somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ কেমন বিয়ে?

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ধর্ষণ হলো সম্মতিবিহীন জবরদস্তি যা একটি গুরুতর অপরাধ, যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। বিয়ে হচ্ছে নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একত্র জীবনযাপনের নৈতিক এবং আইনী অনুমোদন। কিন্তু গত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে দেশের তিনটি জেলায় ধর্ষণের মামলার আসামির সঙ্গে ধর্ষণের শিকার তরুণীর বিয়ে হয়েছে এবং তা হয়েছে আদালতের সম্মতিতে ।
গত ২৭ মে জেলার সোনাগাজীর চরদরবেশ এলাকার এক তরুণীকে ধর্ষণ করে জহিরুল ইসলাম জিয়া নামে এক ইউপি সদস্যের ছেলে। এর পরদিনই ওই তরুণী নিজে থানায় হাজির হয়ে ধর্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। একপর্যায় ২৯ মে ধর্ষক জিয়াকে আটক করে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ। পরে অভিযুক্তের পরিবার জামিনে মুক্তি পেলে বিয়ে করবে শর্তে ধর্ষকের জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করে।লাখ টাকা দেনমোহরে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্যতা থেকে মুক্তি পেতে এবার হাইকোর্টের নির্দেশে ফেনী জেলা জেলা কারাগারের আয়োজনে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরেকটি হলো , ১৮ অক্টোবর রাতে নাটোর জেলার (১৮ অক্টোবর) উত্তরপাড়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে মানিক হোসেন একই এলাকার সম্পা খাতুন নামে ওই তরুণীর ঘরে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করে। এরপর ১৯ অক্টোবর সেই তরুণী বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এদিনই ধর্ষক মানিক হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। পরে নাটোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক তরুণীর সঙ্গে ধর্ষকের বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর ধর্ষক মানিক হোসেনের জামিন মঞ্জুর করেন। এনিয়ে আদালত পাড়ায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ধর্ষণ মামলায় আট বছর ধরে কারাগারে বন্দী দিলীপ খালকো ২০১২ সালে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। ধর্ষণের শিকার ওই নারী আদালতে বলেন, আসামিকে জামিন দিলে তার আপত্তি নেই। আদালত কারাফটকেই তাদের বিয়ের আদেশ দেন।

বাংলাদেশের প্রচলিত আইনব্যবস্থায় ধর্ষণের অপরাধ ভিক্টিমকে বিয়ের মাধ্যমে আপসযোগ্য নয়। ধর্ষণের শিকার তরুণীরআত্মীয়-স্বজন কিংবা স্বয়ং ভিক্টিমদের অনেকে অপরাধীর সাথে বিয়েতে সম্মতি দেন মূলত সামাজিক ও আর্থিক অনিশ্চয়তা থেকে। আমাদের দেশে ধর্ষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ নারীকে উল্টো সামাজিক লাঞ্চনা ও কলঙ্কের সম্মুখীন হতে হয়, ধর্ষণের শিকার নারীর পরবর্তীতে বিয়ে ও সামাজিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে অজস্র প্রতিবন্ধকতা বিরাজমান, এদেশে বিচারপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া আর্থিকভাবে ব্যয়বহুল, হয়রানিপূর্ণ এবং আইনের নানান প্যাঁচে পড়ে ও ক্ষমতা কাঠামোর প্রভাবে শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার না পাওয়ার সমূহ আশঙ্কা– এসব কিছুই একজন ভিক্টিম কিংবা তাঁর পরিবারকে ‘বিয়ের মাধ্যমে সমঝোতা’ করতে বাধ্য করে। বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’ এর ক্ষেত্রে বাদীর মূল চাওয়াই থাকে বিয়ের দাবি এবং সম্পর্কের স্বীকৃতি; অভিযুক্তের শাস্তি নয়। অন্যদিকে জোরপূর্বক ধর্ষণে ‘জোর’ আছে; ‘প্রেম’ নেই। উচ্চ আদালত হয়তোবা এই আদেশটি বাদীর সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে দিয়েছেন এর ফলে জোরপূর্বক ধর্ষণ এবং বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ এই দুটোর মধ্যে আইনি প্রতিকারের বেলায় প্রথমবারের মতো পার্থক্য সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছে। যে ধর্ষক একজন নারীর অসম্মতিতে জোর করে ধর্ষণ করে আবার সেই ধর্ষকের সাথে নারীর বিয়ে দেওয়া মানে সেই নারীকে আবারো অসম্মান এবং অনিশ্চিত জীবনের দিকে জীবনটাকে চিরতরে ধ্বংস দেওয়া ।
আমাদের দেশে আইন প্রণয়নকারী ও প্রয়োগকারী যাই হোক কিন্তু ধর্ষকের সাথে কখনোই আপোষ নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১৮
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×