somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা একঘেঁয়ে ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা

০৮ ই মার্চ, ২০১০ রাত ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল রাতে তিনটায় আমার গাড়ীর ভিতর তিনটা ভূত বসে ছিলো । না, না, চমকে উঠার কিছু নেই - খুবই ফ্রেন্ডলী ভূত।
রাত তিনটায় হাইওয়ের উপরে তিক্ত ঘোলা কুয়াশায় আমি যখন দুনিয়াটাকেই "মাদারচোদ" বলে গালি দিয়ে উঠছিলাম তখনই ভূত বাবাজীদের আগমন । গাড়ীময় পোড়া সিগারেট/গাঁজার গন্ধ । ভূতের গন্ধ এমন অদ্ভুত হয় নাকি ?
আপনারা নিশ্চয়ই ভূত দেখতে কেমন এটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে গেছেন ? আপনাদের কৌতুহল নিরসন করার জন্য বলছি -- ভূত দেখতে ভূতের মতো -- মানে ক্যামন যেনো আবছায়া ঘোলাটে । তাছাড়া ভূত দেখতে কেমন সেটা চিন্তা করলে ভূত দেখে ভয় পাওয়ার ব্যাপার চলে আসে। আমি তখন ডোন্ট কেয়ার মুডে গিয়ার তুলে দিয়েছি । অন্য যেকোন দিন হলে নিশ্চয় পেটের ভিতর ডাক শুরু হয়ে যেতো -- আমি হলাম যে কিনা ভূতের সিনেমা দেখে ভয় পায় ।
যাক -- রাত তিনটায় কোন ট্রাফিক নেই , আমি তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন । এখানে ব্যাপারটা কেমন উল্টা হয়ে গেছে ওরাই আমার অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন না ।
আমার ঠিক পিছনের ভূতটা অন্যদের উদ্দেশ্যে বললো,
"এখন যে গাড়ী চলছে সেটাই সত্যি"।
আমার পাশেরটা- "গতকাল সে খুব খুশীমনে গাড়ী চালাচ্ছিল।"
তার পিছনের জন - "অনেকেই আগামীকাল গাড়ী চালাবে।"

আমি মনে মনে বিরক্ত আর কিঞ্চিত কৌতুহলী, এই নিঃসঙ্গ রাতে কারো সঙ্গ মন্দ লাগছে না -- হোক না ভূত ।
আমি আলোচনায় যোগ দিলাম ব্যংগভরে "এই কথা গুলো প্রথম শুনলাম!? খুবই ইন্টারেষ্টিং।" আমার খোঁচায় ভূতেদের কোন প্রতিক্রিয়া হলো না । আপনারাই বলুন ভূত উদয় হয়ে ভয় দেখানোর বদলে বস্তাপঁচা তামাশার কথা বললে মেজাজটা খিচে যায় না?
ভূত গুলো হঠাৎ ফিসফিসে করে ভূতের ভাষায় আলাপ জুড়ে দিলো।। আমি দুঃখিত, আমি সেই ভাষা জানি না। তবে সেগুলো আমার এ্যাটিটুড সংক্রান্ত বলেই মনে হচ্ছিলো।

