somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তানজীর আহমেদ সিয়াম
সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি কোন ব্লগার নই মন চায় তাই লিখি তথ্য-উপাত্ত সবার সাথে শেয়ার করি ।nজব এর পাশাপাশি এয়ার টিকেট ও ট্রাভেল ভিসার ব্যাবসা করি ।nধন্যবাদn

তারাবির নামাজ, হাদিসের আলোকে

২৭ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তারাবির নামাজ সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন ও মুসলিম উম্মাহর অবিচ্ছিন্ন কর্মধারা হল তারাবির ২০ রাকাত নামাজ।

তারাবি সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস সমূহ থেকে কিছু সহিহ হাদিস দলিল এখানে উপস্থাপন করা হল--

১ নং দলিল : ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম (রহ.) এর উস্তাদ ইমাম আবু বকর ইবনে শায়বা (রহ.) বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবি এবং বিতর পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ২/ ৩৯৪, হাদিস নং ৭৬৯০; সুনানে কুবরা ২/৪৯৮; মুজামে কাবির ১১/৩৯৬; আল-মুনতাখাব হাদিস নং ৬৫৩; মুজামে আওসাত ১/৪৪৪, হাদিস নং ৮০৭।)
২ নং দলিল : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার সুন্নতকে এবং সৎপথ প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতকে মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৬০৭; সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৬৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ১৬৬৯২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪২; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৫; মেশকাত ১/২৯)

সহিহ সনদে প্রমাণিত যে, খুলাফায়ে রাশেদীন বিশ রাকাত তারাবি পড়তেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহ.) বলেন- বিশ রাকাত তারাবি খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতের দ্বারা প্রমাণিত। (মাজামুউল ফাতাওয়া ২৩/১১৩)

৩ নং দলিল : রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের নিয়ে মাত্র তিন দিন জামাতের সাথে তারাবি আদায় করার পর ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জামাতের সাথে তারাবি পড়া ছেড়ে দিলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর বাকী জীবনে, আবু বকর (রা.) এর খিলাফতকালে এবং উমর (রা.) এর খিলাফতের প্রথম দিকে এ অবস্থাই বিদ্যমান ছিল। (সহিহ বুখারি ১/২৬৯, সহিহ মুসলিম ১/২৫৯; সুনানে আবু দাউদ ১/১৯৫)

রমজান মাসের কোন এক রাতে (১৪ হিজরীতে) হযরত উমর (রা.) মসজিদে নববিতে গেলেন এবং দেখতে পেলেন যে, মসজিদের বিভিন্নস্থানে ছোট ছোট জামাত হচ্ছে। তিনি ভাবলেন সকল নামাজিকে এক ইমামের পিছনে একত্র করে দেওয়া উচিত। তখন তিনি জামাতে তারাবি পড়ার নির্দেশ জারি করেন এবং হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.) কে ইমাম বানিয়ে দেন। আর তিনি সাহাবিদেরকে নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি পড়াতে লাগলেন। (সহিহ বুখারি হাদিস নং ২০১০; সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং ১৩৭১; ইলাউস সুনান ৭/৬১)

৪ নং দলিল : ইমাম বায়হাকী (রহ.) বর্ণনা করেন, ‘বিখ্যাত সাহাবি সায়েব ইবনে ইয়াযিদ (রা.) বলেন, আমরা হযরত উমর রা. এর যুগে বিশ রাকাত তারাবি এবং বিতর পড়তাম।’

হাদিসটি সহিহ। সহিহ হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হাফেযুল হাদিস ইমাম নববি, ইমাম ওলিউদ্দীন ইরাকি, ইমাম তাকীউদ্দন সুবকি, ইমাম আইনি, ইমাম সুয়ূতি, ইমাম কাসতালানি, ইমাম যায়লায়ি প্রমুখ হাদিস বিশেষজ্ঞগণ। (উমদাতুল কারি শরহে সহিহ বুখারি ৭/১৭৮; ইরশাদুস সারি শরহে সহিহ বুখারি ৪/৫৭৮; মারেফাতুস সুনান ২/৩০৫; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ১/২৬৭; আল-মাজমু শরহুল মুহাযযাব ৩/৫২৭; তুহফাতুল আখইয়ার ১০৮)

