প্রথমেই আমি বলে নিতে চাই আমি ধর্মীয় চেতনায় উদ্বেলিত হয়ে এই পোস্টটি দিচ্ছিনা। এই পোস্টটির পেছনে আমার একমাত্র প্রেরণা অ্যান্টি-জায়নিস্ট সেন্টিমেন্ট। এখানে লক্ষ্য করবেন আমি কিন্তু অ্যান্টি-ইহুদী সেন্টিমেন্ট শব্দটা প্রয়োগ করছিনা। ইসরায়েলের প্রতি ইংরেজ-মার্কিন সরকারগুলোর সহানুভুতি নতুন কিছু নয়। যদিও পশ্চিমা দেশগুলোর সাধারন জনগনের মধ্যে ইহুদীবিদ্বেশ কম নয়, বরং মুসলমানদের চেয়ে অনেক বেশিই আমি বলবো, তবুও পশ্চিমা মিডিয়ার কল্যাণে মুসলমান-ইহুদি সংঘাতের কথাই এখন বিশ্বে বেশি আলোচিত এবং পঠিত। ইহুদীদের সাথে মুসলমানদের বিবাদ একদম ষষ্ঠ শতক থেকে হয়ে থাকলেও তা মূলত বর্তমানকালের প্রকট আকার ধারন করে চল্লিশের দশকে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন করার পরেই, যার সূচনা হয়েছিল একদমই রাজনৈতিক মতভেদ এবং বিরোধের মাধ্যমে, ধর্মীয় কোন ইস্যুই সেখানে ছিল না। মোজেসের (মুসা নবী) সময়কালের ইহুদীদের সাথে বর্তমানকালের প্যালেস্টাইন ভুখন্ডের প্রাচীন বাসিন্দাদের (তখন যারা ছিল বর্বর, অনুন্নত, অশিক্ষিত, এবং যাদেরকে ফিলিস্টিনস বলে অভিহিত করা হত) বিরোধ একদম বাইবেলীয় সময় থেকে এবং ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের সময় তাদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করার সময় নিয়তিক্রমে তারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী হওয়াতে ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সংঘাত এখন ইহুদি-মুসলমান সংঘাতে রূপ নিয়েছে যার পূর্ণ ফায়দা শুধু পশ্চিমা নয়, মূলত সব মিডিয়াই লুটছে। সংঘাতের মূল ধর্মীয় না, বরং রাজনৈতিক হওয়ার কারনে ইসরাইল-প্যালেস্টিনিয়ান বেশিরভাগ সংঘাতে পূর্বে এবং বিশেষ করে বর্তমানে মূল আরব পেনিনসুলার দেশগুলোকে অত্যন্ত নিরাসক্ত এবং নির্বিকার দেখা যায়, ঠিক যেমনটি তারা বাংলাদেশের মত দরিদ্র মুসলিম দেশগুলোর দুঃখ দুর্দশার প্রতি নির্বিকার। ইসরাইলের প্রতি পররাস্ট্রনীতি ও প্যালেস্টাইনের জনগনের মানবাধিকারকে অগ্রাধিকারের প্রাধান্য নিয়ে মতভেদ, এবং অবশ্যই আরব রাস্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীন বিরোধের সুযোগে মার্কিন-ইসরাইল গ্রুপ একে একে ইসরাইলের প্রতি হুমকি সৃস্টি করতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের এমন সবকটি শক্তিকেই হয় ধ্বংস অথবা নিরস্ত করে ফেলতে সচেষ্ট। এর সবচেয়ে নির্মম শিকার হয়েছে ইরাক। সৌদি আরব বড় রাজনৈতিক শক্তি হওয়াতে তাকেও কৌশলে নিরস্ত করে রেখেছে আমেরিকা। বাকি রইলো কে? ইরান। ইরানীরা জাতিগতভাবে আরব নয়। ইরান আরবদের চেয়ে অনেক বুদ্ধিমান, অনেক কৌশলী, সামরিকভাবে অনেক শক্তিশালী, সম্ভবতঃ পারমানবিক অস্ত্রের অধিকারী, এবং নিজ স্বার্থের ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয় না। স্বভাবতই ইরান মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের শেষ হুমকি। কিন্তু আরবদের যে আভ্যন্তরীন অনৈক্যকে এতদিন কাজে লাগিয়েছে ইসরাইল-আমেরিকা সে দুর্বলতা ইরানের নেই। একারনেই ভিন্ন কৌশলে গিয়েছে এবার ইসরাইল-আমেরিকা চক্র। জাতিসংঘে যেহেতু ইরানের বিরুদ্ধে বিশেষ সুবিধা করতে পারছে না তাই চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে মেধাবী ইরানী গবেষকদের হত্যা করা হচ্ছে (সুত্র: Click This Link)। এছাড়াও মুসলমান দুনিয়াতে ইরানের বিরুদ্ধে ধর্মীয় প্রচারনা চালাচ্ছে এই চক্র। উদ্দেশ্য একটাই, ইরানের প্রতি পৃথিবীব্যপী মুসলমানদের আস্থা বিনষ্ট করা। কিছুদিন আগে সামুতে একটা ব্লগ দেখলাম যেখানে বলা হয়েছে ইরানীরা নাকি কা'বার অনুকরনে একটা সৌধ তৈরী করেছে ২০১০ সাল থেকে মক্কায় না গিয়ে যেটাকে কেন্দ্র করেই তারা হজ্ব পালন করবে। ঐ পোস্টে দেয়া লিন্কে গিয়ে দেখলাম সেটা একদমই অনির্ভরযোগ্য একটা ওয়েবসাইট যেটা আমিও হয়তো একটু চেষ্টা করলেই তৈরী করতে পারবো। আমি ঐ ব্লগে গিয়ে ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন করছেন না কি প্রশ্ন করাতে লেখক (নামটা বলবো না। উহ্য থাকলো) আমাকে গালিগালাজ করে, আমার কমেন্ট টা ডিলিট করে দিয়ে, আমাকে ব্লক করে দিলেন। কারা করতে পারে এধরনের কাজ সেটা কিন্তু চিন্তার দাবীদার। এবং আমি বুঝেছি তারা একাজে কিছুটা সফলও হচ্ছে কারন অনেক ব্লগারকে দেখলাম উত্তেজিত হয়ে ইরানকে, এবং ইরান থেকে শিয়া মুসলমানদেরকেও গালিগালাজ করতে শুরু করেছেন খবরটির সত্যতা যাচাই না করেই। এ পোস্টটার নেট ফল যেটা আমি বুঝলাম সেটা হচ্ছে: ব্লগারদের একটা গ্রুপের কাছে (যারা পোস্টটি পড়ে বিশ্বাস করেছেন) ইরানীরা সহানুভুতি হারিয়েছে। আমি শুধুমাত্র একটা জিনিসে খুব অবাক হয়েছি। সবসময়ই শুনেছি ইসরাইলী চক্রের বিস্তার অনেক ব্যাপক। কিন্তু এই পোস্টটা দেখে আমি সত্যি সত্যিই নিজেকে প্রশ্ন করছি যেখানে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের তেমন কোন ভুমিকাই নেই, সেই বাংলাদেশেও কি ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালাতে সক্ষম? ব্লগার, আপনারাই একটু চিন্তা করে দেখুন। আপনারা অনেক বুদ্ধিমান এবং সচেতন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৮:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



