somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্দর মায়াবি গ্রাম কালীগঙ্গা কন্যা পারিল!

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৯ নভেম্বর ২০১৮, শুক্রবার। সেদিন ছিল বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আলোর ইশকুল ফটোগ্রাফি কোর্সের ৫ম আবর্তনের ফাইনাল আউটিং। আমাদের আউটিং ছিল মানিকগঞ্জ জেলার শিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে পারিল গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৩৭ কিলোমিটার। আমরা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে সকাল সাতটায় রওনা হই। যারা কেন্দ্রে আসতে পারেনি, নিজেদের সুবিধা মতো সকাল আটটার মধ্যে সবাই হেমায়েতপুর বাস স্টপিজে উপস্থিত হয়।

আমরা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করলেও কারো কোনো সমস্যা হয়নি। আটটার মধ্যে আমরা দলে দলে হেমায়েতপুর বাস স্টপিজে মিলিত হলাম। সেখানে সকালের নাস্তা খেয়ে টেম্পুতে করে পারিল গ্রামে যাত্রা। প্রতি টেম্পুতে আমরা পাঁচ জন করে ছিলাম। সকাল সোয়া দশটার মধ্যে আমরা পারিল গ্রামে পৌঁছাই।

হেমন্তের গ্রামীণ কুয়াশা তখনো একটু একটু মায়ার রহস্যে মিটমিট করছে। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল জহির মঞ্জিল। মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার এক নিভৃত পল্লী এই পারিল গ্রাম। এই পারিল গ্রামের দুই কৃতী সন্তান মুক্তিযুদ্ধের চিত্রধারক ও আলোকচিত্রী নাইব উদ্দিন আহমেদ ও বিশিষ্ট উদ্ভিদবিজ্ঞানী, প্রকৃতিপ্রেমী ও আলোকচিত্রী ডক্টর নওয়াজেশ আহমেদ। এই দুই কৃতী সন্তানের পৈত্রিক বাড়ি হলো জহির মঞ্জিল।

সম্ভবত ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে নওয়াজেশ আহমেদ ও ডিসেম্বর মাসে নাইব উদ্দিন আহমেদ পার্থিব জীবনের মায়া ত্যাগ করেন। পারিল গ্রামের এই প্রয়াত দুই কৃতি সন্তানের পৈত্রিক ভিটায় বাংলাদেশের বহু বিখ্যাত মানুষের পদধুলি পড়েছে। জহির মঞ্জিলের সেই বিখ্যাত বাড়ির ছোট্ট সবুজ ঘাষের লনে আমরা গ্রুপ ছবি তুলি। সেখানে নাফিস নাদভী ভাইকে পেয়ে আমাদের আনন্দ আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

সব মিলিয়ে আমরা প্রায় পঞ্চাশ জনের দল। বাবু ভাই, জাহাঙ্গীর ভাই ও সুমন ভাই আমাদের গাইড করেছেন। গ্রুপ ছবি তোলা শেষে আমরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে পারিল বাজার, পারিল গ্রাম, বল্লধারা গ্রাম ও তার আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাই। জহির মঞ্জিলেই আমাদের দুপুরের খাবারের জাকজমক আয়োজন। সবাইকে বলা হলো দেড়টার মধ্যে ফিরে আসতে।

রাজধানী ঢাকার এতো কাছেই যে এমন সুন্দর গ্রাম থাকতে পারে, এ আমাদের কল্পনাকেও হার মেনেছে। গ্রামের সহজ সরল মানুষের সাথে আমরা কথা বলেছি, তাদের ছবি তুলেছি, তাদের জীবনযাপন পর্যবেক্ষণ করেছি। সে ছিল সত্যি সত্যিই এক মধুর ঘটনা। ছবি তুলতে কারো কোনো আপত্তি আমাদের নজরে আসেনি। বরং তাদের ক্যামেরা প্রীতি সত্যিই মনে রাখার মতো।

আমরা মাঠে, ঘাটে, হাটে, বাড়িতে ইচ্ছে মতো ঘুরে ঘুরে ছবি তুলেছি। গ্রামের সবাই আমাদের খুব আপন করে নিয়েছেন। এই বিষয়টি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে। এই মানিকগঞ্জেই বাংলা চলচ্চিত্রের জনক হিরালাল সেনের বাড়ি। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের বাড়ি। যদিও হিরালাল সেন বা তাঁর ভাই মতিলাল সেনের বাড়ি বগজুড়ি গ্রাম এখান থেকে একটু দূরে। তাই ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও আমরা যেতে পারিনি। অন্য কোনো সময়ে যাবার ইচ্ছা রইলো।

