somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"আমি অর্ধকানা আতেল ছেলেটিকেই ভালবাসি "

২০ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঈষিকার বাবা ভার্সিটির কেমেস্ট্রি শিক্ষক। তিনি একজন ঘড়িধরা মানুষ। ঘড়িধরা কারন তিনি তার সব কাজ টাইম টু টাইম করেন। পৃথিবীতে সময় মাপার কোন যন্ত্র না থাকলে এই ভদ্রলোক কি করতেন? নিশ্চয়ই বিকল্প কিছুর ব্যাবস্থা করতেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাশতার টেবিলে বড় এককাপ চা খেয়ে তিনি পত্রিকা হাতে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসেন। এজন্যে বাড়িতে দুইটি পত্রিকা রাখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। গাড়িতে তিনি পত্রিকার এপাশ ওপাশ বিরক্তি নিয়ে দেখেন। তারপরে ক্লাস শেষে বাসায় এসে খেয়ে কিছুক্ষন নিউজ চ্যানেল দেখেন। তারপরে চুপচাপ ঘুমাতে চলে যান। সপ্তাহে একদিন তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন, সবাই বলতে ঈষিকা, তার মা জানু বেগম এবং বাবা আশিকুর রহমান। মাঝে মাঝে ঈষিকার হাসি পায় এই ভেবে যে তার বাবার নাম আশিক এবং মায়ের নাম জানু, কিন্তু বাস্তব এবং সত্যি হচ্ছে তাদের মাঝে প্রেম ভালোবাসার ছিটে ফোঁটাও লক্ষ্য করা যায় না।


ঈষিকা এবছর ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। ছাত্রী হিসেবে যে খুব ভালো তা নয়, তবে খুব চঞ্চল। সে যখন ইচ্ছে করবে বৃষ্টিতে ভিজবে অথবা রিকশায় করে রাত পর্যন্ত ঘুরবে। ইদানিং নিজের উপরে খুব বিরক্ত কারন সে বুঝতে পারছে যে সে প্রেমে পড়েছে। প্রেমের যেসকল উপসর্গ রয়েছে তার প্রত্যেকটি তার মাঝে বিদ্যমান। সে রাতে ঘুমাতে পারে না, কিছু খেতে পারেনা, অন্যমনস্ক হয়ে একা একা হাসে, সারাদিন খুব অস্থির বোধ করে। ঈষিকা মনে প্রানে চাইছে এই প্রেম রোগ থেকে নিস্তার পেতে কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠছে না।


ঈষিকা যে ছেলেটির প্রেমে পড়েছে সেই ছেলে অর্ধকানা একজন আঁতেল। কিছুদিন থেকে এই আঁতেল তাদের কোচিংয়ে বায়োলজি ক্লাস নিচ্ছে। ছেলেদের সুন্দর হতে নেই, কিন্তু এই ছেলে সব সূত্র অমান্য করে অত্যাধিক সুন্দর এবং লাজুক। চোখ দুটি দেখলে মনে হয় যেন কাজল দিয়েছে চোখে। -৩.৫০ চশমার কারনে তাকে অর্ধকানা বলা যায়। বোর্ডে লেখার ফাঁকে যখন চশমা হাতে নিয়ে তাকায়, তখন ক্লাসের সব মেয়ে হা করে তাকিয়ে থাকে, যেন শুভ্রই তাদের বায়োলজির মূল বিষয়।


কোচিং সেন্টারের প্রধান রহমত আলী স্যার একদিন হঠাত এসে ক্লাসের মাঝে বললেন, শোন আম্মুরা, কাল থেকে তোমাদের নতুন একজন বায়োলজি টিচার ক্লাসে আসবেন। তিনি টিচার না তবে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রানিবিদ্যায় পড়াশোনা করে এসেছেন। তার ইচ্ছে কোন ভার্সিটিতে জয়েন করার, কিন্তু তার আগে তিনি কিছুদিন আমাদের এখানে শিক্ষকতা করে প্রাকটিস করতে চাইছেন। আমি আশা করবো তোমরা আমার মান রাখবে।
ঠিক তার পরের দিন ক্লাসে শুভ্রকে ঢুকতে দেখে ঈষিকা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,”এই ছেলে, এটা মেয়েদের ক্লাস, তুমি এখানে কি চাও?” প্রথমে শুভ্র হকচকিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,”ম্যাম ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, আমি আপনাদের নতুন বায়োলজি টিচার।“ ক্লাসশুদ্ধ মেয়েরা হেসে ফেললো। ঈষিকা অপ্রস্তুত হয়ে স্যরি বলে তার চেয়ারে যেয়ে বসলো। শুভ্র পড়াতে শুরু করলো হিউম্যান বডির সাথে নার্ভের কানেকশন। ঈষিকার ইচ্ছে করছিল এই ব্যাটার কলারে ধরে বলে,”তুই ব্যাটা দেখতে ইনোসেন্ট বাচ্চাদের মত, তোরে যে বলি নাই বয়রা দিয়া ক্লাস থেকে বের করে দেব এইটাই কি যথেষ্ট না?”


