somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শিবের গীত গাওয়া বন্ধ হোক!

২০ শে মে, ২০২০ বিকাল ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার এক অভিনব উপায় বের করেছে। তারা এখন ধুয়া তুলেছে যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে ধূমপায়ীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি! এই কারণ দেখিয়ে মহামারীকালে দেশে তামাক উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন সাময়িকভাবে বন্ধ করতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে।

অথচ এটা সম্পূর্ণ একটা মিথ্যা কথা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যায় বরং ধূমপায়ীদের আক্রান্ত হবার এবং মৃত্যুবরণ করার সংখ্যা খুবই কম। আমি নিজে অনেক বিশেষজ্ঞ রিপোর্ট পড়েছি, যেখানে ধূমপায়ীদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হবার কারণে তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

তারা ধারণা করছেন যে, যারা ধূমপায়ী, তাদের শরীরে করোনা ভাইরাসকে মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট অ্যান্টিবডি কাজ করছে। নিকোটিন এই প্রতিরোধে শক্তি যোগাচ্ছে বলে তারা অনুমান করছেন। সারা বিশ্বেই ধূমপায়ীদের করোনায় আক্রান্ত হবার সংখ্যা এবং মৃত্যুবরণের সংখ্যা সামান্য।

৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে প্রতিবছর তামাকজাত পণ্যের উপর এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আদায় করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য কাজ করে। এটা তাদের একটা রুটিন ওয়ার্ক। দেশের কিছু এনজিও ও কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসব কাজ করে। আমি নিজেও তিন বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই কাজ করেছি। ধূমপান নিরুৎসাহিত করার এই কাজ করার সময় আমি নিজে কখনোই ধূমপান ত্যাগ করি নাই। এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারাও জানতো। এটা এক ধরনের শুভংকরের ফাঁকি।

ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, এসব প্রচারণার ফলে প্রতি বছর ধূমপায়ীদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়। এটা এক ধরনের নেগেটিভ প্রচারণা। তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানো এবং বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার একটা কৌশল মাত্র। ধূমপায়ীদের নিয়ে হাজারো সতর্কবাণী থাকলেও সাধারণ মৃত্যুহার, ক্যান্সারে মৃত্যুহার, করোনায় মৃত্যুহারে ধূমপায়ীর সংখ্যা তুলনামূলক কম।

সংখ্যা বিচার এবং বাস্তবতা হলো, এক ধরনের মানুষ না জেনেই ধূমপায়ীদের উপর সারা বছর রুষ্ট থাকে। আমার দেখা কোনো ধূমপায়ী পরিচিত মানুষ আজ পর্যন্ত ক্যান্সারে মারা যায় নাই। অথচ জীবনেও সিগারেট খায়নি এমন বেশ কয়েকজন পরিচিত কাছের মানুষ ক্যান্সারে মারা গেছে। ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন পরিচিত যে কয়েকজনের কথা জানি, তারা প্রায় সবাই ধূমপায়ী। অথচ ধূমপায়ী না কিন্তু করোনা ভাইরাসে মারা গেছে এমন খবরও জানি।

মনে রাখতে হবে আমাদের কৃষকদের প্রৃায় শতকরা ৯৫ ভাগ ধূমপায়ী। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ধূমপান না করলেও পান-সুপারি এবং জর্দা খায়। অর্থ্যাৎ তামাকজাত পণ্যের উপর নির্ভরশীল। তামাকজাত পণ্য সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করলে আমাদের কৃষকদের উপর বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে। মানসিক এই প্রভাব কাটিয়ে ওঠা বরং করোনা ভাইরাসের চেয়েও ভয়ংকর।

করোনা ভাইরাসের দোহাই দিয়ে দেশে তামাকজাত পণ্য সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করার পায়তারা একটি অশুভ ও অসৎ উদ্দেশ্য। দেশের কৃষক মরলে তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হবে। তাহলেই দেশে একটি দুর্ভিক্ষ লাগানো খুব সহজ হবে। এজন্য দেশের কৃষকদের টার্গেট করা হয়েছে। তামাকজাত পণ্য টার্গেট করা মানে দেশের কৃষকদের টার্গেট করা। আমরা যারা শহুরে ধূমপায়ী আমরা হয়তো এটা সাময়িকভাবে কাটিয়ে উঠতে পারবো। কিন্তু দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ কৃষকের কথা ভেবে এই অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করলে সেটা হবে দেশের কৃষকদের জন্য মরার উপর খড়ার ঘা।

তামাকজাত পণ্য সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করলে ধূমপায়ীদের মানসিকভাবে যে নির্যাতন করা হবে, তা করোনা ভাইরাসের চেয়েও কয়েক হাজার গুণ বেশি ক্ষতিকর। মনোবিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, করোনা ভাইরাসে বিজয়ী হবার একমাত্র কৌশল মানসিকভাবে দৃঢ় থাকা। অথচ ধূমপায়ীদের মানসিক অবস্থাকে ক্ষতি করার জন্য এটা একটা অসৎ ও অশুভ পায়তারা। মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতি হলে যে কোনো মানুষ এমনিতেই টুপ করে মরে যেতে পারে।

প্রতি বছর ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসকে ঘিরে একশ্রেণির অসৎ ফরিয়া এবং দালালদের তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানো এবং বিপুল পরিমাণ কর আদায়ের এই কৌশলকে আমি তীব্রভাবে ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কৃষক ফসল উৎপাদন না করলে আপনি কী খেয়ে বাঁচবেন? ধূমপান কৃষকের একটি চিরায়ত অভ্যাস। সেই চিরায়ত অভ্যাসে যে বা যারা প্রতিবন্ধক, তারা সবাই আমার-আপনার-দেশের শত্রু।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে এখন শিবের গীত গেয়ে মানুষের নজর অন্যদিকে দিতেই এই কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। আশা করি সরকার কৃষকদের কথা মাথায় রেখেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকবে। নইলে দেশের কৃষকদের মানসিক পীড়ার কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ লেগে যাবে! সরকার বাহাদুরের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। সমাজে ধূমপায়ী এবং অধূমপায়ী সবারই সমান বসবাসের সুযোগ আছে। কাউকে নিচু শ্রেণিতে মূল্যায়ন করার অর্থ হলো সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করা। আশা করি সরকার বাহাদুর এই অশুভ উদ্যোগের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০২০ বিকাল ৫:৪৫
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×