৫ নং দলিল : হযরত উসমান (রা.) এর খিলাফতকালে বিশ রাকাত তারাবি পড়া হত। হযরত ইয়াযিদ ইবনে খুসাইফা রহ. থেকে বর্ণিত, প্রখ্যাত সাহাবি সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রা. বলেন, হযরত উমর রা. এর যুগে তারা (সাহাবায়ে কেরাম) বিশ রাকাত তারাবি পড়তেন এবং শতাধিক আয়াত বিশিষ্ট সূরা সমূহ পড়তেন। আর হযরত উসমান রা. এর যুগে দীর্ঘ দন্ডায়মান থাকার কারণে তারা লাঠিতে ভর দিতেন। হাদিসটি সহিহ। যেসকল হাদিস বিশেষজ্ঞগণ হাদিসটিকে সহিহ হিসেবে অভিহিত করেছেন তারা হলেন- হাফেজুল হাদিস ইমাম নিমাভি, ইমাম নববি, ইমাম সুবকি, ইমাম যায়লায়ি, প্রমূখ মুহাদ্দিসগণ। (সুনানে কুবরা, বায়হাকি ২/৪৯৬; আসারুস সুনান ২/৪৭৩, হাদিস নং ৭৭৭; আত-তালীকুল হাসান ২/৫৪; নাসবুর রায়াহ ২/১৫১; ইলাউস সুনান ৭/৬৯) উল্লিখিত হাদিসটি স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে যে, তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান রা. এর খিলাফতকালেও বিশ রাকাত তারাবি পড়া হত।

৬ নং দলিল: হযরত আলী (রা.) তার খেলাফতকালে বিশ রাকাত তারাবি পড়ার আদেশ দিয়েছেন। প্রখ্যাত তাবেয়ি আবু আব্দুর রহমান বলেন, ‘হযরত আলী (রা.) রমজান মাসে বিজ্ঞ কারীদেরকে ডাকলেন এবং তাদের একজনকে আদেশ দিলেন, যেন তিনি লোকদেরকে নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি পড়েন।’ হাদিসটি হাসান এবং সহিহ।

৭ নং দলিল : পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘যারা আনসার ও মুহাজির সাহাবিদের অনুসরণ করে আল্লাহতায়ালা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত’। (সুরা তাওবা, আয়াত- ১০০-১০১)
আর সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, আনসার ও মুহাজির সাহাবায়ে কেরাম বিশ রাকাত তারাবি পড়তেন। (সুনানে আবু দাউদ ১/২০২; মাজমুউল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৩/১১২-১১৩; ইলাউস সুনান ৭/৬১)

৮ নং দলিল : ‘সকল সাহাবি জান্নাতি, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। তাদের আমল ও আদর্শের অনুসরণে আখেরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভ।’ (সুরা হাদীদ, আয়াত ১০; সূরা আম্বিয়া, আয়াত ১০২; সুনানে তিরমিযি, মেশকাত ২/৫৫৪; তাফসিরে মারেফুল কুরআন ১২৭৫ পৃ:) মসজিদে নববিতে ১৪ হিজরিতে হযরত উমর (রা.) এর নির্দেশে বিখ্যাত সাহাবি উবাই ইবনে কা’ব (রা.) সাহাবিদেরকে নিয়ে জামাতে বিশ রাকাত তারাবি পড়া আরম্ভ করেন। আর এর উপর সাহাবিদের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়। (আত-তামহীদ ৮/১০৮-১০৯)

এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে তাইমিয়া ও হাফেযুল হাদিস ইবনে আব্দুল বার (রহ.) বলেন, ‘হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.) রমজান মাসে সাহাবিদেরকে নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। এতে কোন একজন সাহাবিও দ্বিমত পোষণ করেননি। (আল-ইস্তিযকার ৫/১৫৭; মাজমুউল ফাতাওয়া ২৩/১১২-১১৩; সুনানে তিরমিযী ১/১৬৬)

৯ নং দলিল : ‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ইবনে আবী মুলাইকা আমাদের কে নিয়ে রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবি পড়তেন।’ হাদিসটি সহিহ। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ২/৩৯৩; আসারুস সুনান ২/২৫৩, হাদিস নং ৭৮৪; আওজাযুল মাসালেক ২/৩০৫)

১০ নং দলিল : হাফেজুল হাদিস ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) সহিহ সনদে বর্ণনা করেন যে, রমজানের প্রথম রাত যখন আগমন করত তখন ইমাম বুখারি র. এর নিকটে তার ছাত্র ও ভক্তবৃন্দরা একত্রিত হত। তিনি তাদেরকে নিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করতেন। প্রতি রাকাতে বিশ আয়াত করে তেলাওয়াত করতেন। আর এভাবেই তিনি তারাবিতে কুরআন খতম করতেন। (মুকদ্দমায়ে ফাতহুল বারী শরহে সহিহ বুখারি ৫৬৫ পৃ: ১৫ নং লাইন)
তারাবির ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল ও আদর্শ ৮ রাকাত নয়, বিশ রাকাত। সুতরাং আখেরাতে যারা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে চায় তাদের উচিত হল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল ও আদর্শের অনুসরণে ও অনুকরণে বিশ রাকাত তারাবি আদায় করা এবং নাজাত প্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত হওয়া।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সহিহ হাদিস অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:০৮
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×