২য় খন্ড
১ম খন্ড
আচ্ছা বোঝা গেলো। কিন্তু তারপরও অনেক রোমান্টিক সম্পর্ক বছরের পর বছর টিকে থাকে কী করে? এদের সংখ্যাতো কম নয়। তাহলে কি আরো কোন রাসায়নিক আছে যা প্রেমের সম্পর্ককে প্রলম্বিত করতে পারে? থাকবেনা আবার! এরা হলো এন্ডোমরফিন (Endomorphines), আফিমজাতীয় জৈবরাসায়নিক যৌগ যা সঙ্গীর ক্রমাগত উপস্থিতিতে মস্তিষ্কের পিটুইটারী গ্ল্যান্ড আর হাইপোথ্যালামাসে ধারাবাহিকভাবে উৎপন্ন হতে থাকে। উত্তেজক অ্যাম্ফেটামিনের চেয়ে এদের প্রকৃতি ভিন্ন। এরা বরং উত্তেজনাকে প্রশমিত করে বিশেষ একধরনের সুখানুভূতি সৃষ্টি করে। ঘনিষ্ঠ আকর্ষণকে ত্বরান্বিত ও দীর্ঘায়িত করে। প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রীর মনে নিরাপত্তা, শান্তি আর সুস্থিতি এনে দেয়। এজন্যই সম্ভবত কেউ তার প্রেমাস্পদকে হারালে অথবা প্রেমাস্পদ মারা গেলে সে ভীত হয়ে পড়ে। একধরনের ভীতি তাকে গ্রাস করে ফেলে। এ এমন এক বেদনা যা শুধু অনুভব করা যায়, প্রকাশ করা যায়না।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোস্তত্ববিদ ড. মার্ক গোলস্টন প্রেম বা ভালোবাসাকে সাজিয়েছেন দুটো শ্রেণীতে- Early love বা প্রাথমিক ভালোবাসা আর Matured love বা স্থিত ভালোবাসা। প্রাথমিক ভালোবাসা হলো অনেকটা যাকে বলে প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ার অনুভূতি; আর স্থিত ভালোবাসা হচ্ছে সেই ভালোবাসা- একজন যেভাবেই থাকুকনা কেন তার জন্য অন্যজনের প্রাণে আকুলতার সৃষ্টি হয়। বোঝাই যাচ্ছে দুটোর মাঝে তফাৎটা কোথায়, তবু ড. গোলস্টনের কাছ থেকেই জেনে নিন, “The difference between these two is that the first one is concerned with sudden emotion and the second one with attraction occurred by affection and kindness. Both are important, but the second one is obviously more preferable, desirable and beneficial.”
অতি সংক্ষেপে এই হচ্ছে ভালোবাসা, প্রাণরসায়নের দৃষ্টিতে। কিন্তু এই দৃষ্টিপাতের মধ্যে দিয়েই কি ভালোবাসার স্বরূপ সন্ধান শেষ হয়ে যাবে? এইটুকুন ব্যাখ্যাতেই কি পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারছি আমরা? নাহ। ভালোবাসার কনসেপ্টটি এত ব্যাপক, এত গভীর, এত বহুমুখী যে তাকে কিছুতেই কোন একক সংজ্ঞার আওতায় ফেলা যায়না। চলছে তাই বিজ্ঞানীদের নিরন্তর গবেষণা আর উপভোগ্য বিতর্ক। ভালোবাসার এই ব্যবচ্ছেদ কার্যক্রমে শীঘ্রই হয়তো আরো নতুন নতুন মাত্রা যোগ হবে। আমরাও হয়তো ভালোবাসাকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে শিখবো। কিন্তু তারপর কি আমাদের কাছে একে পানসে বলে মনে হবে? ভালোবাসা তার কিংবদন্তীতুল্য রহস্যের পাত্রটির ঢাকনা আমাদের কাছে কখনো পুরোপুরি উন্মোচন করবে বলে মনে হয়না। ভালোবাসা তো আসলে মন আর শরীর, কল্পনা আর বাস্তবতা, কবিতা আর হরমোন সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়া এক যৌগিক অস্তিত্ব। বস্তুবাদ আর ভাববাদের মাঝখানের একমাত্র সীমারেখাটিই তো ভালোবাসা। ভালোবাসা হলো ‘Ninotchka’ ছবিতে মেলভিন ডগলাসকে বলা গ্রেটা গার্বোর-র সেই কালজয়ী সংলাপ, “Love is a romantic designation for some most ordinary biochemical processes, about which a lot of nonsense is talked, sung and written.”
তথ্যসূত্র :
• “Anatomy of Love” by Helen E. Fisher, Published by Simon & Schuster Ltd, January 1993
• “The 6 Secrets of a Lasting Relationship” by Mark Goulston & Philip Goldberg, Published by Penguin Group (USA), April 2002
• http://www.findarticles.com
• http://www.helenfisher.com
• http://www.newscientist.com
• দৈনিক জনকন্ঠ পাক্ষিক ম্যাগাজিন ২২ ফেব্রুয়ারি- ৬ মার্চ ২০০৪
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ১১:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




