somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নুইসেন্স ফিকশনঃ সিংহের মত ধূর্ত এবং শেয়ালের মত সাহসী ও অন্যান্য...........

২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সিংহের মত ধূর্ত এবং শেয়ালের মত সাহসী

এক রাজ্যে এক রাণী ছিল। একদিন সে রাজ্যের মন্ত্রী, উজির নাজির, পাইক পেয়াদারা একসাথ হয়ে রাণীর কাছে আসল।

রাণীঃ কী সমস্যা আপনাদের?

ওরাঃ আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, কিন্তু কোন কান্ডজ্ঞান দেননি। আমাদের জ্ঞান দেন রাণী,আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকনির্দেশনা ছাড়া আমরা লগি বৈঠাহীন মাঝির মত দিকভ্রান্ত।

রাণীঃ ঠিক আছে। আপনাদের প্রথম কাজ হচ্ছে ম্যাকিয়্যাভেলি পড়া। তারপর পড়বেন দেরিদা। পড়া শেষ হলে দেরিদা দিয়ে ম্যাকিয়্যাভেলিকে বুঝবেন। বুঝার পর আমার কাছে এসে বলে যাবেন কি বুঝেছেন। ভুল বুঝলে আমি ঠিক করে দেব।
কয়েকদিন পর আবার ওরা রাণীর কাছে আসল।

রাণীঃ বলেন আপনারা কি বুঝলেন।

ওরাঃ যা বুঝলাম তা হচ্ছে আমাদের সিংহের মত ধূর্ত এবং শেয়ালের মত সাহসী হতে হবে।

রাণীঃ ঠিক। ঠিক। এইতো বুঝে গেছেন। এবার কাজে নেমে পরুন।

ওরাঃ আমরা ধন্য হলাম রাণী। আপনাকে মাদার অব উইজডম উপাধিতে ভূষিত করতে চাই।

তারপর সিংহের মত ধূর্ত এবং শেয়ালের মত সাহসী একদল লোক মিলে রাজ্য পরিচালনা করতে লাগল।

ধুর

একটু সময় হবে? আঙ্কেল? কিছু কথা ছিল। আমার নাম রুহ। হঠাৎ করেই খুব বিপদে পরে গেছি।

টাকা পয়সার দরকারত? ঢাকা শহরে এসে ছিনতাই হয়ে গেছে সব? বাড়ি ফেরার টাকা নেই? নাকি অন্য গল্প? নতুন কোন ধান্ধাবাজি? মাদকাসক্ত? নেশা উঠেছে। অথচ টাকা নেই। তাইতো? এসব দেখতে দেখতেই বুড়ো হলাম ছোকড়া। যত সব উৎপাত। আমাকে ছাড়োত।

না না। ওসব কিছু নয়। আমি টাকা চাইব না। আপনি ভুল বুঝছেন। আমার বিপদটা অন্যরকম। একটু শুনেই দেখুন না। হয়তো আপনিই পারবেন আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে।

বড্ড বিপদে ফেললে ছোকড়া। আচ্ছা সংক্ষেপে বলো। আমার আবার তাড়া আছে। কি বিপদ?

ধন্যবাদ আঙ্কেল। আমি কৃতজ্ঞ।

ধানাই পানাই বাদ দিয়ে এবার ঝেড়ে কাশতো ছোকড়া। নষ্ট করবার মত ফালতু সময় আসলেই আমার হাতে নেই।

আঙ্কেল সমস্যাটা হচ্ছে আমি একজনকে ভালোবাসি। কিন্তু সে আমাকে একটা এসাইনমেন্ট দিয়েছে। এই এসাইনমেন্টটা কমপ্লিট করতে পারলেই সে আমার ভালোবাসা গ্রহন করবে। ব্যর্থ হলে করবেনা।

গাঁজা টাজা টেনে ফাইজলামী করতে এসেছ নাকি আমার সাথে! ফালতু পাগল ছাগল কোথাকার!

