হুজুর পাক (দ.) ঘোষণা করেন; আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন মৃত্যু সৃষ্টি করে শত আবরণের মাঝে অদৃশ্য রাখেন। নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল অপেক্ষা বিশালাকার করে তার আকৃতি দিয়ে ৭০টি শিকল দিয়ে রূদ্ধ করে রাখেন। প্রতিটি শৃঙখল প্রায় সহস্র বছরের রাস্তার সমপরিমান দীর্ঘ। ফেরেশতারা পাশ দিয়ে অনেক সময় চলাল করলেও তার অস্তিত্ব সম্বন্ধে উদাসীন ছিলেন।তবে তারা চুতুর্দিক থেকে বিকট বিভীষীকাময় চিৎকার শুনতে পেতেনে।প্রথম মানব হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করে আল্লাহ তায়ালা যখন হযরত আযরাইল আলাইহি সালামকে জীবকুলের প্রাণ সংহারের কাজে নিযুক্ত করেন, তখন তিনি আরয করলেন প্রভু! মৃত্যু কী?
আল্লাহ পাক তখন শত আবরণ উন্মুক্ত করেন এবং ফেরেশতাকূলকে মৃত্যুর দিকে দৃষ্টি ফিরাতে বলেন।সকলে মৃত্যুকে দেখার জন্য দাঁড়ালে আল্লাহ পাক মৃত্যুকে বললেন-
তোমার সকল ডানা মেলে এদের উপর উড়ে বেড়াও এবং তোমার সকল চোখ খুলে এদের দিকে তাকাও।
আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী মৃত্যু যখন তার সমস্ত ডানা মেলে ও চোখ খুলে তাদের উপর দিয়ে উড়তে আরম্ব করল, তখন ফেরেশতাগণ সেই ভয়ানক আকৃতি দেখে অচেতন হয়ে পড়লেন।
হাজার বছর পর চেতনা লাভ করে তারা আরজ করলেন হে প্রভু! আপনি এর চেয়েও ভয়ানক কিছু সৃষ্টি করেছেন কি?
আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন বললেন; এটা আমারই সৃষ্টি; স্বয়ং আমি চেয়েও (দেখেও) সুমহান গেরবান্বিত।
অত:পর আল্লাহ তায়ালা হযরত আযরাইল (আ.) কে বললেন; প্রাণিকুলের প্রাণ সংহার করার জন্য তোমাকে নিযুক্ত করলাম।
হযরত আযরাইল (আ.) আরজ করলেন হে আল্লাহ ! এ তো আমার পক্ষে অসম্ভব । কারণ, মৃত্যু আমার চেয়েও অধিক শক্তিশালী।
তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে অধিক শক্তিশালী বানিয়ে মৃত্যুকে তার (আযরাইল আ.) নিয়ন্ত্রণাধীন করে দেন।
অত:পর মৃত্যু আরজ করল হে আল্লাহ “একবার আমাকে উচ্চস্বরে কিছু বলার অনুমতি দিন।”
আল্লাহ অনুমতি দিলে মৃত্যু উচ্চস্বরে বলল হে প্রাণিকুল! আমি সেই মৃত্যু, যে বন্ধু -বান্ধব, পিতা-মাতা, ভাই-বোন,স্বামী-স্ত্রীর মাছে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে থাকি; ঘর-বাড়ী,ইমরাত বিরান করে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করি।
মানুষের অন্তিম মুহূর্ত ঘনিয়ে এল মৃত্যু বিকট মূর্তি ধারন করে হাজির হয়।
মৃত্যুপথযাত্রী সেই বিকট আকৃতি দেখে বলে কে তুমি কী চাও?
জবাবে মৃত্যু বলে, আমি মৃত্যু! আমি তোমাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করব; তোমার সন্তানদের অনাথ ইয়াতিম করবো! তোমার স্ত্রীকে বিধবা করবো। তোমার নেক আমল আজ তোমার সঙ্গী। তাছাড়া আর কোন কিছুই তোমার উপকার করতে পারবে না। একথা শুনে সে ব্যক্তি অন্যত্র মুখ ফিরিয়ে নিবে, কিন্তু সেদিকেও মৃত্যুকে দেখতে পাবে।
তা দেখে বলবে ওহে! তুমি কি ভুলে গেছ, আমি মৃত্যু; যে তোমার কাছ থেকে তোমার পিতা-মাতাকে কেড়ে নিয়েছি, তুমি তাদের কোনভাবেই ধরে রাখতে পারোনি। পুন:রায় আজ আমি তোমার রূহ তোমার সন্তানদের সামনে থেকে ছিনিয়ে নেব। তারাও তোমাকে কোনভাবে ধরে রাখতে সক্ষম হবে না।অত্যন্ত শক্তিশালী জাতিও আমার হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
.
সূত্র: ইমাম গাজ্জালী(রহ), সৃষ্টির রহস্য ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:৫৪