মানিকগঞ্জের অনেক গ্রামেই বিখ্যাত অনেক চলচ্চিত্রের শ্যুটিং হয়েছে। খুবই সুন্দর লোকেশান বলেই আমাদের অগ্রজ মহান চলচ্চিত্র নির্মাতারা বারবার মানিকগঞ্জের বিভিন্ন পল্লীতে সিনেমার শ্যুটিং করেছেন। এই কারণেই হয়তো এখানকার মানুষজন ক্যামেরার প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমাদেরকে খুব আপন করে নিয়েছেন।

এখানে রয়েছে শতবর্ষী বটগাছ, চারশো বছরের পুরনো মন্দির, আর আছে নয়ন জুড়ানো নদী। পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও ইছামতী এই পাঁচ নদীকে পাওয়া যায় মানিকগঞ্জ জেলায়। আমরা যে পারিল গ্রামে গিয়েছিলাম, তার খুব কাছেই দক্ষিণে কালীগঙ্গা নদী। আমরা অবশ্য সময়াভাবে নদীর কাছে যেতে পারিনি। কিন্তু কালীগঙ্গা থেকে উঠে আসা জলপ্রবাহ যেসব খাল আমাদের চোখে পড়েছে, তার ছবি তুলতে ভুলিনি।

রাজধানী ঢাকার খুব নিকটবর্তী জেলা হলেও মানিকগঞ্জের গ্রামীণ উন্নয়ন খুব একটা হয়নি। যদিও গ্রামের ভেতরে অনেকদূর পর্যন্ত পাকা রাস্তা হয়েছে। ইলেকট্রিসিটি গেছে অনেক জায়গায়, কিন্তু গ্রামীণ যে পরিবেশ, সেই আবহ এখনো বিরজমান। প্রচুর পরিমাণে ইটভাটা দেখে নগর সভ্যতার আগ্রাসনকে বারবার ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করেছে।

ইটভাটায় যে পরিমাণ বায়ুদূষণ হয় এবং পরিবেশের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা হয়তো গ্রামের এই সহজ-সরল মানুষেরা একদম বুঝতে পারেন না। কিন্তু নগরায়নের এই আগ্রাসন পারিল ও বল্লধারা গ্রামে আমাদের চোখে পড়েছে। এই গ্রামে এখনো শিল্পায়ন ঘটেনি। গ্রামের মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি।

খেটেখাওয়া মানুষগুলো আমাদের ভূমিপুত্র-ভূমিকন্যা। আমরা মূলত সেসব ভূমিপুত্র ও ভূমিকন্যাদের ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছিলাম এই গ্রামে এসে। মাঠে আমরা নারী-পুরুষ সবাইকে একসাথে কৃষিকাজ করতে দেখেছি। একদিনের জন্য আমরা যেনো আমাদের গ্রামীণ শৈশবে ফিরে গিয়েছিলাম। আর দলবেধে গিয়েছিলাম বলে দিনটি আমার কাছে একটি বিশেষ স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে।

দুপুরে জহির মঞ্জিলে ভুড়িভোজ দিয়ে আমরা আবার ছবি তুলতে বেড়িয়ে যাই। সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমরা ছবি তুলতে পেরেছিলাম। সন্ধ্যায় আবার জহির মঞ্জিলে সবাই একত্রিত হবার পর কিছুক্ষণ আড্ডা হয়। তারপর আবার রাজধানীর কোলাহলমুখর ঢাকায় ফেরা। যদি আপনি একটা দিন নৈঃশব্দের সাথে কাটাতে চান, নিশ্চিন্তে চলে যেতে পারেন পারিল গ্রামে। আমি নিশ্চিত আপনার ভালো লাগবে।

নাফিজ নাদভী ভাইয়ের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। এতবড় একটি দলকে সারাদিন সঙ্গ দেবার জন্য। আমাদের ভুড়িভোজের সুন্দর আয়োজনের জন্য। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞ এমন একটি সুন্দর আয়োজনের জন্য। বিশেষ করে সুমন ভাই, জাহাঙ্গীর ভাই ও বাবু ভাইকে স্পেশাল শুভেচ্ছা।

--------------------
১৫ নভেম্বর ২০১৮

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৫৭
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×