রাত তিনটা বেজে গেছে। ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েও ঘুমাতে পারছে না ও। বার বার ভাবছে শুভ্র স্যারকে একটা ফোন করলে কেমন হয়? প্রথম দিনে ক্লাসে তিনি নিজের ফোন নাম্বার লিখে দিয়েছিলেন। অন্য মেয়েরা নিশ্চয়ই ফোন করছে এই ভেবে ঈষিকার কান্না পাচ্ছে। আবার সে ভাবছে তার কান্না পাচ্ছে কেন? সে তো নিজেকে সবার থেকে আলাদা ভাবে। বারে বারে অর্ধকানা আঁতেল শুভ্রকে নিয়ে সে কল্পনায় ডুবে যাচ্ছে আবার বাস্তবে এসে ভাবছে এটা অপরাধ। আবার ভাবছে অপরাধ হবে কেন? কাউকে নিয়ে ভাবার অধিকার তার আছে। আশ্চর্যের হলেও সত্যি যে শুভ্রকে নিয়ে তার ভাবতে ভালো লাগছে। কিন্তু ঈষিকা চাচ্ছে না কারন সে নিজেকে সবার থেকে আলাদা ভাবে। ক্লাসের সব মেয়ে যেখানে শুভ্রের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে সেখানে ঈষিকা কেন সবার মত হতে যাবে? দড়জায় নক করার শব্দে ঈষিকা চমকে উঠলো। ভাঙ্গা স্বরে বললো,”কে?”
“ঈষিকা আমি”
“আম্মু এতরাতে তুমি? বাবার সাথে ঝগড়া করেছ? ভেতরে আসো”
“আমি বুঝি ঝগড়া করেই তোর কাছে আসি? তোকে দেখতে এলাম”
“তোমার দেখা শেষ হয়েছে?”
“রাগ করছিস কেন? এতরাতে তোর ঘরে বাতি জ্বলছে, তাই ভাবলাম একবার দেখে আসি। তুই কি কোন কারনে টেনশন করছিস?”
“না আম্মু, তুমি কি আর কিছু বলবে?”
“তুই দিনে দিনে অনেক বেশী সুন্দরী হয়ে যাচ্ছিস, মেয়েরা সুন্দর হলে বাবা মায়ের চিন্তার শেষ থাকে না।“
“আচ্ছা, চিন্তা করার জন্য অনেক সময় আছে, এখন বাতি নিবিয়ে তুমি যাও, আমি ঘুমাব।“


বাতি নিবিয়ে চলে গেলেন জানু বেগম। ঈষিকার সত্যিই ভালো লাগছে মায়ের কথায়। সে নিজেও দীর্ঘসময় আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে। বাড়াবাড়ি রকমের সুন্দর হচ্ছে সে। মাঝে মাঝে রাগ হয় কারন তার এই সৌন্দর্য কেন শুভ্র স্যারের চোখে পড়ে না? সে কেন এসে বলে না ঈষিকা চলো তোমাকে নিয়ে কোথাও যেয়ে কিছুক্ষন বসে থাকি। যদি কখনো এমন হয়। শুভ্র স্যার সত্যিই এসে বলেন, “ঈষিকা আজ তোমাকে দেখতে অপ্সরীদের মত লাগছে। এসো হাত ধরে দুজনে গল্প করি।“ ঈষিকার চোখ জলে ভিয়ে গেছে। এতটুক কথা ভাবতেই এত আনন্দ, কাঁদতেও তার ভালো লাগছে।