আসলে আঙ্কেল সত্য বলতে গাঁজায় দু’টান দিয়েই এসেছি। গাঁজা জিনিসটা আমাকে একদমই স্যুইট করেনা। দু’একটান বেশী দিয়ে ফেললেই প্রায় সেন্সলেসের মত হয়ে যাই। তবে খুব নার্ভাস লাগছিল। সাহস পাচ্ছিলাম না একদমই। তাই গাঁজা টেনে সাহস আনার চেষ্টা। তবে এখন মনে হচ্ছে আরো নার্ভাস হয়ে যাচ্ছি। আঙ্কেল বিশ্বাস করুন মায়া আমাকে ফিরিয়ে দিলে আমি একদম শেষ হয়ে যাব।

মায়া?? হাউ ডেয়ার ইউ ব্লাডি.......

প্লিজ। উত্তেজিত হবেননা আঙ্কেল। আপনার হাই প্রেসারের সমস্যা আছে। মায়া আমাকে বলেছে। পরে উত্তেজিত হয়ে হার্ট ফেইল বা স্ট্রোক করে মরে গেলে এসাইনমেন্টটা পুরো মাঠে মারা যাবে। আপনার একমাত্র মেয়ে মায়ার প্রেমেই বেশ কিছুদিন ধরে হাবুডাবু খাচ্ছি। মায়া তার মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চায়। সবাই জানে সে আত্মহত্যা করেছে। আসলে ঘটনা তা না। আপনি আপনার স্ত্রী কে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়েছেন। তারপর যাকে বিয়ে করেছেন সে মহিলাটার উপরও মায়া প্রতিশোধ নিতে চায়। তবে প্রথম টার্গেট আপনি। দেখুন আঙ্কেল, আপনি ভালোবাসার জন্য আপনার স্ত্রীকে হত্যা করে একজনকে বিয়েও করে ফেলেছেন। আমি নাহয় ভালোবাসার জন্য হবু শ্বশুরকেই হত্যা করলাম। তবে বেঁচে থাকলে যেহেতু আমার শ্বশুরআব্বাই হতেন, তাই আপনাকে কিছু অপশন দিচ্ছি। আমার কাছে এই মুহুর্তে একটা ক্ষুর আছে। সার্জিক্যাল নাইফ আছে একটা। সায়ানাইড আছ। অথবা আপনাকে ধাক্কা দিয়ে চলন্ত বাস বা ট্রাকের সামনেও ফেলে দিতে পারি। বলে ফেলুন কিভাবে মরতে চান। আমার হাতেও খুব একটা সময় নেই। মায়া অপেক্ষা করছে আমার জন্য। সে বলেছে আজ সে নীল শাড়ি পরবে।

কনক্রিটের জঙ্গলে ভোর হয়। সকাল হামাগুড়ি দিতে দিতে দুপুর হয়ে যায়। দুপুর গড়িয়ে বিকাল। তারপর সন্ধ্যা নামে। একসময় সন্ধ্যাও ডুব দেয় রাতের অতলে। জঙ্গলটা কখনো কখনো সমুদ্র হয়ে যায়। আবার কখনো মরুভূমি। সে কনক্রিটের জঙ্গলের কোন এক নির্জন ফুটপাতে একজন বয়স্ক লোক অপলক দৃষ্টিতে রুহ নামক এক ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখে মৃদু হাসি।

শোন ছোকড়া। আমাকে খুন করতে এসেছ ভালো কথা। তবে আমাকে খুন করলে আসল সত্যটা আর কখোনই জানতে পারবেনা। মানে যেভাবে মায়া তার মায়ের উপর প্রতিশোধ নেয় সেই গল্পটা। খুনটা আমিই করেছি। তবে আমাকে দিয়ে খুনটা আসলে মায়াই করিয়ে নিয়েছে। তুমি কি সে গল্পটা শুনতে চাও? নাকি খুনটা এখনই করে ফেলতে চাও।

