somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুর্ভাগা দেশ এবং কয়েকজন ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবাল

০৯ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের মত আমি এখন আর ব্লগে পড়ে থাকি না, দিনে দুই একবার এসে চোখ বুলাই। কারণটা যতটা আলসেমি, তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী ইদানিংকালে এখানকার অত্যন্ত নিম্নমানের সাবজেক্ট এবং লেখার আধিক্য। তবে দিন দুয়েক আগে চোখ বুলাতে গিয়েই কয়েকদিন ধরে জাফর ইকবাল স্যারকে নিয়ে যে নোংরামি শুরু হয়েছে সেটা নজরে পড়ল। আর এই নোংরামির মাত্রাটা দেখে মনে হলো এর বিরুদ্ধে যদি কিছু না বলি সেটা এই দেশের জন্য যারা গত ৪০ বছর ধরে বহু ত্যাগ স্বীকার করছেন তাদের প্রতি একটা চরম বেইমানি হবে।

বেশ আগে কোথায় যেন কথাটা শুনেছিলাম “একটা দেশের লেখকসমাজ হচ্ছেন সে দেশের আত্মার মতো।” আমাদের দেশে ভুঁইফোঁড় কবি-সাহিত্যিকের অভাব নেই, যেটার অভাব আছে সেটা হচ্ছে চিন্তাশীল, মেধাবী, এবং দেশের জন্য ভালবাসা আছে এমন বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর। ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবাল এই রেয়ার বাংলাদেশীদের মধ্যে একদম প্রথম সারিতে থাকবেন এমন একজন মানুষ, শিক্ষক, লেখক, গবেষক। এদেশের সবচেয়ে দুঃখজনক দিকটা হচ্ছে আমাদের টোটাল সিস্টেমটা ইচ্ছাকৃতভাবে এমনভাবে সেট করা যে দেশের সবচেয়ে ট্যালেন্টেড এবং মুল্যবান ছেলেমেয়েগুলার সবচেয়ে বড় অংশটা নিজেদের যথাযোগ্য পারিশ্রমিক এবং সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে অবধারিতভাবে বিদেশে পাড়ি জমায়; এবং এদেশে দাপটে রাজত্ব করে ফালতু, বস্তাপচা বাতিল মালগুলা। এর বাইরেও কিছু হতভাগ্য নিরুপায় মানুষ আছেন যারা এই দেশের ওপর এবং এই দেশের সিস্টেমের ওপর ত্যাতঃবিরক্ত হয়ে ডেস্পারেটলি বিদেশে চলে যেতে চাচ্ছেন, কিন্তু বিভিন্ন কারনে পারছেন না। মেধাবী শ্রেণীর মানুসগুলার মধ্যে খুব কমই আছেন যারা বিদেশের ডলার-ইউরো, আরাম আয়েশের মায়া কাটিয়ে দেশের টানে, দেশের জন্য কাজ করতে বউ-বাচ্চা সহ ফিরে আসেন। এই কাজ করতে হলে দেশপ্রেম থাকতে হয়, বাঘের বাচ্চা হতে হয়, চরম ত্যাগ স্বীকার করার মানসিক প্রস্ততি লাগে; এবং এইমাত্র যাদের কথা বললাম, সেই বউ-বাচ্চাদেরও চরম কম্প্রোমাইসিং মেন্টালিটি থাকতে হয়। আমার বহু নিকটাত্মীয় পারেন নি। আমি নিজেও এত বড় স্যাক্রিফাইস করতে পারতাম না, পারবোও না। তাই যারা পারেন, তাদের আমি সবসময়ই স্যালুট জানাবো।

এই দেশের জন্য আমার যতটুকু টান আছে, মায়া আছে; তার একটা বড় অংশ গড়ে উঠেছে ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবাল (এবং তার বড় ভাই হুমায়ুন আহমেদ) এর বিভিন্ন লেখার প্রভাবে। আমার জেনারেশনের বহু ছেলেমেয়ের মতো আমারও শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে উনার লেখা পড়ে। মানুষ হিসাবে আমি যা, তার পেছনে উনার ইনডিরেক্ট যে অবদানটা আছে সেটা আমি কখনোই অস্বীকার করতে পারবো না। ৭১-পরবর্তী মানুষের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যে ভালোবাসা; স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতি যে বিতৃষ্ণামূলক ঘৃণা সেটারও একটা বড় অংশ উনারই গড়ে দেয়া। এদেশ কি সেটা অস্বীকার করতে পারবে?

দেশের ছোট একটা শ্রেণীর ডক্টর জাফর ইকবাল-বিদ্বেষের ঠিক এটাই কারন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে স্বাভাবিক নিয়মে বাঙ্গালি ৭১ সালে এদের কার্যকলাপ ধীরে ধীরে ভুলে যাবে, দেশের মূলধারার সাথে মিশে যাবে এই শ্রেণীটার এই আশাকে চল্লিশ বছর ধরে ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছেন জাহানারা ইমাম, শামসুর রাহমান, হুমায়ুন আজাদ, তারেক মাসুদ, ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবালের মত দেশের শ্রেষ্ঠ মানুষগুলা। আমি শিওর; কোন কিছু পাওয়ার আশায় না, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যেন রাজনীতিবিদরা ইতিহাস বিকৃতির বলি বানাতে না পারে শুধুমাত্র সেই কারনে। কাজেই উনারা যাদের বিরুদ্ধে অলিখিত যুদ্ধ করে চলেছেন এখনও, সেই বাংলাদেশের শত্রুরা উনাদের চরিত্র লঙ্ঘনের বিন্দুমাত্র সুযোগ পেলেই লাফিয়ে উঠবে, এটাই তো স্বাভাবিক।

শেষের কথাটা ডক্টর জাফর ইকবালকে উদ্দেশ্য করে বলবো: এদেশে ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা আপনাকে ঘৃণা করে। তবে এরা টোটাল পপুলেশনের ১% ও না। ৯৯%+ মানুষ ডিরেক্টলি বা ইনডিরেক্টলি আপনাদেরই দেখানো রাস্তাতে চলছে। এখনকার শিক্ষিত যুবসমাজের মানসিকতা গড়ে তোলাতে আপনার কনট্রিবিউশন অসামান্য, এর কৃতজ্ঞতা ভাষায় বোঝানোর না। আপনাকে রিকোয়েস্ট: ফালতু এবং নোংরা কিছু লোকের কথায় দেশের বাকি মানুষের ওপর অভিমান করে দেশ ছেড়ে চলে যাবেন না। আপনারা চলে গেলে এদেশটার আর বলার মত কিছুই থাকবে না। আমাদের কাছে কিন্তু আপনি সবসময় একজন সুপারহিরো হয়েই আছেন! এবং সবসময় থাকবেনও তাই।
১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×