somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্ক্রীপ্ট রাইটিং পর্ব-দুই : ফরম্যাট, হেডিং, ডিরেকশন, ক্যামেরা শট

১১ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






{ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে কিছু লিখতে চাচ্ছি। ক্রিয়েটিভ রাইটিং কোর্স এ আসলে লেখালেখির সবকিছু সম্পর্কেই ধারনা দেয়া হয়। সেটা হতে পারে ছোটগল্প, বা উপন্যাস কিবা নিছক ফিচার কিবা স্ক্রীপ্ট রাইটিং। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি লেখালেখির গুন আসলে ট্রেনিং এর মাধ্যমে পাওয়া যায় না। কিন্তু তবুও ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর কোন কোর্স এ অংশ নিলে যেটা হয় তা হলে লেখালেখিটা এসাইনমেন্ট হিসেবে করতে হয় এবং তাতে করে অনেক উপকার হয়। আর যে লেখাগুলোতে কিছুটা কাঠামোগত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন যেমন স্ক্রীপ্ট রাইটিং, সেগুলোর ক্ষেত্রে কোন ট্রেনিং কোর্স বা গাইড আর্টিকেল কিছুটা কাজে লাগে।

আমাদের দেশে তো এখন মনে হয় ছোটগল্প বা উপন্যাস লেখার চেয়ে নাটক লেখার দিকে লিখিয়েদের ঝোক বেশী থাকার কথা। কেননা সেইটার বাজারই ভাল।


(আমি নিজে কোন জাতের লেখক নই, শুধু যা পড়েছি বা শিখেছি তা কপি পেষ্ট করব। দয়াকরে ভূল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি নিয়ে দেখবেন আশা করি।)}



স্ক্রীপ্ট রাইটিং প্রথম পর্ব এখানে দেখুন


ফরম্যাট এবং হেডিং:

যেকোন একটা স্ক্রীপ্ট, ধরা যাক একটি টেলিফিল্মের স্ক্রীপ্ট যখন আমরা লিখব তখন আসলে আমাদের উদ্দেশ্য কি থাকবে? অবশ্যই যাকে তা পড়তে দেব যাতে তার পছন্দ হয় সেদিকেই আমাদের নজর থাকবে। সেই জন্যে স্ক্রীপ্টটি যাতে সত্যিকার স্ক্রীপ্টের বেসিক ফরম্যাটে যায় সেই ব্যাপারে আমাদের নজর দিতে হবে প্রথমে। তা না হলে স্ক্রীপ্ট পড়তে পাঠক উতসাহ হারাবে, নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জন্ম নেবে এবং স্ক্রীপ্টটি আস্তাকুড়ে চলে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে যদিও বা তার্ মান খুব ভাল হউক। আবার আপনি যদি ফরমায়েসী স্ক্রীপ্ট রাইটারও বা হোন, মানে, আপনি যদি কোন একজন ডিরেক্টররের জন্য স্কীপ্ট লিখেন যিনি কিনা আপনি যাই লিখুন না কেন তাই নিয়ে ফিল্ম বানাবেন, তবুও ডিরেক্টররের নূন্যতম চাহিদা পুরনের জন্যেও আপনার স্ক্রীপ্টটিকে হতে হবে নিয়ম অনুযায়ী।
অন্যান্য যেকোন লেখার মতই স্ক্রীপ্টকে হতে হবে টাইপড। হাতের লেখা নয়। হাতের লেখা পড়া একটা ঝামেলা ও ঝক্কি।
এ ফোর সাইজের পৃষ্ঠায় বাম পাশে নুণ্যতম এক ইঞ্চি মার্জিন রেখে স্ক্রীপ্ট টাইপ করতে হবে। সম্পাদনার স্বার্থে কাগজের দুই পাশেই মার্জিন রাখলে আরও ভাল। টাইপ করার সময় নির্দিষ্ট একটি পয়েন্টের ফন্ট ব্যবহার করা উচিত। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে ১২ পয়েন্টের ফন্ট ব্যবহার। এটিই স্ট্যান্ডার্ড। এটি খুব ছোটও নয় খুব বড়ও নয় তাই সহজে পড়া যায়।
এবং একই ফন্ট ব্যবহার করলে দৃশ্য সম্পর্কেও ধারনা করা যায়। প্রতিটা পেইজে ঠিক কত সময় দৃশ্যায়ন সময়। তাতে করে পেইজ গুনে দৈর্ঘ্য সম্পর্কে একটা অনুমেয় ধারনা করা যায়।

স্ক্রীপ্ট ফরম্যাট কি?

