রাশু ভাই ও অন্য ভালোবাসা (প্রথম পর্ব)
-তবে শোন। কিছু দিন যাবত মুসকানের মোবাইলে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসছে।এমনি একদিন কল রিসিভ করে -মুসকান বলল-"দেখুন আপনি যেই হন না কেন, আমি আপনার সাথে কথা বলতে পারব না,দুঃখিত। এভাবে প্রতিদন ফোন করে আমায় বিরক্ত করা বন্ধ করুন প্লিজ। তা না হলে আমি পাপাকে জানাতে বাধ্য হব।"
ঠিক তখন ই মুসকানের কানে ভেসে এলো তার বাবার কন্ঠ, মুসকান যাকে আদর করে পাপা বলে ডাকে।
মুসকানের পাপার নাম মির-মুনতাকির আলি।খুব গম্ভীর প্রকৃতির লোক এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। গম্ভীরতর মানুষ হলেও মুসকানকে প্রানের থেকে ও বেশি ভালবাসে। সবাই তাকে ভয় করে চলে কিন্তু মুসকানের কাছে তার গাম্ভীর্য জল হয়ে যায়।একমাত্র মেয়ে বলেই মনে হয় এত আদর করে মেয়ে কে।মুসকান ও বাবা ছাড়া কিছু বোঝেনা।ছোট বেলায় মা কে হারিয়েছে সে,বলতেগেলে তার বাবাই তাকে কোলেপিঠে মানুষ করেছে।
-জ্বি, পাপা ডাকছিলে?
-হুম। রাত ক'টা বাজে সে খেয়াল আছে? ডিনার করতে এসো।না হলে অসুখ করবে।
-হ্যা পাপা আসছি। ওয়েটা মিনিট।
মুসকান ফোন রেখে খাবার টেবিলে চলে গেল।আজ খাবারের মেনুতে আছে চিংড়ির মালাইকারী, মুসকানের ওয়ান অফদা ফেভারিট ডিস।
এ পর্যন্ত বলে রাশু ভাই একটু থামলো।
পরপর দু চুমুক দিয়ে,চায়ের কাপটা পাটির উপর রাখল।আমি বললাম কি হল তার পর?রাশু ভাই দুষ্টু হাসি দিয়ে শুদ্ধ সাধু বাংলায় বলতেলাগলো -"অতঃপর তাহারা গলদা চিংড়ীর মালাইকারী ভক্ষণ করিয়া যার যার সকক্ষে গিয়া নিদ্রা নামক ব্যাধিতে জড়জরিত হইলো"
এ কথা বলার কিছুক্ষণ পর রাশু ভাই দাড়াল এবং দাত ভাঙ্গা বাংলা ভাষায় কিছু বলল,যার অর্থ বোঝার জন্য আমার বেসবেগ পেতে হল।ভাইয়া যা বলল তার নমুনা এই যে "ভ্রাতা মোর।তুমি ইহস্থানে কিয়তখন কালক্ষেপণ কর।আমি প্রকৃতি মাতার ডাকে সারা দিয়া আসিতেছি। " হঠাৎ হঠাৎ ভাইয়ার যে কি হয়? এত কঠিন কঠিন বাংলা বলে,যে মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝি না।
আমার একটা বদ অভ্যাস আছে।কোন কাহিনী পড়লে বা শুনলে তা ভবিষ্যতে কোন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আগে থেকে ভাবতে খুব ভালোলাগে। আশ্চর্য ভাবে কিছুকিছু মিলেও যায়।এখন আমি মুসকান মেয়েটার পরবর্তী কাহিনীটা ভাবছি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে মুসকান নামের মেয়েটা মারা যাবে।অনেক্ষন ভেবে এর একটা কারন অবশ্য বের করেছি। দেখি আমার কল্পনা শক্তির দৌড় কতদূর। ভাইয়া এসে পরেছে, হাতে তার চানাচুরের প্যাকেট। বোঝাগেল লেরো বিস্কিটে পেট ভরলে ও মন ভরে নি।আমি বললাম ভাইয়া পরের অংশটুকু বলো, এমনিতে অনেক দেরি করে ফেলেছ। ভাইয়া বলল -চানাচুর কিনতে কিনতে দেরি হয়ে গেলো রে।তবে শোন... উম কোথায় যেন ছিলাম?আমি বললাম-ঐ যে চিংড়ীর মালাইকারী খেয়ে ঘুমোতে গেল। ভাইয়া বলল "ও হ্যা মনে পরেছে, তো তার পর "
"তোকে একটা কথা বলি দোস্ত ভুলেও এই কথা তোর বাবার কাছে লুকাস না। আমার কথা শোন যা এক্ষণি গিয়ে সব বলেদে আংকেল কে।এখন সমস্যা ছোট আছে, কিন্তু বড় সমস্যায় রূপ নিতেও কিন্তু বেশি সময় লাগে না দোস্ত।আজ ফোন করছে কাল বলবে দেখা করতে চাই,পরশু আরো কতো কি!"
এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে একটা লম্বা দম নিলো মুসকানের বেস্ট ফ্রেন্ড মিষ্টি। মেয়েটার নামের মধ্যে যেন লুকিয়ে আছে তার রূপ-যৌবনের পরিচয়।তার নাম ই যেন তার আয়না।মিষ্টি মেয়েটা কথাও বলে খুব মিষ্টি করে।যদিও এই মাত্র যে কথা গুলো বলল তা কিছুটা তেতোই বটে।
মুসকান চুপ করে আছে।তার হাতে ভেনিলা আইসক্রিমের বক্স। এক চামচ মুখে পুরে বক্সটা মিষ্টির দিকে এগিয়ে দিতে দিতে মুসকান বলল- না, মিষ্টি তুই বুঝছিস না।পাপাকে বলা যাবে না,এমনিতে পাপার হাই-প্রেসার। শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করবে।আর গত বছরের ঘটনা ভুলে গেছিস তুই!
মিষ্টি আইসক্রিম খেতে খেতে প্রশ্ন করল- কোন ঘটনার কথা বলছিস?
মুসকান মিষ্টির দিকে তিক্ষ্ন দৃষ্টতে তাকিয়ে বলল-কেন তোর মনে নেই?ওই যে আমাদের ম্যানেজারের মেয়ের ব্যাপারটা।
মিষ্টি, মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল- না রে, মনে পরছে না। আবার বল কি হয়েছিল ম্যানেজারের মেয়ের?
মুসকান আর এক চামচ আইসক্রিম মুখে পুরে বক্স টা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে মিষ্টির কোল ঘেষে বসল।তার ঠোঁটের কোনে এক ফোটা আইসক্রিম লেগেছিল তা মুছতে মুছতেই মুসকান বলল- আর বোলিস না,গত বছর আমাদের ম্যানেজার পাপাকে এসে বলল তার মেয়েকে যেন কোন ছেলে ফোন করে বিরক্ত করে।পাপা যেন একটু খোজ নিয়ে দেখে, কে এমন করছে।পাপারতো কতো লিংক, তুই জানিসই।
তো পাপা ম্যানেজারের কথা শুনে বলল-ঠিক আছে, আমি ব্যাপারটা দেখছি। কিন্তু ম্যানেজার সাহেব,একটা কথা জানেন কি?"আগুন ছাড়া কিন্তু ধোয়া উঠে না"
ঐ ছেলের কাছে আপনার মেয়ের নম্বর এলো কি ভাবে?এই ধোয়া আপরনার ঘরের আগুন থেকেই ছড়িয়েছে।ঐ আগুন আপনাকেই নিভাতে হবে।বিয়ে দিয়ে দিন,ঘর ও সম্মান দু'ই ছাই হওয়া থেকে বেঁচে যাবে।
পাপার কথা মত ম্যানেজার সাহেব এক মাসের মধ্যে তার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়।সেই বিয়েতে তো তুই ও আমার সাথে গিয়েছিলি।এবার মনে পরেছে?
