আমি রাজনৈতিক পোস্ট দেয়াটা অ্যাভয়েড করলেও রাজনৈতিক পোস্টে কমেন্ট করি অনেক। খুব স্বাভাবিকভাবেই জানতাম আজ এবং আগামী বেশ কয়েকদিন বঙ্গবন্ধুর কয়েকজন খুনীদের ফাঁসী কার্যকর করা নিয়ে ব্লগ গরম থাকবে। এটাও জানতাম কেউ এর পক্ষে কথা বলবে, এবং কেউ কেউ একটু ঘুরিয়ে এর বিপক্ষেও কথা বলবে। যাই হোক, পড়ছিলাম, মজা নিচ্ছিলাম, মাঝে মাঝে মেজাজও খারাপ হচ্ছিলো। একটু আগে দেখলাম একজন ব্লগার সরাসরি তাঁর খুনীদের বীরপুরুষ উপাধি দিয়ে বসলেন! এইবার আর পোস্ট না করে পারলাম না। ফারুক-রশীদ গ্যাং যুদ্ধের সাজ সাজ রব করে সদলবলে ৩২ নং ধানমন্ডিতে কয় হাজার সশস্ত্র কমান্ডোর সাথে যুদ্ধ করেছিল তা জানি না, কিন্তু মারা পড়েছিলেন কিছু নিরীহ সিভিলিয়ানই। জাতির পিতা, তার পরিবার, এবং আরো দুঃখজনকভাবে : কয়েকজন শিশু-কিশোর এবং নিরপরাধ নারী। কত বড় কাপুরুষ হলে ট্যাংক, কামান, গোলাবারুদসহ যুদ্ধের সাজ নিয়ে একটা নিরীহ নিরস্ত্র বেসামরিক পরিবারকে হত্যার উদ্দেশ্যে দলবল নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হতে পারে প্রাক্তন মুক্তিযোদ্ধা একদল সেনা অফিসার! এরা মুক্তিযোদ্ধাদের কলঙ্ক, এবং সেনাবাহিনীরও কলঙ্ক। আমরা কোন পশ্চিমা দেশ হলে এই খুনীদের বীরত্বের খেতাবগুলো প্রত্যাহার করে চরম অসন্মানজনক মৃত্যুদন্ড দিতাম অনেক আগেই।
অনেকে মাইনাস দিবে, কেয়ার করি না। অনেকেই বলবে ৭৫ এর ঘটনা অপরিহার্য ছিল। আমি বলবো, ক্ষমতাচ্যুত করতে সপরিবারে হত্যাই একমাত্র উপায় ছিল না। ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত দেশে অনেক অরাজকতা হয়েছে, জানি। সেটা কতটুকু শেখ মুজিবর রহমানের শাসনের অক্ষমতা ছিল, আর কতটুকু নবজাতক যেকোন দেশের জন্য তিক্ত কিন্তু অপরিহার্য্য সূচনা ছিল সে বিচার কে করবে? আর তার চেয়েও বড় কথা, ৭৫ পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত দেশের মানুষ কি এমন স্বর্গে বাস করছে? বরং আমার মতে বঙ্গবন্ধু হত্যার কারনে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে অনেক বেশি নাজেহাল হতে হয়েছে, যেটা উনি বেঁচে থাকলে হয়তো নাও হতে পারতো। ভারতের এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সরকারসমুহের সামনে নিজের এবং দেশের মর্যাদা নিয়ে দাঁড়ানোর মত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কোন নেতা শেখ মুজিবর রহমানের পরে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত জন্ম নেয় নি। বঙ্গবন্ধুর মুখের এক কথায় শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান এবং জেনারেল এরশাদ তো দুরের কথা, ১৫ কোটি মানুষের ভোটে নির্বাচিত বেগম জিয়া এবং শেখ হাসিনার জনগন-স্বীকৃত সরকারসমুহেরও ঐ ধরনের আত্মবিশ্বাস কখোনো ছিল না, নেই, এবং কখোনো হবেও না।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৮:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



