বাঙ্গালী বড়ই বেরসিক। সবকিছুতেই খুঁত ধরা তার বড়ই একটা বদঅভ্যাস। কোন কিছুর ভালো দেখার আগে খারাপগুলাই তার চোখে পড়ে। এ নিয়ে যুগে যুগে মনিষীরা কম আক্ষেপ করেন নি।
হরতালের কথাই ধরেন। ডানে বামে যেদিকেই তাকাই না কেন আপনারা সবাই হরতালের বিপক্ষে কথা বলছেন। একটা গঠনমূলক পোস্টও পেলাম না যেখানে হরতালের সপক্ষে কেউ কিছু বলছে।
মানলাম হরতালের কিছু বিধ্বংসী দিক আছে। কিন্তু এর সুবিধাও কি নেই? বরং আমার তো মনে হয় ইতিবাচক দিকগুলোর দিকে তাকালে এর নেতিবাচক দিকগুলোই নগন্য বলে মনে হবে। বিশ্বাস হচ্ছে না? তবে দেখুন:
১। হরতালের দিন অফিসগামী কর্মজীবি মানুষ দুপুর ৩টা-৪টার মধ্যেই কর্মস্থল থেকে সটকে গিয়ে বাসায় ফিরতে সচেস্ট থাকেন। কর্মক্ষেত্রের যাঁতাকলে পিষ্ট আধুনিক শহুরে মানুষ এর মাধ্যমে স্ত্রী-পুত্র-পরিবারের সাথে বাড়তি সময় কাটিয়ে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে সচেষ্ট হওয়ার সুযোগ পান :> :>
২। পিকেটিং এর জন্য ভাড়া করা টোকাই-মোকাইরা এ দিনগুলোতে পায় ক্ষেত্রবিশেষে ৫০-১০০ টাকা রোজগার করার সুযোগ। এটি মানি সার্কুলেশন কিঞ্চিৎ বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ইতিবাচক প্রভাব রাখে
৩। যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত শিশু-কিশোররা এদিন ফাঁকা রাস্তায় নেমে ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি খেলার সুযোগ পায়। কম্পিউটার, পিএস টু, অথবা এক্সবক্স গেমসের বাইরেও যে নিজের হাত পা ব্যবহার করে এগুলো খেলা যায় (যা তারা তাদের বাবা-মায়ের কাছে রূপকথার গল্প মনে করে এতদিন শুনেছে), এটি বিশেষ এ দিনেই তারা বিশ্বাস করতে শেখে। এটি পিতা-মাতার প্রতি তাদের ভক্তি-শ্রদ্ধা এবং আস্থা বাড়ায়
৪। এ দিনে ভিআইপি রোড থেকে শুরু করে ঢাকার তাবৎ রাস্তার বিপুল বিক্রমের সাথে রিক্সায় চড়ে হাওয়া খেয়ে বেড়ানোর সুযোগ পান প্রেমিক-প্রেমিকারা। এটি তাদের রোমান্সের সঠিক রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে অনুঘটক হিসাবে ভুমিকা রাখে :#> :#>
৫। হঠাৎ বিশেষ বিশেষ এলাকায় পিকেটিংরত রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর পুলিশের দাবড়ানি এবং লাঠিচার্জ ক্রমশঃ শরীরচর্চার অভ্যাস বিবর্জিত ঢাকাবাসীকে এনে দেয় ভরদুপুরে প্রধানসড়কে রুদ্ধশ্বাসে জগিং করার দুর্লভ অভিজ্ঞতা
৬। স্কুল-কলেজসহ সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিস্ঠান বন্ধ থাকার কারনে দেশের ছাত্রসমাজ এদিন প্রধানত ডেটিং, আড্ডা, সিনেমা, ঘুমানো ইত্যাদি গঠনমূলক কার্যে মনোনিবেশ করতে পারেন যা জবাকুসুম তেল ছাড়াই তাদের মাথা ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে :> :>
৭। ভাংচুরের ভয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ির অনুপস্থিতির কারনে ঢাকার রাস্তা থাকে যানজট এবং দুষনমূক্ত। এটি "গ্রীন ঢাকা, ক্লীন ঢাকা" ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখে
৮। হরতালের দিন বাড়তি রোজগারের আশায় অন্যান্য পেশার মানুষ টেম্পোরারি রিকশাচালকে পরিনত হয়। এটি দেশের রুট লেভেলে "জব রোটেশন" কনসেপ্টের ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে একাধিক কর্মক্ষেত্রে মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রবনতাকে উৎসাহিত করে
এছাড়াও হরতালের আরো বেশ কিছু ইতিবাচক দিক আছে যা লিপিবদ্ধ করতে গেলে আজকে আমার আর অফিসে কাজ করা হবে না। তাই আপাততঃ ক্ষ্যান্ত দিলাম। এই কয়েকটা পয়েন্টে যদি আপনারা কনভিন্সড না হন তাহলে বাকিগুলা নিয়ে ২য় পর্ব লিখবো
(এই মাসে জোশের ঠ্যালায় অনেক বেশি পোস্ট লিখা ফালাইসি। আবার সামনের মাসে দেখা হবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৮:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



