ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রশাসন ব্যর্থ মানে সোজা কথায় সরকার ব্যর্থ। এরকম সমাবেশ যদি আজ ঢাকায় হতো, আর সেটি যদি সরকারের বিরুদ্ধে হতো, সরকার সর্বস্ব দিয়ে সেই সমাবেশ প্রতিরোধ করতো। তার মানে কী দাঁড়ালো? সরকার ইচ্ছা করেই এই সমাবেশে বাধা দেয় নাই। এটা সরকারের বিরুদ্ধে হলে অটোমেটিক বাধা দেওয়া হতো। এটাই সূত্র।
এই সরকারই একটা ধর্মান্ধ সরকার। আপনি মানেন আর না মানেন, এই সরকারই এসব ধর্মান্ধতা লালন-পালন করে। ধর্মের সাথে রাজনীতি গুলিয়ে মানুষের সাথে তামাশা করা হচ্ছে। সারা দেশ লকডাউনের মানেটা কী? তাহলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এত মানুষ গেল কীভাবে? কাদের চোখের সামনে থেকে এত মানুষ জড়ো হতে পারলো?
ধর্ম করোনার চেয়েও বড় ভাইরাস। করোনা হয়তো একদিন গোটা বিশ্ব থেকে বিদায় নেবে কিন্তু ধর্মের ভাইরাস কোনোদিনও বিদায় নেবে না। কারণ সরকারই এই ভাইরাসের প্রতিপালক। সারাদেশে প্রতিটি উপজেলায় মডেল মসজিদ বানানোর নামে ধর্মের ভাইরাস কারা লালন পালন করছে? ওই টাকায় সারা দেশে কতগুলো হাসপাতাল বানানো যেত?
সমস্যা তো শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় না। সারাদেশেই এই ভাইরাস ছেয়ে গেছে। গোটা দেশকে এত ধর্মান্ধ কারা বানালো? সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এটা বানানো হয়েছে। স্কুল কলেজের পাঠ্যবইয়ে কারা ধর্মান্ধ বিষয়গুলো ঢুকিয়েছে? কারা এসব দেখেও না দেখার ভান করেছে? প্রশ্ন করুন, নিজেই জবাব পেয়ে যাবেন।
বলুন তো করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার শুরু থেকেই 'ধরি মাছ না ছুই পানি' নীতি কেন গ্রহণ করেছে? কারণ পরে এরা বলবে উন্নত দেশগুলো পারলো না, আমরা তবুও আপ্রাণ চেষ্টা করেছি! এগুলো বলার জন্য তাদের স্ক্রিপ্ট লেখাও হয়ে গেছে। সরকারি অবহেলায় দেশে করোনা ভাইরাস ঢুকেছে। আপনি মানেন আর না মানেন সরকারই ভাইরাস ঢুকিয়েছে।
কারণ এখন পর্যন্ত সরকারি ভাষ্যে সাধারণ ছুটি বলা হয়। সাধারণ ছুটি আর লকডাউন কী এক জিনিস হলো? জনগণ যদি লকডাউন না বোঝে তাহলে কার্ফু দিতে সমস্যা কোথায়? সন্ধ্যা ৬ থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত রাস্তায় বের হওয়া যাবে না। বাকি ১২ ঘণ্টা বের হওয়া যাবে, এটা কোন ধরনের ফাজলামি?
খেয়াল করুন হাতে তিন মাস সময় ছিল, তখন সরকারের পাণ্ডা মন্ত্রীগুলো মিডিয়ায় গলাবাজি করছে যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে বলে। তারপর গোটা স্বাস্থ্য খাতের ভঙ্গুর দশা প্রকাশ পেয়েছে। উন্নয়নের নামে চুরিচামারি লুটপাট করা আর দেশের সত্যিকার উন্নয়ন করা তো রাত দিন পার্থক্য। গলাবাজির সকল ভণ্ডামি এতদিনে ধরা খেয়েছে।
এখনো একটা শেষ সুযোগ আছে, গোটা ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। সরকার সেই চেষ্টাও করবে না এটা প্রায় নিশ্চিত। কারণ সরকারের মধ্যে সেই সদিচ্ছা নাই। সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে রাস্তায় সেনাবাহিনী থাকলেও কোনো লাভ হবে না। কারণ নির্দেশনা না থাকলে কিচ্ছু হবে না।
আপনি নিশ্চিত থাকুন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার মত আরো অনেক ঘটনা এদেশে কয়েকদিন পরপর ঘটবে। এটা চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়। কারণ সরকার ভিতরে ভিতরে তাই চাচ্ছে। দোষ যাতে শেষপর্যন্ত জনগণের ঘাড়ে চাপানো যায়, এটা সেই কৌশলের অংশ। সরকার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য ব্যস্ত। অন্য কোনো বিষয় নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নাই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মত ঘটনা কয়েকদিন পরেই হাটহাজারিতে ঘটবে। চাঁদপুরে ঘটবে। শরিয়তপুরে ঘটবে। নোয়াখালীতে ঘটবে। পাবনায় ঘটবে। গোপালগঞ্জে ঘটবে। ঘটতেই থাকবে। আপনি নিশ্চিত থাকুন। কারণ সরকার তাই চাচ্ছে। জনতাকে দোষ দিয়ে সরকার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবে। এটাই সরকারি কৌশল। আপনি মানেন আর না মানেন, মুড়ি খান!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২২