somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"মন ছুটে চলেছে রেলিংয়ের ওপাশে "

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাবা সরকারি চাকুরিজীবী হওয়ার সুবাদে ইতিমধ্যে আসিফদের দেশের আনাচে -কানাচে অনেক স্থানই চেনা হয়ে গেছে। তার ছোটবেলা থেকে এই পর্যন্ত কত বার যে তাদের বাসা বদল করতে হয়েছে, সে নিজেও এখন স্মরণ করতে পারবে না! এইতো কয়েকদিন হল আবার গাজীপুর থেকে ঢাকার মোহাম্মদপুর বদলি হয়েছে তার বাবা।আর কিছুদিন পরই ঈদ অথচ এমন সময় বদলির নির্দেশ এলো। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও পুরো পরিবারকেই চলে আসতে হলো। সরকারি চাকুরিজীবীদের এই একটা বিড়ম্বনা। এখানে সেখানে ট্রান্সফার।

সবকিছু ঠিকঠাকভাবে গুছিয়ে নিয়েছে তারা। এই বাসার বারান্দাটা চমৎকার। সামনে খানিকটা খোলামেলা জায়গা থাকার সুবাদে আশেপাশের পরিবেশটা চমৎকারভাবে অবলোকন করা যায় বেলকুনি থেকে। তাই প্রতিদিন বিকেলে এক কাপ চা বা কফি হাতে নিয়ে এখানে না দাঁড়ালে তার মোটেও ভালো লাগে না।
দু 'দিন ধরে সে লক্ষ্য করল পাশের ভবনের একটি ফ্ল্যাটের বারান্দায়ও একটি মেয়ে তার মতোই চারপাশের দৃশ্য অবলোকন করে প্রতিদিন বিকেলে। দূর থেকে দেখে মনে হয়েছে মেয়েটা অসাধারণ সুন্দরী। তবে মুখে কখনও এক চিলতে হাসিও দেখেনি। কেমন যেন ফ্যাকাশে! আর সবসময়ই একটা চেয়ারে বসে থাকে। কি আজব মেয়েরে ভাই! একটু দাঁড়িয়ে দেখলে আশেপাশের দৃশ্যগুলো আরও সুন্দরভাবে অবলোকন করা যায়। সবসময় বসে থাকে। মনে হয় খুব অলস। একটু মুডি টাইপেরও হতে পারে। কে জানে কেন এমন! ভাবে আসিফ। কিছু বুঝে উঠতে পারে না মেয়েটির ব্যাপারে। ইচ্ছে হয় পাখির মতো উড়ে গিয়ে একটু কথা বলে আসতে। কিন্তু সে জানে তার সঙ্কোচবোধ এতোই বেশি যে বাস্তবে গিয়েও ওই মেয়ের সাথে সে কথা বলতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে! তার উপর আবার মেয়েটাও কেমন যেন মনে হয়।

কয়েকদিন পর আবারও রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে আসিফ। দূরের আকাশে একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ উড়ে যাচ্ছে। সেটাকেই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছে সে। ছোটবেলায় পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। তবে সেদিকে কপাল সুপ্রসন্ন হয় নি। নিজের অজান্তেই লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। হঠাৎ সেই বারান্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত হল তার। সবকিছু প্রতিদিনের মতোই। মেয়েটিও উড়োজাহাজটির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। হয়তো উড়োজাহাজের সাথে কোথাও উড়ে যাবার স্বপ্ন দেখছে! আসিফ তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করল। সে যেন দেখেও দেখলো না। কি ভাব রে বাবা! থাক, গোল্লায় যাক,ওদিকে আর নজর না দেওয়ায় ভালো। আসিফ মনে মনে বলল।৭-৮ বছর বয়সী একটা ছোট ছেলে এসে দাঁড়ালো মেয়েটির পাশে। কি যেন রেখে আবার ভেতরে চলে গেল।

