somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইভটিজিং-এর ক্রমবিবর্তন, আমরা, এবং এদেশের ভবিষ্যৎ

০১ লা নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ করে ইভটিজিং জিনিসটা কেমন একটা মহামারীর মত হয়ে দাঁড়ালো দেশে। বিশেষ করে গত কয়েক মাসে ইভটিজিং-এর মাত্রা এবং এর কয়েকটি ভয়াবহ পরিণতি আসলেই চিন্তিত হওয়ার মত। কিন্তু ইভটিজিং কি হঠাৎ করে অন্য কোন জগৎ থেকে আমদানী হওয়া একদম নতুন কিছু? উত্তরটা হচ্ছে; না। এটা সবসময়ই ছিলো। ইভটিজিং এখন যেমন আছে, আমাদের কৈশোরেও ছিলো, ছিলো এমনকি আমাদের বাবা-মায়ের ইয়ং বয়সেও। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যাটা হচ্ছে একটা সময় ইভটিজিং কে মোস্টলি একটা হার্মলেস ফাজলামি বলে চালিয়ে দেয়া যেতো (২-১ টা বড় ইস্যু অকেশনালি হতো না বলবো না), কিন্তু এখন অপরাধের মাত্রার ইভটিজিং অনেক বেড়ে গেছে। পারসোনালি যদি বলি, আমি মোস্টলি ঐ গ্রুপের ছেলে ছিলাম, যারা অভিভাবকদের ডেফিনিশনে "ভালো" এবং "খারাপ" ছেলেদের মাঝখানে পড়ে। আমরা ফাইনাল পরীক্ষার আগের রাতে আল্লাহ আল্লাহ করে কোনমতে পড়ে পাশ করতাম, ভবিষ্যতে ডাক্তার অথবা এঞ্জিনিয়ার হওয়ার দিবাস্বপ্ন দেখতাম, "ভালো" এবং "খারাপ" উভয় গ্রুপের সাথেই খাতির রেখে চলতাম, এবং দরকার হলে মাঝে মধ্যে অন্য এলাকার/স্কুলের ডে-শিফটের সাথে হালকা পাতলা মারপিট করতাম। আমার মনে হয় মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মধ্যে এই দলটারই সংখ্যা বেশি। আর আমার এ ব্লগের সাবজেক্টও তাই মধ্যবিত্ত শ্রেনীর ছেলেমেয়েরা।

বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মানুষের আকর্ষন কোন ট্যাবু নয়। মেয়েরা প্রকৃতিগতভাবে প্যাসিভ হওয়ায় ছেলেদের প্রতি তাদের আকর্ষনের ব্যাপারটা অত খোলামেলা না। কিন্তু ছেলেদের জন্য ব্যাপারটা উল্টো। তারা বিভিন্নভাবে সেটা প্রকাশ করে এবং বিপরীত লিঙ্গের সদস্যদের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারাও সেটা উপভোগ করে। আমি জানি কারন এটা আমার নিজের কৈশোরের অভিজ্ঞতা। লাটিমি অথবা শোয়ার্মা হাউসে খেতে গিয়ে, অথবা বিদ্যাসাগর স্যারের ব্যাচে সমবয়সী সুন্দরীদের সাথে চোখাচোখি, মৃদু হাসি, "হাই" বলা; এগুলো তো আমরা করেছি। এগুলো তো টিজিং-ই। কিন্তু এই টিজিং আমরা করতাম বিপরীতপক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া আসবে এটা নিশ্চিত হওয়ার পরে, আগে না। সহপাঠিনী অথবা সমবয়সী তরুনীদের চোখে বিন্দুমাত্র বিতৃষ্নার ছোঁয়া দেখলে আমরা ফ্লার্ট করার পথে পা-ই মাড়াতাম না। হয়তো আমরা "ভিতু" ছিলাম, হয়তো এখনকার মত "স্মার্ট" ছিলাম না, কিন্তু মেয়েরা আমাদের দেখে কখোনও ভয়ে ঘরে ঢুকে গিয়েছে, বা নিরাপত্তাহীন ফীল করেছে বলে এখন মনে হয় না। এখনকার ছেলেদের ক্ষেত্রেও কি একই কথা বলা যাবে? চান্স খুবই কম!

