somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি স্বাধীন ধারার যুব আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ও পরিকল্পনা

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকাঃ

পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় বাংলাদেশের সামনে আজ বহুমুখী চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তন, বেকার সমস্যা, ধর্মান্ধ জঙ্গীবাদ,বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সমাজ জীবনে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়সহ নানাবিধ সমস্যা নিয়ে আমরা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। সময়ের বাস্তবতায় যুব প্রজন্ম লক্ষ্যহীন-দিশাহীন। তারা বিপথগামী হয়ে মাদক ও সন্ত্রাসের পথ বেছে নিচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে বহুবিধ সামাজিক অপরাধে। জঙ্গীবাদের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে যুব প্রজন্মের একটি অংশ। এভাবে সম্ভাবনাময় যুব প্রজন্মের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের মূল্যবোধের ভিত্তি দুর্বল হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে আর্থ-সামাজিক সংকট।

উল্লেখ্য, দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ যুবক, যাদের বয়স ১৮-৩৫ বছর। এই যুব প্রজন্মই সমাজকে সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত করে। মূলতঃ এরাই ভবিষ্যত বাংলাদেশের কর্ণধার, তাই এদেরকে সঠিক পথের সন্ধান জানিয়ে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। শেখাতে হবে সংকট উত্তরণের কৌশল।

উল্লেখ্য, আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে ছাত্র-যুব আন্দোলনের আছে এক উজ্জ্বল-গৌরবময় অতীত। এদেশের সকল জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-সংগ্রামে বিশেষ করে ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন,’৬৬ এর ৬ দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান, ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ ’৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-যুবসমাজ প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে রুখে দিয়েছিল শাসক শ্রেণীর অন্যায় আর অবিচারকে। কোন লোভ-মোহ তাদের আপোষকামী করতে পারেনি। লড়াই সংগ্রামের পাশাপাশি লেখা পড়ায়ও ছিলো প্রথম সারিতে। সেদিন মেধাবী ছাত্র-যুবসমাজ বাধভাঙা জোয়ারের মতো যোগ দিয়েছিল সুস্থ্য রাজনীতির সংহতির ধারায়।

এই ধারাবাহিকতায় ব্যাপক ছাত্র-যুব তথা গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে সৈরশাসনের পতনের পর আমরা আশা করেছিলাম বাংলাদেশ গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হবে, রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনের সকল পর্যায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, একটি আদর্শ যুব সমাজ গড়ে উঠবে এবং সর্বোপরি দেশের সকল নাগরিক সামাজিক নিরাপত্তায় স্বাধীনতার সুফল ভোগ করবে। কিন্তু হলো না। ১৯৯০ থেকে ২০১৩ এই দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে দুটি দল পর্যায়ক্রমে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে কমবেশী আপোষকামী ও ভাগবাটোয়ার রাজনীতির মাধ্যমে দেশের প্রকৃত স্বাধীনতাকে অর্থহীন করে তুলেছে। ছাত্র ও যুব সমাজকে দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিনত করেছে। যেখানে রাজনীতির কোন চর্চা নেই, আছে শুধু তোষামোদ আর চাটুকারীতা। ফলে জাতীয় রাজনীতির বীজতলা আজ বদ্ধজলাশয়ে পরিনত হয়েছে। আজ ২৩ বছর ধরে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। অথচ এই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়েই এদেশের অনেক জাতীয় নেতার জন্ম হয়েছে, যাদের অনেকেই আজও আমাদের সামনে আলোর দিশারী হয়ে পথ দেখায়।