কিছুদিন হল বারান্দায় দাঁড়ানোর সময় হয় না আসিফের।সামনে ঈদ। নিজেকে আরও গুছিয়ে নিতে ব্যস্ততাও বেড়েছে। দরকারি কোনো একটা কাজে বাইরে যাচ্ছিল সে। গেটের পকেট দরজা দিয়ে বেরুনোর জন্য যেই মাথাটা এগিয়ে দিয়েছে ঠিক তখনই কিছু একটা প্রচন্ড আঘাত করলো তার কপালে। মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। চারপাশের পৃথিবীটা যেন ঘুরতে শুরু করেছে। কয়েক মুহূর্ত সময় লাগলো তার স্বাভাবিক হতে। সামনেই ছোট বাচ্চারা ক্রিকেট খেলছে। বলটা এসে তার কপালে লেগেছে। ইতিমধ্যে ভয়ে কয়েকজন দৌড়ে পালিয়েছে। ব্যাট হাতে একটা ছেলে নির্বাক তাকিয়ে আছে তার দিকে। কিছুটা ঘাবড়েও গেছে বটে। আসিফ কপালে হাত দিয়ে দেখলো, রক্ত বের হয় নি। যাক বাবা, বেঁচে গেলাম। আরে ওই ছেলেটাই তো বলটা মেরেছে। কোথায় যেন দেখেছি বলে মনে হচ্ছে। ওহ! সেদিন বারান্দায় এই ছেলেটাকেই তো দেখলাম। মনে মনে বিড় বিড় করে বলল সে।

'এই ছেলে এদিকে আসো ',ভরাট কন্ঠে বলল আসিফ।
ভয়ে ভয়ে ছেলেটা এগিয়ে আসলো। ' সরি আঙ্কেল, আমি দেখিনি আপনাকে। তা না হলে বলটা এদিকে মারতাম না ', সে বলল।

ঢাকা শহরের বাচ্চাদের একটাই সমস্যা। চালাকও কম নয়। আমি কি ওর বাবার বয়সী নাকি? বলবে ভাইয়া অথচ বলে আঙ্কেল! মনে মনে বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বলল সে।একটু নরম গলায় ছেলেটিকে বলল, 'তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেন? নাম কি তোমার? '
'রাশেদ। '
'তোমার বাসার সবাই ভালো আছে তো? '
'হ্যাঁ। '
'তোমার আপু কেমন আছে? '

রাশেদ খানিকটা চমকে উঠল। 'আপনি আপুকে চেনেন কিভাবে! '
'ও আমার কলেজফ্রেন্ড ছিল। আমরা একই কলেজে পড়তাম। ' বানিয়ে কথাটা বলতে ইচ্ছে করছিল না তার। তবুও বলে ফেলল।
'আপু তো এ্যাক্সিডেন্টের পর আর বাসা থেকে বেরুইনি। কলেজে যাওয়া তো দূরের কথা। '
'সেজন্যই ভাবছিলাম একটু খোঁজখবর নেওয়া দরকার। কিন্তু তোমাদের বাসার ঠিকানা জানতাম না। '
'দূর্ঘটনার পর থেকে আপু আর চলাফেরাও করতে পারে না, কানেও ভালোমতো শোনে না, কথাও বেশি বলে না। একেবারে বদলে গেছে। '
যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ল আসিফ। আর কোনো কথা বাড়ালো না সে। সোজা বাসায় চলে এলো। মেয়েটার প্রতি কি বিকৃত ধারণা পোষণ করেছে সে!তার প্রতি করুণা হল। এমন ধারণা পোষণের জন্য নিজেকে অপরাধী বলে মনে হলো তার। এমন চমৎকার একজন মানুষের প্রতি উপরওয়ালা কিভাবে এতো নির্দয় হতে পারেন? মনে মনে বিড়বিড় করে বলল।

পরদিন বিকেলেও আসিফকে দেখা যায় বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়াতে।তবে অন্যদিন গুলোর মতো আশেপাশের দৃশ্য অবলোকন করছে না। মনটা আজ কিছুটা বিষন্নতায় ছেয়ে আছে। মন ছুটে চলেছে সেই হুইলচেয়ারে বসে থাকা মেয়েটির দিকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৩১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×