somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বান্দরবান ভ্রমণ ২

৩০ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব
হতে পারতো এটাই আমাদের জীবনের শেষ ট্যুর। হয়তো পরের দিনই পেপারের একটা ছোট নিউজ হতে পারতো বান্দরবানে ৭ টুরিষ্ট নিহত।অনলাইন পত্রিকা তো আরো আধুনিক। হয়তো সেদিনই অনলাইনে চলে আসতো ।কিন্তু বাচানোর মালিক তো আল্লাহ।
বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরি ,থানচি,অথবা তিন্দু যেখানেই যান না কেন শহর থেকে বের হবার পর প্রথমেই একটা আর্মি চেক পোস্ট আছে আমি ১০০% নিশ্চিত যারা ১ম বার বান্দরবানে যাবে তারা এই স্থানে ছবি তুলবেই ।আমাদের টিমের কেউ কি বাদ যাবে নাকি এরকম ইভেন্টে।উপরে বিশাল আকাশ নিচে ভয়ানক খাঁদ আর দূরে আকাবাকা সাঙ্গু নদি

।যে দেখেনি এই জিনিস সে সত্যিই বিশাল আভাগা।৫ মিনিটের ফটো ব্রেক শেষ করে আমরা আবার রুমা বাজারের উদ্দেশে রওনা দিলাম।
এই বন্ধু গান ধরলো "তুই লাল পাহাড়ের দেশে যা রাঙামাটির দেশে যা ইথাক তোকে মানাইছে না রে ইক্কেবারে মানাইছে না রে।"সারা রাস্তা সেই এক গান মাঝে মাঝে কেউ ঠিক করে দেয় "বন্ধু আমরাতো বান্দরবানে ,রাঙামাটিতে না !!!
তো কি হইসে ? পাহাড়ে তো আছি ...। "তুই লাল পাহাড়ের দেশে আহ আ আ আ আ। এখানে একটা বিষয় কমন । সব ড্রাইভাররা গাড়ি চালানোতে চরম দক্ষ।যার প্রমান আমরা হাতে হাতে পেয়েছি।বান্দরবান শহর থেকে রুমা বাজার যেতে সময় লাগে মোটামোটি দুই ঘণ্টা ।রাস্তার দুই পাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দারবান দেখতে দেখতে যাচ্ছি। এক পাশে পাহাড় আর এক পাশে বিশাল বিশাল মেঘেদের দৌড়াদৌড়ি । এই অদ্ভুত সৌন্দর্য ব্যক্ত করার মত ভাষা আমার জানা নেই ।
রুমা বাজার থেকে বগালেক পাড়া যাওয়ার রাস্তাটি কোথাও ইটের সলিং করা কোথাও কাঁচা শুধু মাত্র কিছু কিছু স্থানে ইটের সলিং ভালো আছে । রাস্তায় প্রচুর ধূলাবালি খেতে হয়- এজন্য বড় আকৃতির রুমাল দিয়ে নাক মুখ পেঁচিয়ে নিলে ভাল হয়- আর রোদ চশমা বেশ কাজের জিনিস । রুমাবাজার থেকে ঝিরি পথে বগালেক পাড়ার দূরত্ব কমবেশি ১৪ কিমি। রুমা বাজারে ফোর হুইলার গাড়ি ভাড়া করলাম ২০০০ টাকা দিয়ে ।যা একদম বগা লেক পর্যন্ত আমাদের নিয়ে যাবে ।গাড়িতে সামনে তিন জন আর পিছে ৬ জন বসলাম ।
রুমা বাজারে গাইডের কয়েকটি সমিতি আছে। যেকোনো একটা থেকে একজন গাইড নিতে হবে. রুমাবাজারে আরো একটি কাজ করতে হয় আর্মি ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি ।রুমা বাজারে ঘটনা একটি ঘটেছিল রুমা বাজার থেকে বগালেক যাবার পথে যেটি আমার সারা জীবন মনে থাকবে ।বগা লেকের উঠার জন্য প্রায় খাড়া একটা পাহাড় পাড়ি দিতে হয় ।প্রায় পৌঁছে গেছি এমন বলল আমাদের গাইড।গাড়ি তার সর্বশক্তি দিয়ে শেষ পাহাড়ের উপরে উঠা আরম্ভ করলো ।এর আগে পুরো রাস্তায় এমন পাহাড় পাড়ি দিচ্ছিলাম তাই আলাদা করে নজর দেবার কথা মনে হয়নি আমাদের কারো।গাড়ির শব্দতে কিছু একটা পরিবর্তন শুনতে পেলাম আমরা ।আর তারপরই গাড়ি হটাত করে এক পাশে বাঁকা হয়ে গেল। আমরা সবাই চরম বিপাকে।গাড়ির কোন ব্যল্যান্স নেই ।প্রতি মুহূর্ত মনে হচ্ছে এই পরে গেলাম ।গাড়িতে ড্রাইভার না পারছে ব্রেক করতে না পারছে সামনে টানতে ।এদিকে গাড়ি আস্তে আস্তে এক দিকে কাত হয়ে যাচ্ছে ।ঠিক যেই পাশ টায় খাড়া ঢাল ।নিচে পরলে বেঁচে থাকবো কিনা তা নিয়ে পরে অবশ্য আমরা অনেক গবেষণা করেছি এবং পেয়েছি "কনফার্ম পটল তুলতাম ।
খাড়া ঢাল।গাড়িতে ড্রাইভার বেসামাল ।আমাদের মনে হচ্ছিল এটাই মনে হয় জীবনের শেষ ।আল্লার কাছে মাফ চাচ্ছি ।এদিকে গাড়ির তার সর্বোচ্চ মেধা দিয়ে গাড়ি ঠিক রাখার চেস্টা করছে ।গাইডের চীৎকার শুনতে পেলাম সে ড্রাইভার কে বলছে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ কর ।ড্রাইভার স্টার্ট বন্ধ করলো ।ড্রাইভার বলল আপনারা গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যান।