সুতরাং রাজনীতির এই অন্ধকার গলিপথ থেকে আমাদের বেরুতে হবে। এজন্য প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুস্থ্য মানষিকতার একটি যুব আন্দোলন। এই যুব আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের ব্যাপক ছাত্র-যুব সমাজকে শেখাতে হবে ১. সামাজিক মূল্যবোধ, ২. মানবাধিকার, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার ৩. সংবিধান অনুযায়ী নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য ৪. লৈঙ্গিক সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ণ এবং ৫. জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার কৌশল। প্রতিনিধিত্বশীল ছাত্র-যুবদেরকে দলীয় ভিত্তিতে সচেতন যুব নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। যারা সামাজিক মূল্যবোধকে ধারণ করবে, লৈঙ্গিক সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ণে বিশ্বাসী হয়ে নারী বান্ধব সমাজ নির্মাণে কাজ করবে এবং দেশের সংবিধান অনুযায়ী নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে মানবাধিকার, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করবে। এভাবে যুব প্রজন্ম সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে আগামী দিনের সুশাসন ভিত্তিক, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে ধাপে ধাপে প্রস্তুত ও অগ্রসর হবে।



সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সমুহ :

ক. সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে ছাত্র-যুবদের আত্মিক উন্নয়নের মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো
খ. নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির আলোকে যুব প্রজন্মের মানসিক বিকাশ ঘটানো
গ. সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে ধারণা প্রদান
ঘ. মানবাধিকার, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-যুবদেরকে Pressure Group হিসেবে তৈরি করা
ঙ. লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ণে ছাত্র-যুব প্রজন্মকে সংবেদনশীল করা। যাতে করে তারা বাল বিবাহ, নারী-শিশু পাচার ও সকল প্রকার নারী নির্যাতন রোধে জনমত গড়ে তুলতে পারে
চ. বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধ এবং স্থানীয় পর্যায়ে বহুবিধ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ইস্যুতে কার্যকর ও টেকসই ভূমিকা পালনের জন্য ছাত্র-যুব প্রজন্মের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী এবং নিজস্বতার মনোভাব (Ownership feelings) তৈরি করা
জ. জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষম যুব প্রজন্ম গড়ে তোলা, যারা যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে।

সুদূর প্রসারী লক্ষ্য সমুহ :

ক. জ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক সমাজ নির্মাণে সুশিক্ষিত যুব প্রজন্ম গড়ে তোলা
খ. একুশ শতকের উপযোগী দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি করা
গ. সমাজ ও জাতি গঠনে আদর্শ যুব নেতৃত্ব গড়ে তুলে দেশপ্রেমিক নাগরিক সৃষ্টি করা
ঘ. শিক্ষার পরিবেশ এবং মান উন্নয়নের জন্য জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা
ঙ. নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি লালন করা।

সামগ্রিক প্রভাব

সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল ছাত্র-যুব নেতৃত্বের সমন্বয়ে একটি ব্যাপক ভিত্তিক যুব নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। এই নেটওয়ার্ক তৃণমূল পর্যায়ে প্রগতিশীল ও জ্ঞান ভিত্তিক যুব প্রজন্ম গড়ে তুলবে। যারা সত্যিকার অর্থে সুনাগরিক হয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বহুবিধ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ইস্যুতে কার্যকর ও টেকসই ভূমিকা পালন করবে। ফলে সামাজিক অপরাধ হ্রাসের পাশাপাশি মানবাধিকার, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উন্মুক্ত ক্ষেত্র তৈরি হবে। যেখানে সুবিধা বঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তাদের নাগরিক অধিকার উপভোগ করবে। এভাবে একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা নির্মিত হবে।
পরিশেষে: আমরা সকলের ঐকান্তিক মতামত আর অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রচলিত ধারার বাইরে আদর্শিক একটি যুবশক্তি গড়ে তুলতে চাই। যা সমাজ, রাজনীতি, পরিবেশ, শিক্ষা-কর্মসংস্থান, বিনির্মান ও পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাবে। তরুণদের সুস্থ জীবন-যাপন, সৃজনশীল কর্মপন্থার মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা।

আহ্বান: দেশের সুশীল যুব সমাজ, আপোসহীন নেতৃত্বে বিশ্বাসী সেই সকল তরুণ ভাইদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান করছি। আসুন আমরা আগামী বিনির্মাণ করি। দেশের প্রকৃত উন্নয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হই।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×