ক্লাসে শুভ্র পড়াতে ঢুকলে ঈষিকা তাকিয়ে থাকে। তার শরীর অবস হয়ে যায়। একদৃষ্টে শুধু মানুষটার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে ছুঁয়ে আদর করে দিতে। মনে হয় অনন্তকাল এভাবে তাকিয়ে সে পার করে দিতে পারবে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। অন্যরকম এক অনুভূতির জগতে সে ভেসে বাড়ায়। যখন দেখা যায় শুভ্র তাকে বলছে,”মিস ঈষিকা, ধমনী হিউম্যান বডিতে কি কি কাজ করে বলুন তো।“ ঈষিকা হা করে তাকিয়ে আছে শুভ্রের দিকে আর ক্লাসের সবাই শব্দ করে হাসছে। কিছু না বুঝে শুভ্রও হাসছে। ঈষিকা ভাবে মানুষের হাসি এত পবিত্র হয়?


একবার শুভ্রর সিজন চেঞ্জে ফিবার হয়ে গেলো। একসপ্তাহ ক্লাসে আসতে পারেনি। ঈষিকা বারে বারে টিচার্স রুমে উকি দিয়েছে। ক্লাস শেষ হওয়ার পরেও ক্লাসে বসে থেকেছে যদি শুভ্র স্যারকে দেখা যায়। অনেকবার ভেবেছে ফোন করবে, কিন্তু সাহস পায়নি। প্রেমে পড়লে মানুষ খুব সাহসী হয় কিন্তু প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার কাছে গেলে সব সাহস হারিয়ে ফেলে। সারা রাত কেঁদেছে ঈষিকা। পরে যখন জানতে পারলো শুভ্র স্যারের জ্বর করেছে, সেও রাতের বেলায় দুই ঘণ্টা শাওয়ারে ভিজে জ্বর বাঁধিয়েছে। লুকিয়ে শুভ্র স্যারের কিছু ছবি সে মোবাইলে তুলেছে। জ্বরের মাঝে একা একা সেই ছবির সাথে কথা বলে সে। ঈষিকা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবে সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? নাকি সব মেয়ের এমন হয়?


ঈষিকার ফাইনাল এক্সামের আগে শুভ্র স্যার ক্লাসে আসা বন্ধ করে দেন। মনে মনে খুব বেশী অস্থির হয়ে পরে সে। পড়তে বসলে দুশ্চিন্তায় মাথা ধরে যায়। বিছানায় উপুর হয়ে কাঁদে সে। চিৎকার করে শুভ্রকে ডাকতে ইচ্ছে করে। ভেতরে ভেতরে বোবা আর্তনাদ চলতে থাকে। কোচিং থেকে জানানো হয় শুভ্র আর ক্লাসে আসবে না। ঈষিকা শুভ্র স্যারের ফোনে ট্রাই করে বারে বারে কিন্তু নাম্বার চেঞ্জ করা হয়েছে। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে চোখের নীচে দাগ পরে যায়। সারাদিন দরজা আটকে ঘরে পড়ে থাকে। ঈষিকার মা জানু বেগমও একসময় মেয়ের এমন ব্যাবহারে অস্থির হয়ে পরেন। কিন্তু ঈষিকা কারো সাথে কিছু শেয়ার করেনি। এভাবেই ইন্টারমেডিয়েট এক্সাম দেয় ঈষিকা।


ছয় মাস পরে ভার্সিটিতে প্রানিবিদ্যায় ক্লাস শুরু করে সে। তার আশা ছিল কোনদিন যদি শুভ্র এসে ক্লাস নেয়। কিন্তু তেমন আর হয়নি। সে শুভ্রর অনেক খোঁজ করেছে কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি। কোচিং থেকে যে এড্রেস দেয়া হয়েছিল সে বাসাও ছেরে গেছে সে। কোথায় গেছে কেউ জানে না।


দুইবছর পরে হঠাত একদিন একটি ক্লাসের সামনে যেয়ে থমকে দাঁড়ায় ঈষিকা। শুভ্রর মত কেউ একজন ক্লাস নিচ্ছে। সেই চোখ, সেই চুল, সেই চশমা। ক্লাসের মাঝে চশমা খুলে তাকাচ্ছে। সেই মায়াকাড়া হাসি আর এলোমেলো চুল। নিথর হয়ে যায় ঈষিকা। ক্লাসের ছাত্ররা দেখছে একটি মেয়ে দড়জায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে।


ভালোবাসা এবং কিছু আবেগের গল্পে প্রথম প্রকাশ।
৭২টি মন্তব্য ৭০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×