somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার প্রাণরসায়ন ৩ (শেষ খন্ড)

০৩ রা মার্চ, ২০০৮ রাত ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২য় খন্ড
১ম খন্ড

আচ্ছা বোঝা গেলো। কিন্তু তারপরও অনেক রোমান্টিক সম্পর্ক বছরের পর বছর টিকে থাকে কী করে? এদের সংখ্যাতো কম নয়। তাহলে কি আরো কোন রাসায়নিক আছে যা প্রেমের সম্পর্ককে প্রলম্বিত করতে পারে? থাকবেনা আবার! এরা হলো এন্ডোমরফিন (Endomorphines), আফিমজাতীয় জৈবরাসায়নিক যৌগ যা সঙ্গীর ক্রমাগত উপস্থিতিতে মস্তিষ্কের পিটুইটারী গ্ল্যান্ড আর হাইপোথ্যালামাসে ধারাবাহিকভাবে উৎপন্ন হতে থাকে। উত্তেজক অ্যাম্ফেটামিনের চেয়ে এদের প্রকৃতি ভিন্ন। এরা বরং উত্তেজনাকে প্রশমিত করে বিশেষ একধরনের সুখানুভূতি সৃষ্টি করে। ঘনিষ্ঠ আকর্ষণকে ত্বরান্বিত ও দীর্ঘায়িত করে। প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রীর মনে নিরাপত্তা, শান্তি আর সুস্থিতি এনে দেয়। এজন্যই সম্ভবত কেউ তার প্রেমাস্পদকে হারালে অথবা প্রেমাস্পদ মারা গেলে সে ভীত হয়ে পড়ে। একধরনের ভীতি তাকে গ্রাস করে ফেলে। এ এমন এক বেদনা যা শুধু অনুভব করা যায়, প্রকাশ করা যায়না।

লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোস্তত্ববিদ ড. মার্ক গোলস্টন প্রেম বা ভালোবাসাকে সাজিয়েছেন দুটো শ্রেণীতে- Early love বা প্রাথমিক ভালোবাসা আর Matured love বা স্থিত ভালোবাসা। প্রাথমিক ভালোবাসা হলো অনেকটা যাকে বলে প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ার অনুভূতি; আর স্থিত ভালোবাসা হচ্ছে সেই ভালোবাসা- একজন যেভাবেই থাকুকনা কেন তার জন্য অন্যজনের প্রাণে আকুলতার সৃষ্টি হয়। বোঝাই যাচ্ছে দুটোর মাঝে তফাৎটা কোথায়, তবু ড. গোলস্টনের কাছ থেকেই জেনে নিন, “The difference between these two is that the first one is concerned with sudden emotion and the second one with attraction occurred by affection and kindness. Both are important, but the second one is obviously more preferable, desirable and beneficial.”

অতি সংক্ষেপে এই হচ্ছে ভালোবাসা, প্রাণরসায়নের দৃষ্টিতে। কিন্তু এই দৃষ্টিপাতের মধ্যে দিয়েই কি ভালোবাসার স্বরূপ সন্ধান শেষ হয়ে যাবে? এইটুকুন ব্যাখ্যাতেই কি পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারছি আমরা? নাহ। ভালোবাসার কনসেপ্টটি এত ব্যাপক, এত গভীর, এত বহুমুখী যে তাকে কিছুতেই কোন একক সংজ্ঞার আওতায় ফেলা যায়না। চলছে তাই বিজ্ঞানীদের নিরন্তর গবেষণা আর উপভোগ্য বিতর্ক। ভালোবাসার এই ব্যবচ্ছেদ কার্যক্রমে শীঘ্রই হয়তো আরো নতুন নতুন মাত্রা যোগ হবে। আমরাও হয়তো ভালোবাসাকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে শিখবো। কিন্তু তারপর কি আমাদের কাছে একে পানসে বলে মনে হবে? ভালোবাসা তার কিংবদন্তীতুল্য রহস্যের পাত্রটির ঢাকনা আমাদের কাছে কখনো পুরোপুরি উন্মোচন করবে বলে মনে হয়না। ভালোবাসা তো আসলে মন আর শরীর, কল্পনা আর বাস্তবতা, কবিতা আর হরমোন সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়া এক যৌগিক অস্তিত্ব। বস্তুবাদ আর ভাববাদের মাঝখানের একমাত্র সীমারেখাটিই তো ভালোবাসা। ভালোবাসা হলো ‘Ninotchka’ ছবিতে মেলভিন ডগলাসকে বলা গ্রেটা গার্বোর-র সেই কালজয়ী সংলাপ, “Love is a romantic designation for some most ordinary biochemical processes, about which a lot of nonsense is talked, sung and written.”


তথ্যসূত্র :

• “Anatomy of Love” by Helen E. Fisher, Published by Simon & Schuster Ltd, January 1993
• “The 6 Secrets of a Lasting Relationship” by Mark Goulston & Philip Goldberg, Published by Penguin Group (USA), April 2002
http://www.findarticles.com
http://www.helenfisher.com
http://www.newscientist.com
• দৈনিক জনকন্ঠ পাক্ষিক ম্যাগাজিন ২২ ফেব্রুয়ারি- ৬ মার্চ ২০০৪
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ১১:০৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×