শুরু করুন আঙ্কেল। আমি শুনছি।


কাফকা, মুরাকামি এবং একজন গ্রেগর সামসা

একদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে গ্রেগর সামসা দেখল তার বিছানার পাশে দুজন মানুষ বসে আছে। মানুষ দুজনকে দেখা মাত্রই সে চিনতে পারল। তার বিছানার পাশে সোফায় পাশাপাশি বসে আছে মুরাকামি এবং কাফকা। কাফকা সিগারেট টানছে। মুরাকামি তাকিয়ে আছে সামসার দিকে। দুজনকেই বিষন্ন দেখাচ্ছে। সামসার অবদমিত রাগটা আবার জেগে উঠছে। কারন এ দু’জন মানুষকেই সে ঘৃণা করে। দু’জন মিলে তার বেঁচে থাকা ব্যাপারটাকে মোটামুটি নরকে পরিনত করেছে।একজন তাকে মানুষ থেকে পোকা বানিয়ে ফেলল। আরেকজন হঠাৎ একদিন এসে তাকে পোকা থেকে মানুষ বানিয়ে দিল। গ্রেগর সামসা মানুষই ছিল। কথা নেই বার্তা নেই এই কাফকা লোকটা একদিন তাকে পোকায় রূপান্তরিত করল। আবার সে যখন তার পোকা জীবনে মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে হঠাৎ একদিন সকালে এসে মুরাকামি তাকে মানুষ বানিয়ে দিল। আজ তারা দুজনেই একসাথে এসেছে। সামসার রাগ ভয়ে পরিনত হলো। নিশ্চয় এদের কোন খারাপ উদ্দেশ্য আছে।

আপনারা কেন এসেছেন? তাও আবার দু’জন একসাথে? আপনারা দুজনই ভয়াবহ সাইকোপ্যাথ। আমি আপনাদের ভিক্টিম। এবার আমাকে ছেড়ে দিন। আমি একটু নিজের মত বাঁচার চেষ্টা করি।

আধখাওয়া সিগারেট ফ্লোরে ফেলে পা দিয়ে পিষতে পিষতে কাফকা বলল, আমরা সেজন্যই এসেছি। আসলে মুরাকামি এবং আমি দুজনেই তোমাকে নিয়ে একধরনের অপরাধ বোধে ভুগছি। কি বলেন মুরাকামি সাহেব?

হ্যা। আপনি ঠিকই বলেছেন কাফকা। সামসার সাথে আমরা অন্যায় করেছি। তবে আমার উদ্দেশ্য তা ছিলনা। আমি চেয়েছিলাম সামসা পোকা থেকে মানুষে রূপান্তরিত হোক। প্রেমে পড়ুক। ভালোবাসা উপলব্ধি করুক। কিন্তু এমন এক সময়ে আমি তাকে মানুষে রূপান্তরিত করলাম যখন মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকাটাই এক যন্ত্রণার ব্যাপার। গ্রেগর সামসা আমরা দুজনই তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তুমি অনেক যন্ত্রনার ভেতর দিয়ে গিয়েছ আমাদের দুজনের জন্য। আমরা ঠিক করেছি কিছুটা হলেও তা লাঘব করার চেষ্টা করব। তুমি এখন ঘুমাও। আমরা গেলাম।

গ্রেগর সামসা ঠিক কতক্ষন ঘুমিয়েছে সে জানেনা। একটা দুঃস্বপ্ন দেখতে দেখতে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম থেকে জেগে উঠে সে বুঝতে পারে কোথাও একটা বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে। হঠাৎ করেই প্রচন্ড বিষ্ময়েয় সাথে সে আবিষ্কার করে সে আসলে করোনা ভাইরাসে রূপান্তরিত হয়ে গেছে।

বিঃদ্রঃ কাফকার বিখ্যাত গল্প মেটামরফোসিস। সে গল্পে গ্রেগর সামসা মানুষ থেকে পোকায় রূপান্তরিত হয়। এই গল্পের একটা পাল্টা গল্প লিখেন মুরাকামি। গল্পের নাম সামসা ইন লাভ। সেখানে সামসা পোকা থেকে মানুষে রূপান্তরিত হয়।

ছবি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:৪৪
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×