somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হঠাৎ ললিতের সঙ্গে দেখা......................

০৯ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন হঠাৎ শিকদার পাড়ার ললিত বর্মণের সাথে দেখা হয়ে গেল । প্রায় ৩৬ বছর পর। এমনি করে ৩৬ বছর আগে একবার ওর সাথে দেখা হয়েছিল জলপাইগুড়ি শহরে। যে বছর চাকরি পেলাম LIC-তে। ও তখন বাংলাদেশ থেকে এসে টুকটাক এটা সেটা করছে। স্থায়ী কোন চাকরী হয়নি। শহরের রাস্তায় আচমকা ওকে দেখে কী আশ্চর্য যে হয়েছিলাম। তারপর ওকে আমার মেসে ডেকে নিয়ে এসে অনেক গল্প, আড্ডা হল। ছবি তোলা হল।

মাঝে ওর আর কোন খোঁজ নেই। শুনেছিলাম ও কোচবিহার শহরে থাকে। ব্যস এইটুকুই। না বাড়ির ঠিকানা অথবা কর্মস্থলের হদিশ। কী করে খোঁজা যায়! আমার কোচবিহারের কমরেডদের সাথে যখনই দেখা হয়েছে, বলেছি ওর কথা। ওরা অনেক চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু পারেনি। আমার নিজেরও কখনো ঐ শহরে যাবার সুযোগ ঘটেনি।

গত বৈশাখ মাসের এক পড়ন্ত বিকেলে কোচবিহার শহরে ওর বাড়ী খুঁজে পাই LIC য়েরই এক ব্যক্তির সহায়তায়। অনেকটা জমি নিয়ে ওদের বাড়ী। সামনেটা লন। পেছনে বাংলো প্যাটার্নের একতলা বাড়ী। লনে পাড়ার বৌ-ঝিরা বসে বিশ্রম্ভালাপ করছিল। ললিতের খোঁজ করতেই একজন দৌড়ে বাড়ীর মধ্যে ঢুকে গেল। খানিক পরে যে ব্যক্তি বারান্দায় এসে দাঁড়াল, স্বল্প আলোতেও আমার চিনতে বাকী রইল না যে, সে-ই ললিত। কারণ বয়সের ছাপ ওর চেহারায় অতি অল্পই পড়েছে। আমি ধীর পায়ে লন পেরিয়ে আসতে আসতে চেঁচিয়ে বললাম - কীরে ব্যাটা, চিনতে পারছিস? বলত, আমি কে?

ওর চোখে মুখে স্পষ্টতঃই কিছুটা হতচকিত অবস্থা দৃশ্যমান হল। কিন্তু তা ক্ষণিকের জন্য। হাত চারেকের মধ্যে এগিয়ে আসতেই ও চেঁচিয়ে উঠল, প্রদীপ না? আমি এক দৌড়ে উপরে উঠে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। দুজনের কন্ঠ থেকেই তখন অস্ফুট সব ধ্বনি বেরতে লাগল। খেয়াল করিনি কখন যেন ওর পাশে ওর স্ত্রী এসে দাঁড়িয়েছে। ও আমাদের কান্ড-কারখানা দেখে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। সম্বিত ফিরে এলে আমরা ওর বৈঠকখানায় এসে বসলাম। এই ৩৬ বছরের যত কথা সব ভিড় করে আসতে লাগল একসঙ্গে। ওর স্ত্রী বীণা শুধু হেসেই যাচ্ছে। কিছু পরে সন্দেশ-বিস্কুট এল। চা খাই না বলে কফি এল। আটটার দিকে বীণা ওর কানে কানে কী যেন বলল। ললিত বলল, তুই কিন্তু আজ খেয়ে যাবি। আমি বললাম, সে দেখা যাবে। ও বলল, বীণা রান্না শুরু করে দিয়েছে, বেশি দেরী হবে না। তোর ব্যাগপত্র কোথায়? রাতে থাক। সারা রাত গল্প করা যাবে।
আমি বললাম, না-রে আমাকে ফিরতে হবে।
ললিত বলল, উঠেছিস কোথায়?
এল-আই-সি'র গেস্ট-হাউসে।
ও সে জায়গা আমি চিনি। এখান থেকে রিক্সা ধরে দেব'খন। কোন অসুবিধে হবে না। আর রিক্সা না পাওয়া গেলে বাইকে করে পৌঁছে দিয়ে আসব।
এর পরে আর কথা চলে না।
অল্প সময়ের মধ্যে বীণা চমৎকার রান্না করে ফেলল। ডাল ভাত দু'রকম ভাজা। কোয়াশের তরকারী ও মাছ ছিল ও' বেলার, আবার ডিমের ওমলেট।
আমি একটু বকলাম ওকে এত খাটা খাটনির জন্য। সামান্য আহার করি। তার জন্য এত আয়োজনের কি সত্যি প্রয়োজন ছিল?

যাহোক, খেয়ে দেয়ে বিদায় সেরে যখন লনে পা রাখলাম তখন ঘড়িতে দশটা বেজে গিয়েছে। এত রাতে রিক্সা পাওয়ার আর কোন চান্স নেই মনে করে ললিত ওর হিরো-হন্ডা খানা বের করে তাতে স্টার্ট দিয়ে ফেলল। বীণার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি সে একটু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে তার স্বামী এত রাতে ৫ কিমি পথ একা ফিরবে বলে।

ললিত তার কথা কানে না নিয়ে আমাকে পেছনে উঠতে বলে গাড়ী হাঁকিয়ে দিল জোরে। পেছনে একটা কথা শুধু শোনা গেল, সাবধানে চা..লি..ও।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৫৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×