মিষ্টি বলল- জ্বি ম্যাডাম, মনে পরেছে।
মিষ্টি দেখল মুসকান গভির ভাবে কি যেন ভাবছে।মিষ্ট জিগেস করল- কি রে কি ভাবছিস এত?
মুসকান চিন্তিত কন্ঠে বলল- বলতো এখন আমি কি করি?সে যদি আবার কল করে, তখন কি হবে?
-তহলে আর কি? তোর বাবা বলবে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে তবেই ঘর ও সম্মান দু'ই ছাই হওয়া থেকে বেঁচে যাবে। কথাটা বলেই মিষ্টি অট্ট হাঁসিতে ফেটে পরল।হাসি শেষে সহানুভূতির সুরে বলল-কিন্তু তুই চিন্তা করিস না।আগামী মাসে এমনিতেই তোর বিয়ে হয়ে যাবে, তোর আবার চিন্তা কিসের?তোর হাবিটা যা হ্যান্ডসাম।আমার কাছে তো এত্তগুলা সুন্দর লাগছে। নামটাও তো বেশ,খাঁনোমে খাঁন, ফাহাদ খাঁন।তোর পাপা যদি কালকেই তোর বিয়ে দিয়ে দেয় তবুও তোর লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না।কি বলিস?
আবার ও পিক করে হেসে দিল মিষ্টি। হাসলে তার গালে টোল পরে, তখন তাকে বলিউডের নাইকা প্রীতির মত লাগে।
এবার মুসকান যেন একটু লজ্জাই পেল।সে মিষ্টিকে ইসত ধাক্কা দিয়ে বলল-যাহ্, তোর মুখে কিছুই আটকায় না।
মিষ্টি সেই চির চেনা হাসি দিয়ে বলল-ওরে বাবা, মেয়ে দেখি লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে গেছে,ওগো লজ্জাবতীলতা এত লজ্জা পেলে হবে!বিয়ে তো তোমায় করতেই হবে।
ঠিক তখনি মুসকানের ফোন বেজে উঠে।
মুসকান ফোন হাতে নিয়ে দেখল আবার সেই নম্বর থেকে ফোন এসেছে। মুসকান ফোনটা মিষ্টির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল-দেখ আবার ফোন দিছে।মিষ্টি, মুসকানের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে কানের কাছে নিলো-হ্যালো।অন্য পাশ থেকে কোন আওয়াজ এলো না।মিষ্টি আরো কয়েক বার হ্যালো,হ্যালো বলার পর ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে গেল। মিষ্টি, মুসকানের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বলল-কেটে দিছে।ফাজিলটা কথা বলে না, আমার মনে হয় তোর কন্ঠ ভালো ভাবে চিনে তাই অন্য কন্ঠ বুঝতে পেরে কথা বলেনি।
মুসকান চিন্তিত গলায় বলল-কি করি বলতো একে নিয়ে?
"কথা বলে দেখ, কি চায় আস্ক কর " বলল মিষ্টি।
মুসকার গম্ভির ভাবে বলল-তোর এত শখ থাকলে তুই কথা বল।আমি পারবোনা।
মিষ্টি এবার কিন্তু টিটকারি করতে ছাড়ল না,বলল-হায়! আমার আর সে ভাগ্য কোই। আমার সাথে তো কথাই বলল না।তুই কথা বল,তোর সাথে কথা বলবে। আর এভাবে এরিয়ে গেলে সে আরো বেশি ডিস্টার্ব করবে।তার থেকে ভালো, বুঝিয়ে বল, বুঝিয়ে বললে বুঝবে আমার মনে হয়।
(চলব....)