সামনের দুইজন বের হোল ।এদিকে আমরা পিছে থেকে চেষ্টা করছি গেট খোলার ।গেট খুলছে না। এদিকে প্রতি মুহূর্ত মনে হচ্ছে গাড়ি উল্টে যাচ্ছে ।ড্রাইভার চীৎকার করে বলল গেট বাইরে থেকে গেট খুলে দেবার জন্য । হয়তো ৫-৭ সেকেন্ড পর বাইরে থেকে গাড়ির গেট খুলে দিল ।

এই সময়টুকো আমার কাছে মনে হয়েছে অনেক সময় ।গেট খোলার পর পাহাড়ের ঢালে ব্যালেন্স না রাখতে পেরে হুড়মুড় করে গাড়ির বাইরে দুইজন পড়ে গেল কিছু দূর যাবার পর তারা কোন ক্রমে ব্যালেন্স ঠিক করলো ।ভাগ্য ভালো যে পাহারের ঢালে পড়েছিল অথচ পাশেই ছিল ভয়ানক খাঁদ । বাকিরা সবাই সাবধানে নামলাম ।প্রায় ২০ মিনিট পর পিছের একটা গাড়ি আসতে দেখলাম ।সেই গাড়ির ড্রাইভারের সহায়তায় আমাদের গাড়ি ঠিক করা হল


।তার একটু পরেই বগা লেক পৌঁছালাম

।আবার আর্মি ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি ।
বগা লেকে ছিলাম এক রাত ।সারা দিন লেকে দাপাদাপি ।ভিজা শরীরে দুপুরের খাবার খাওয়া আবার লেকে গোসল ।শেষ বিকেলে আশে পাশের পাড়াগুলো ঘুরে দেখা আর সন্ধায় বারবি কিউ পার্টি ।আর রাতে বোনাস ছিল পাহাড়িদের সংস্কৃতিক প্রোগ্রাম ।এক সাদামাটা পাহারি গায়কের গলায় জন ডেনভার এর "কান্ট্রি রোডস্" এক কথায় অসাধারণ শুধু একটা ইচ্ছা পুরন হয়নি ইচ্ছা ছিল রাতের আকাশের লক্ষ কোটি তাঁরাদের দেখবো, দেখা হয়নি । পুরো আকাশ ছিল মেঘেদের দখলে । তবে অন্য একটা ইচ্ছা পুরন করেছে আল্লাহ্‌। নীলগিরি উপরে বৃষ্টি দেখার খুব শগ ছিল ।আমরা নীলগিরিতে পৌঁছানর পর সূর্য মামা গায়েব হয়ে গেল ।বৃষ্টি দেখলাম নীলগিরি উপরে ।এ এক অদ্ভুত ভাললাগা ।এ এক অদ্ভুত প্রকৃতি।এ এক অদ্ভুত ভালবাসা । নীলগিরি থেকে আমরা কক্সবাজার গিয়েছিলাম । সে কথা অন্য কোন একদিন বলবো । ।তবে একটি কথা বলবো প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে বান্দরবানের বিকল্প আর কোন জায়গা হতে পারে না।বান্দরবান ইজ অসাম
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৩৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×