আমি রাস্তার দিকে মন তাকালাম । দুরে দুরে কুয়াশার দেয়াল । সত্যি বলতে একটা ভুতূরে রাত। গাড়ীর হেডলাইটের আলো ছাড়া তেমন কোন আলো নাই । ছিটেফোটা কিছু মনুষ্যসৃষ্ট আলো চোখে পড়ছে । নখ তোলা বিকৃতদেহী ডাইনীর মতো গাছ গুলো । আমার মনে মধ্যে এই অশরীরি রাতেও ফাজিল গান বাজতে থাকে -"ভূতের রাজা দিলো বর, জবর জবর তিন বর।" খোড়া ভূত,কানা ভূত,পঁচা ভূত ইত্যাদি রকম ভূতের চেহারা মনে পড়ে।
আমার পাশের ভূতটা বিড়বিড়ানী থামিয়ে বলল "ও যদি গতকালকে গাড়ী না চালাতো তবে আজকে ওর এইখানে গাড়ী চালানোর কথা ছিলো না"
আমার পিছনেরটা বলল "এখন এই ঠান্ডা রাতে গাড়ীর চালাতে চালাতে চাঁদের আলো খেতে দারুন লাগে"
আমি জিজ্ঞেস করলাম - "চাঁদের আলো খেতে ক্যামন?"
জবাব এলো -রক্তের সাথে ঠান্ডা দুধ মিশিয়ে খেলে যেমন লাগে!
মাই গড ! কি আজীব রেসিপি।
বাকী ভূতটা বল্লো "গাড়ী চলতে চলতে কালো কুয়াশার ভিতর হারিয়ে যাবার সম্ভবনা আছে"
আমি এইধরনের আলাপে আর উৎসাহ না দেখিয়ে সরাসরি আক্রমন নেমে পড়লাম "তোমরা কি চাও"
পিছনেরটা বল্লো "তুমি এখন ঠিক মতো গাড়ী চালাও এটাই আমি চাই "
পাশেরটা বল্লো "তুমি একদিন একজনকে চাপা দিয়ে পালিয়েছ, আবার একটা লোককে এ্যাক্সিডেন্ট হবার পর হাসপাতালে পৌছে দিয়েছিলে ।
তুমি আগে সবসময়ই সুখী অথবা দুঃখী অবস্থায় গাড়ী চালিয়েছ"
ভূতের গুপ্তজ্ঞানে আমি চমকিত হলেও শেষের এ্যাবসার্ড লাইনে হাসি পেলো এতো মেজাজ খারাপের মাঝেও।
আমি তো সুখী না হয় দুঃখীই ছিলাম এরজন্য সাইকিক/ভূত হতে হয় না তো।
আমার কোনার দিকের পিছনেরটা বল্লো - "আগামীকাল গাড়ী চালানোটা একঘেঁয়ে ব্যাপার"

একঘেঁয়ে শব্দটা গাড়ীর ভিতর ঘুরতে শুরু করে। এটা যেমন কটু শ্বাসরোধী একটা গন্ধে পরিনত হয়ে আমার মগজে লাথি মারতে থাকে । আমি ক্ষিপ্ত হয়ে যাই -- অনেক দিনের জমে থাকা ক্ষোভে ভূতেদের চৌদ্দগুষ্ঠি তুলে গালিপালাজ শাপশাপান্ত দিতে থাকি । গাড়ীটা যে একটা খোলা উঁচু ব্রীজের উপর চলছে এটা হঠাৎ খেয়াল হয়। আমি কেন বাড়ী থেকে বের হয়েছি মনে পরে তখন। আমি গাড়ীটাকে ব্রীজের রেলিং এর উপর তুলে দেই । পতনের সময়ের কয়েকসেকেন্ডে নিজেকে আমার মুক্ত স্বাধীন মনে হয় ।

ঐ কয়েক মুহূর্তে আমি মনে করার চেষ্টা করি আমি কেন আত্মহত্যা করতে এসেছিলাম। সেটা কি দিনের পর দিন বোর হওয়া? নাকি কাউকে সবকিছু দিয়ে বিশ্বাস করে ঠকা? জগৎসংসারে কেয়ার করার মতো মানুষের অভাব ? সাফল্য ব্যর্থতার দুইটার স্বাদ এইরাতের মতো তিক্ত হয়ে যাওয়া ?
আমি মনে করতে পারি না

--------------------------------------------------------------------

ঠ্যাংনোট :
এই লেখাটা একটু পুরানো । কেউ আগে পড়ে থাকলে ক্ষমা চাইছি ।

আসলে বহু দিন পর কারাগার থেকে বের হবার আনন্দে আমি আত্মহারা !

পুরাই জেলমুক্তি দিবসের মতো আনন্দ লাগছে ।
তাই বন্ধুর অনুরোধে পোষ্টাইলাম ।

যারা ব্যান খাওয়া অল্প হৈলেও কষ্ট পাইছেন তাদের জন্য অনেক ভালোবাসা ।
আর যারা খুশী হৈসিলেন -- তাদের জন্য -- তাদের মনেহয় আবার খুশী হবার চান্স নাই !

ঠ্যাংনোট ২: প্রোপিক ও চেন্জ করে দিলাম !!
আমি আর মডারেশনে স্বচ্ছতা চাই না ।
!!!মডারেশন স্বচ্ছতা একটা ভ্রান্ত ধারমা !!!
সামু জোড়া পচুর গ্যান্জাম!

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১০ রাত ২:৪৫
৬৫টি মন্তব্য ৬৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×