ম্যারাডোনা। এই একজনই পেরেছে গোটা বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকদের সমর্থন বিভক্ত করতে। বাংলাদেশের ফুটবল ফ্যান বলতেই বুঝায় ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা। এর বাইরেও ইতালি, জার্মানি, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশের সমর্থক রয়েছে তবেমূলসমর্থন মানুষজন দেয় ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনাকেই। ব্রাজিলকে কিন্তু সমর্থন করে গোটা দল হিসেবে। সেখানে নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়ের ভূমিকার চাইতে গোটা দলের দৃষ্টিনন্দন খেলার জন্যই সমর্থন পায়।
গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আজ বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার যারা সমর্থক তাদের বেশীরভাগই কিন্তু আর্জেন্টিনার দলকে দেখে সমর্থন করেনা। তারা ঐ একজন ম্যারাডোনার জন্যই দলটিকে সমর্থন করে। গোটা বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার বিপুল সংখ্যক ফ্যান তৈরী করতে একমাত্র এই ম্যারাডোনাই পেরেছে। সেই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে।
টিভিতে সরাসরি তার খেলা আমি অনেকবার দেখেছি, দেখেছি তার শ্রেষ্ঠত্ব। ১৯৯০ এর বিশ্বকাপে ফাইনালে হেরে গিয়ে তাকে শিশুদের মতো কাঁদতে দেখেছি, দেখেছি ১৯৯৪ সনে গ্রীসের বিরুদ্ধে দূর্দান্ত একটি গোল দেওয়া।
'৮৬ বিশ্বকাপ দেখা হয়নি তবে তার নৈপুনতা ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা পরিবারের বড়দের কাছ থেকে শুনেছি। পরবর্তিতে সেসব খেলার ভিডিও দেখার সৌভাগ্য হয়েছে হাজারো বার। আর এখনকার সময়তো ই্উটিউবের কল্যানে যখন তখনই ম্যারাডোনার ভিডিও দেখা যায়।
তার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু এটাইতো বাস্তবতা। তবে নিজেকে সৌভাগ্যমান মনে হয় যখন ভাবি আমরা সেইসব জেনারেশনের মধ্যে একটি জেনারেশন যারা ম্যারাডোনার মতো একজন প্লেয়ারের খেলা দেখতে পেরেছিলাম। এখনকার ২০--২২ বয়সের তরুনরা যেরকম মেসি রোনালদোর খেলা দেখে বেড়ে উঠেছে ঠিক আমরাও ঐ ম্যারাডোনার খেলা দেখে বেড়ে উঠেছি। হয়তো ঐ সময় ফেসবুক, ই্উটিউব ছিলনা, না থেকেই সে যেরকম পপুলার হয়েছে সোশাল মিডিয়া থাকলে কি হতো তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সে মনে প্রাণে তার প্রিয় দল আর্জেন্টিনাকে ভালোবাসতো আর তাই বিশ্বকাপে দলের খেলা হলেই সে উপস্থিত থাকতো স্টেডিয়ামে
অন্ধ ভক্তের মতো সমর্থন দিতো তার দলকে। সে দেখতে চেয়েছিল আরেকটিবার তার দেশ বিশ্বকাপ জিতুক। তার সেই আশাটি হয়তো পূর্ণ হয়নি তবে ম্যারাডোনাকে স্মরণে রেখে আর্জেন্টিনা দল আরেকটি বিশ্বকাপ শিরোপা জিতুক সেই আকাঙ্খাটাই যেনো আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের মধ্যে থাকে।
আজকের ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের আমাদেরই বলতে হবে "এক সময় দূর্দান্ত এক ফুটবলার ছিল যার খেলা দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল আর সে ছিল ম্যারাডোনা"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১৪