা যাত্রাপথে নিজ আসনে বসার সুযোগ করে দেওয়ায় লোকটা অনেক খুশি হয়েছিল। মানুষের এই হাসিখুশি মুখগুলো সে অনেক ভালোবাসে। পরক্ষণেই একটা তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল তার। কিছুদিন পূর্বে একজন মধ্যবয়সী মহিলাকে এরকম পরিস্থিতিতে নিজ সীটে বসার জায়গা করে দিয়েছিল সে অথচ মহিলাটি তাকে আরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছিল। তাই এবার আর স্যাক্রিফাইস করতে ইচ্ছে করছে না তার। মনের মাঝে এক রকম দোদুল্যমানতা বিরাজ করছে। ভাবতে ভাবতে পরের স্টপেজে গাড়ি থামলো। মেয়েটিও নেমে পড়লো। লম্বা করে নিঃশ্বাস টেনে নিল সে। যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।

ঢাকা শহরে বাইরে বেরুলেই শুধু মানুষ আর মানুষ। মানুষে গিজগিজ করে। সে ভাবে কি দরকার ছিল এতো মানুষের! বিরক্ত হল কিছুটা, বর্ধিত মানুষগুলোর কথা ভেবে। এর সমাধান খুঁজতে গিয়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিকল্প কিছু ভেবে পেল না। প্রতিটা পরিবার যদি জন্মনিয়ন্ত্রণ রীতিনীতি কড়াকড়িভাবে মেনে চলতো তাহলে আজকে আর এই অবস্থার সৃষ্টি হত না। কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে সে আরও নিশ্চিত হল 'এটাই সমাধানের একমাত্র উপায়। ' তবে কয়জন সন্তান নেওয়া উচিত একটা পরিবারের? নিজের মনে প্রশ্ন ছুঁড়লো।উত্তরও খুঁজে পেল, ১ জন হলে ভালো হয়,২ জনের বেশি নয়।কিছুক্ষণ ভাবলো জনসংখ্যা কম হলে কি কি সুবিধা বা অসুবিধা হতো। অসুবিধা হওয়ার মতো বিশেষ কোনো ব্যাপার খুঁজে পেল না সে। শুধু সুবিধা আর সুবিধা!
পরক্ষণেই তার এই ভাবনায় ছেদ পড়ল। সে তার পরিবারের তৃতীয় সন্তান। তার বাবা -মা যদি কড়াকড়িভাবে এই রীতি মেনে চলতেন তাহলে এই পৃথিবীতে তার আগমন হত না। তিনি এমন একটা পদ্ধতিকে সমর্থন করছেন যেটা মেনে চললে সুন্দর এই পৃথিবীতে তার নিজেরই অস্তিত্ব থাকতো না! তাহলে এর সমাধান কি? কোন উত্তর খুঁজে পেল না সে। মগজে গুলিয়ে উঠছে সব।
গন্তব্যস্থলের কাছাকাছি চলে এসেছে সে। নামতে হবে।তাড়াতাড়ি নামার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করল।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৮ ভোর ৪:০৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×