ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন থেকে “COVID-19” বিষয়ে এখন পর্যন্ত মোট ১০ টি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের নবম রিপোর্টটি প্রকাশিত হয় ১৬ মার্চ। সে রিপোর্টের শিরোনাম হচ্ছে “Impact of non-pharmaceutical interventions (NPIs) to reduce COVID-19 mortality and healthcare demand”। অর্থাৎ নন- ফার্মাসিউটিক্যাল হস্তক্ষেপ “COVID-19” এর ফলে মৃত্যু এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমিয়ে আনায় কিভাবে প্রভাব রাখতে পারে তা নিয়েই এই রিপোর্ট। মানুষে মানুষে যোগাযোগ কমিয়ে এনে কিভাবে সংক্রমণ কমিয়ে আনা যায় তার দুটো মৌলিক কৌশলের কথা বলা হয়েছে এই রিপোর্টে। কৌশল দুটো হচ্ছে,
১। সাপ্রেশন অর্থাৎ চাপিয়ে রাখা
২।মিটিগেশন অর্থাৎ প্রশমিত করে ফেলা
সাপ্রেশন অর্থাৎ চাপিয়ে রাখা
এই কৌশল অবলম্বন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের সক্রমিত হওয়ার হার কমিয়ে ফেলা। এবং এ কৌশল প্রয়োগ করতে গেলে লকডাউনের কোন বিকল্প নেই। এবং আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে যতদিন পর্যন্ত ভাক্সিন আবিস্কার না হয় ততদিন পর্যন্ত এ কৌশল অবলম্বন করে যেতে হবে। ধারনা করা হচ্ছে “COVID-19” এর ভ্যাক্সিন আবিস্কার করতে প্রায় ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লেগে যাবে।
মিটিগেশন অর্থাৎ প্রশমিত করে ফেলা
এই কৌশল অবলম্বন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে সক্রমন ছড়িয়ে পরায় পুরোপুরি বাঁধা না দেওয়া। সক্রমন এবং মহামারীর ভেতর দিয়ে জনগণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে গড়ে উঠতে দেওয়া। ১৯১৭, ১৯৫৭, ১৯৬৮, এবং ২০০৯ সালে ইনফ্লুএঞ্জা মহামারি মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশে এ কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল।
যাইহোক, রিপোর্টটিতে কৌশল অবলম্বন করার ক্ষেত্রে নৈতিক এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় রাখা হয়নি। সে কথা রিপোর্টেই আছে। এবং দুই কৌশলেই ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে মিটিগেশন কৌশল অবলম্বন করলে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে পরে যাবে। বৃদ্ধদের মৃত্যুহার বেড়ে যাবে। এবং কোন দেশে কোন কৌশল অবলম্বন করতে হবে তা আসলে অনেকগুলো ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। যেমন আমার ধারনা মিটিগেশন কৌশল অবলম্বন করলে আমাদের দেশে প্রচুর মানুষ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। যদিও শুধু ধারনার উপর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা যায় না। তার জন্য দরকার প্রচুর গবেষণা লব্ধ তথ্য।
গবেষনা, তথ্য, কৌশল অনেক দূরের ব্যাপার। আমাদের দেশের দায়িত্বশীল মানুষদের কাজ কারবার এবং কথা শুনে মনে হচ্ছে প্রাথমিক ধাক্কা মোকাবিলাতেও তারা প্রস্তুত না। তবে তারা আসলে কিসের প্রস্তুতি নিচ্ছে তা জানার একটা আগ্রহ আমার আছে।
ব্ল্যাক সোইয়ান ইভেন্ট
নাসিম নিকোলাস তালেব একজন ফিন্যান্স প্রোফেসর। লেখক এবং ফর্মার ওয়াল স্ট্রিট ট্রেডার। তিনি ২০০৮ সালের ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিস নিয়ে বইয়ে ব্ল্যাক সোইয়ান ইভেন্ট টার্মের কথা বলেছিলেন। ব্ল্যাক সোইয়ান ইভেন্ট হচ্ছে এমন এক পরিস্থিতি যেখানে কোন কিছুই অনুমান করে বলা মুশকিল। প্রচলিত মডেল এবং টুলস দিয়ে অর্থনীতি এবং বাজার কোন দিকে যাচ্ছে বা যাবে তা বলা যায় না। আর এটাই সংকট। একমাত্র ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেই তা কেন হয়েছে কিভাবে হয়েছে তা ব্যাখ্যা করা যায়। সুতরাং এমন পরিস্থিতিতে দরকার হয় নতুন, কার্যকর, এবং বলিষ্ঠ পরিকল্পনার।
করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বকে এমন সমস্যার মুখোমুখি ফেলে দিয়েছে।
করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা এখনো স্পষ্ট ভাবে জানিনা আমাদের পলিসি মেকাররা কোন কৌশল কেন অবলম্বন করছে বা করতে যাচ্ছে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন থেকে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখি আমাদের হাতে খুব বেশী অপশন নেই। ভ্যাক্সিন না আসা পর্যন্ত সাপ্রেসশন কৌশল অবলম্বন না করার কোন উপায় দেখছিনা। এবং তার ফলে যে ব্ল্যাক সোয়াইন ইভেন্টের মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হবে তাও সত্য।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বস্তরের মানুষের অনেক বেশী দায়িত্বশীল, ইনোভেটিভ, বিকল্প পথ অনুসন্ধানে গবেষণা এবং কোঅপারেটিভ হওয়ার কোন বিকল্প নেই।
আমরা প্রস্তুত? আমরা পারব? এসব প্রশ্নের উত্তরই আমাদের ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেবে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন থেকে প্রকাশিত “COVID-19” বিষয়ক রিপোর্ট
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৪৬