আমি স্টেরিওটাইপিং করছি না। কিন্ত আমার মনে হয় বর্তমানের উঠতি ছেলেদের মধ্যে ভব্যতা এবং পৌরুষের ঘাটতি হচ্ছে। ডারউইনের থিওরি অনুযায়ী বিবর্তন হয় স্বল্পোন্নত থেকে উন্নততরের দিকে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এটা সম্ভবত পেছন দিকে যাচ্ছে। স্কুলপড়ুয়া কিশোরদের মধ্যে বাল্যপ্রেমজনিত রেশারেশি, সেখান থেকে মারামারি, সেখান থেকে সহপাঠীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা; কিংবা প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারা; কিংবা প্রেমে বাধা পেয়ে ঘরে ঢুকে প্রেমিকার পিতামাতাকে গুলি করে হ্ত্যা করা; এগুলো সবই একটা ভয়ঙ্কর জাতীয় অবক্ষয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এভাবে চললে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কারন থিওরিটিকালি; এদেরই আমাদের দেশের নেত্বৃত্বে থাকার কথা কোন একদিন (!)।

এ সমস্যার মূলে কি? ইন্টারনেট? স্যাটেলাইট টিভি? মোবাইল ফোন? এগুলোর ক্ষতিকর দিক নেই বলবো না। অনেকে আরও বলবে এসব জিনিস উঠতি ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সেক্সুয়াল অ্যারাউসাল সৃষ্টি করছে। তাও মানি। কিন্তু এখন তো ছেলে-মেয়ের মেলামেশার সুযোগও বেড়েছে। বাবা-মা' রা এখন ছেলে বন্ধুদের সাথে মেয়ে আড্ডা মারলে সহজভাবে নেন, কিংবা মেয়ে যোগ্য বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে চাইলে মোটামুটি সহজভাবে মেনে নেন; যেটা ১০-১৫ বছর আগেও এত সহজ ছিলো না। এবং সত্যি কথা বলতে গেলে, সেক্স জিনিসটাও অনেক সহজলভ্য হয়ে গেছে এখনকার ছেলে-মেয়েদের জন্য। বিশ্বাস হচ্ছে না? আশেপাশে পরিচিত ভার্সিটি-পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের একটু খোঁজখবর নিন, যদি সম্ভব হয়। বিশ্বাস হয়ে যাবে। আমরা কিন্তু বিয়ের আগে সেক্সের কথা শুধু স্বপ্নেই চিন্তা করতাম (খুব সৌভাগ্যবান কয়েকজন ছাড়া)। নতুন প্রজন্ম অনেক দিক দিয়েই অনেক বেশি প্রিভিলেজড।

এবং এই জিনিসটাই সব সমস্যার মূলে। অনিয়ন্ত্রিত এবং কর্তব্যবোধহীন প্রিভিলেজ। নতুনরা সবসময়েই পূর্ববর্তীদের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা পায়, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের ভালো-খারাপ, এবং নৈতিক শিক্ষা দেয়ার প্রধান দায়িত্ব বাবা-মা'র। আমার কথা হচ্ছে, তারা কি যথার্থভাবে এই দায়িত্ব পালন করছেন? আমাদের বাবা-মার জন্য সমস্যা বেশি হয়নি, আমাদের বখে যাওয়ার উপকরন তখন খুব বেশি ছিলো না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আগের মত নেই। "বখী"করন উপকরনও অনেক বেশি, সেই সাথে বাবা-মা উভয়ই কর্মজীবি হলে সমস্যা আরও বেড়ে যাচ্ছে। আর অন্যদিকে এখনকার বাবা-মা' রা আগের চেয়ে সন্তানও নিচ্ছেন কম। এই সব ফ্যাক্টরগুলো মিলে এবং যথার্থ নৈতিক শিক্ষার অভাব ছেলে-মেয়েদের করে তুলছে বদমেজাজী, আত্মকেন্দ্রীক, স্বার্থপর, এবং অনেক ক্ষেত্রে মানবতাবোধ-বিবর্জিতও। আর মানবতাবোধের ঘাটতি হওয়ার ফলে দেশে এই ধরনের অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যায়, যেমনটি আমাদের দেশে হচ্ছে।

এখন উপায়? সত্যি কথা বলতে গেলে, উপায় একটাই। এবং সেটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। সেটা হচ্ছে সব ধরনের গনমাধ্যমে মূল্যবোধ, মানবতা, ও নৈতিক শিক্ষা; এবং এগুলোর প্রয়োজনীয়তা চোখের সামনে যথাযতভাবে তুলে ধরতে হবে। ভিসুয়াল প্রোমোশনের বিস্তার এবং প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সরকারের অনেক লিমিটেশনস থাকে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ, খবরের কাগজ, টিভি চ্যানেল, বহুজাতিক কোম্পানী, এবং সেলিব্রিটিরা এক্ষেত্রে বড় ভুমিকা রাখতে পারেন। পশ্চিমা দেশে সেলিব্রিটিদের দিয়ে অনেক বড় বড় সফল সোশাল ক্যাম্পেইন করা হয়। আমাদেরও সময় হয়েছে সেপথে যাওয়ার, কারন ইয়ং জেনারেশন প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এবং এখনই কোন পদক্ষেপ না নিলে অনেক দেরি হয়ে যাবে, আর তার ফলে যে ক্ষতিটা হবে, সেটা হবে অপূরনীয়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০১
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×