করোনা সংকট নিয়ে অবশ্যই সরকারের এবং উপদেষ্টাদের অ্যানালাইসিস, পরিকল্পনা, এবং কৌশল আছে। তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা এবং কোন পরিস্থিতি কখন হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে তার হিসাব নিকাশ আছে। যদিও সেসব বরাবরের মতই গোপনীয়। আমরা সেসব তথ্য জানতে পারবনা। তবে তাদের পদক্ষেপগুলো বিশ্লেষণ করে তাদের কৌশল সম্পর্কে ধারনা করা যেতে পারে। এখন পর্যন্ত সরকারের পদক্ষেপগুলো দেখে মনে হচ্ছে,
১. করোনা সংকট নিয়ে তারা উদাসীন ছিল কিংবা ধরে নিয়েছিল করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে আউটব্রেক করবেনা।
২. লকডাউনের পর যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেবে তা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। ফলে রিস্ক নিয়ে অপেক্ষা করে দেখেছে।
৩ .স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা তারা মেনে নিয়েছে। তবে এমন পরিস্থিতিতে তা দ্রুত সময়োপযোগী করার চেষ্টা না করে বরং মিডিয়া এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। যেন নাগরিকরা একধরনের কনফিউশনে থাকে।
৪. দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির চেয়েও প্রধানমন্ত্রীর ইগো এবং রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাকে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
৫. পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে বিদেশী এবং এনজিও সাপোর্ট পাবে সে নিশ্চয়তা আছে বলে ধরে নিয়েছে।
৬. পরিসংখ্যান মানুষের মনোজগতে অনেক ভাবেই প্রভাব ফেলে। তাই পরিসংখ্যানকে ম্যানুপুলেটও করা হয়। সরকার এটাকে একটা হাতিয়ার হিসাবেই নিয়েছে।
কমনসেন্স থেকেই এমন বেশ কিছু সিদ্ধান্তে চলে আসা যায়। তবে সরকারের শর্ট টার্ম সব কৌশল আসলে এ দেশের মানুষের জীবন নিয়ে একধরনের জুয়া খেলায় পরিণত হয়েছে। জুয়ার ফলাফল ভবিষ্যতেই জানা যাবে।
তবে একটা ভয়ংকর ভাইরাস যে কোন সময় সরকারের গদিকেও সংক্রমিত করে ফেলতে পারে। এই ইনসাইট তাদের না জানার কথা নয়!
আবার আরেকটা সমস্যাও আছে। ধরা যাক সরকার যদি বলে কাদম্বরী মরে গেছে, সরকার বিরোধীরা অবশ্যই বলবে কাদম্বরী মরে নাই। ভাইস ভার্সা।
তারপর কাদম্বরীকে মরে প্রমাণ করতে হয় সে মরেনাই অথবা সে মরে গেছে।
জার্নালিস্ট এবং গবেষকদেরও কাদম্বরীকে নিয়ে কোন আগ্রহ নাই। তারাও দেখে কোন তথ্যটা তাদের জন্য কতটুকু লাভজনক। যেহেতু সিন্ডিকেটই ইশ্বর।
তথ্য নিয়ে রাজনীতি, ম্যানুপুলেশন এবং মেন্টাল গেমের মারপ্যাঁচে কাদম্বরীদের পক্ষে আসলেই বেঁচে থাকা এবং মরে যাওয়া দুটোই কঠিন ব্যাপার।
ধর্মীয় বিশ্বাস এবং করোনা ভাইরাস
ধরা যাক একজন ব্যক্তি ১০ তলা উঁচু ছাদ থেকে লাফ দিল। লাফ দেওয়ার সময় সে মন্ত্র পড়ে লাফ দিক বা সূরা পড়ে লাফ দিক কিংবা আল্লাহ, ইশ্বর, গড কিংবা জিউসের নাম নিতে নিতে লাফ দিক তাতে ফলাফলের কোন তারতম্য ঘটবে না। সে উড়বে না। শূন্যে ভেসেও থাকবেনা। নীচে পড়ে যাবে। কারন অভিকর্ষ বলের তার বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে কিছুই যায় আসেনা। তা যেমন ঠিক সেভাবেই কাজ করে যাবে। বুদ্ধিবৃত্তিক বিবর্তনের পর থেকে ধীরে ধীরে মানুষ এমন অনেক প্রাকৃতিক নিয়ম কানুন সম্পর্কে জেনেছে। আবার অনেক কিছু এখনো জানার বাইরে। তবে বিবর্তন এখনো থেমে যায়নি। আর মানুষ এসব নিয়ম কানুন জানতে পেরেছে বলেই সে এমন অনেক কিছু করতে পেরেছে যা অন্য কোন প্রাণীর পক্ষে সম্ভব হয়নি।
এবং ঠিক এই বুদ্ধিবৃত্তিক বিবর্তনের কারনেই মানুষ কল্পনা করতেও শিখেছে। গল্প বানাতে শিখেছে। সে কাল্পনিক ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে এবং বিশ্বাস রেখেই সৃষ্টি হয়েছে সমাজ, ধর্ম, কালচার, রাষ্ট্র, দর্শন, মতবাদ ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে যতই মানুষ প্রকৃতি, মহাবিশ্ব এবং নিজ সম্পর্কে জানছে ততই তার বিশ্বাস, কল্পনার জগত, গল্প বানানোর ক্ষমতা এসবও পরিবর্তিত হচ্ছে। যেমন এসময় বাইবেল লেখা হলে সেখানে অবশ্যই বলা হত পৃথিবীই সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। সূর্য নয়।
যাইহোক, অভিকর্ষ বলের মত করোনা ভাইরাসও সে যা ঠিক তাই। একজন মানুষের বিশ্বাস, অবিশ্বাস, গল্প, কাল্পনিক ব্যাখ্যা দিয়ে করোনা ভাইরাসের কিছুই যায় আসেনা। আপনি ১০০ জন মিলে নামাজ পড়ুন বা সংকীর্তন করুন কিংবা মিছিল করুন সেখানে একজন সংক্রমিত ব্যক্তি থাকলে আপনিও সংক্রমিত হতে পারেন। করোনা কিভাবে ছড়ায়, কিভাবে মানবদেহে কাজ করে, তা কতটা ক্ষতিকর এবং কিভাবে করোনা প্রতিরোধ করা যায় সেসব সম্পর্কে গবেষনা করেই কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এবং সেসব তথ্য জানা গেছে করোনা ঠিক যা সেভাবেই তাকে জানা এবং বুঝার মধ্যে দিয়ে। সুতরাং আপনি আল্লাহর গজব বলেন বা না বলেন, কোন মন্ত্র দিনে কয়বার পাঠ করলেন বা না করলেন তা ফলাফলে কোন ইমপ্যাক্ট ফেলবেনা।
হ্যা। ফলাফলে না ফেললেও তা মনকে শান্ত করতে পারে। স্ট্রেস রিলিজ করতে পারে। তবে সেটা অবশ্যই ব্যক্তিগত চর্চায় সীমাবদ্ধ রাখাই উচিৎ। কারন করোনা কোনটা মন্দির, কোনটা মসজিদ, কোনটা ইহুদি রাষ্ট্র, কোনটা মুসলিম রাষ্ট্র, কিংবা কে পাপী আর কে সাধু এসব বুঝতে পারেনা। সে বুদ্ধিবৃত্তিক বিবর্তন তার হয়নি।
সুতরাং.........
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:২১