স্ক্রীপ্ট এর ফরম্যাট আহামরি কিছু নয়। স্ক্রীপ্ট ডায়লগ নির্ভর, কে কোন ডায়লগ বলছে সেটি নির্দিষ্ট করে দিতে হয়, চাহিদা অনুযায়ী দৃশ্যটি কোথায় কিভাবে হচ্ছে সেটি সংক্ষেপে বলে দিতে হয়, যদি নির্দিষ্ট কোন সাউন্ডের ব্যবহার করতে হয় তা বলে দিতে হয়, নির্দিষ্ট কোন ক্যামেরা এঙ্গেল যদি চান তাহলে তা বলে দিতে হয়।
একটি দৃশ্যের প্রথমেই যা বলে দিতে হয় তা হচ্ছে দৃশ্যটি কোথায়, কথন কিভাবে ঘটছে। যাকে বলা যায় হেডিং।
তারমানে হচ্ছে দৃশ্যটি ঠিক কোন জায়গায় হচ্ছে ইনডোরে নাকি আউটডোরে, কোন বাসায় নাকি মার্কেটে নাকি পার্কে। কখন হচ্ছে দিনে নাকি রাতে, পাত্রপাত্রী কি অবস্থায় আছে। তার পর চরিত্রগুলোর ডায়লগ বলে দেয়া যায়। একটি উদাহরন দেখুন টাইটানিক মুভি থেকে

23 INT. ROSE'S STATEROOM / KELDYSH - DAY

Lizzy is unpacking Rose's things in the small utilitarian room. Rose is
placing a number of FRAMED PHOTOS on the bureau, arranging them carefully
next to the fishbowl. Brock and Bodine are in the doorway.
LOVETT
Is your stateroom alright?
ROSE
Yes. Very nice. Have you met my granddaughter, Lizzy? She takes care of me.
LIZZY
Yes. We met just a few minutes ago, grandma. Remember, up on deck?
ROSE
Oh, yes.

Brock glances at Bodine... oh oh. Bodine rolls his eyes. Rose finishes
arranging her photographs. We get a general glimpse of them: the usual
snapshots... children and grandchildren, her late husband.

ROSE
There, that's nice. I have to have my pictures when I travel. And Freddy of
course.
(to the Pomeranian)
Isn't that right, sweetie.
LOVETT
Would you like anything?
ROSE
I should like to see my drawing.
CUT TO:

উপরের স্ক্রীপ্টের অংশটি দেখে সহজেই বোঝায় যাচ্ছে কিভাবে হেডিং দিতে হবে।
INT. ROSE'S STATEROOM / KELDYSH - DAY
প্রথমেই আছে দৃশ্য নাম্বার ২৩। তারপর ইন্টেরিয়র, মানে ইনডোর, ছাদের নিচের দৃশ্য। রোজের স্টাটাররুম, সময় হচ্ছে দিন।
এই হেডিং দেখেই ডিরেক্টর কিভাবে দৃশ্য চিত্রায়ন করবেন তার স্পষ্ঠ ধারনা পেয়ে যাচ্ছেন।
তো বাইরে আউটডোরে কোন দৃশ্য হলেই তা এক্সটেরিয়র।

এখন ধরা যাক দৃশ্যটি হচ্ছে রাস্তায় কোন গাড়ির ভেতরে তখন কি হবে?
সেই ক্ষেত্রে দৃশ্যটি হবে ইন্টেরিয়র।
আবার ক্যমেরার পয়েন্ট অভ ভিউ নির্ভর করে দৃশ্যের হেডিং আরও একটু জটিল হতে পারে। ধরা যাক বাড়ির ভেতরে পাত্রপাত্রী কথা বলার দৃশ্য বাড়ির বাইরের ক্যামেরা থেকে ধরা হবে সেক্ষেত্রে এটি ইন্টেরিয়র/এক্সটেরিয়র দুইটাই। দুইটাই উল্লেখ করতে হবে।

সময় দেখিয়ে দেবার ক্ষেত্রে দিন বা রাতই সাধারনত উল্লেখ করা হয়। কিন্তু প্রয়োজন পড়লে আরও ডিটেইল দেয়া যায়, যেমন ভোর, বিকেল, সন্ধা ইত্যাদি।


ক্যামেরা ডিরেকশন :


স্ক্রীপ্টে প্রয়োজন পড়লে কিছু টেকনিকাল ডিরেকশন দিতে হয়। যদিও এর ব্যবহার খুবই সীমিত। কেননা সবসময় মনে রাখতে হবে যে আপনি একজন স্ক্রীপ্ট রাইটার, ডিরেক্টর নন। তবুও কিছু ক্ষেত্রে স্ক্রীপ্টেও কিছু নির্দেশনা দেবার প্রয়োজন পড়ে।
সাধারনত যেসব টেকনিকাল ডিরেকশন স্ক্রীপ্টে আসে সেগুলো হচ্ছে-

ভি.ও বা ভয়েসওভার:
সৃত্রধর বা এই জাতীয়। পর্দায় কিছু দেখানো হচ্ছে আর একটি কন্ঠ এর বর্ননা দিচ্ছে এমন।

ও.এস বা অফস্ক্রীন: একটি দৃশ্যে একজনের কথা শোনা যাচ্ছে কিন্তু তাকে দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু দৃশ্যের অন্য চরিত্ররা তার কথা শুনছে।

পি.ও.ভি. বা পয়েন্ট অফ ভিউ : ক্যামেরা একটি চরিত্রের চোখ দিয়ে দেখছে। ধরা যাক একটি দৃশ্যে দুই জন কথা বলছে আরেকজন লুকিয়ে তা দেখছে, এটি তার চোখ দিয়ে দেখানো, এরকম হলে সেটি পিওবি দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়।

এম.ও.এস বা উইথআউট সাউন্ড : দৃশ্যে চরিত্রগুলো কথা বলছে, তাদের ঠোট নড়ছে কিন্তু দর্শক কিছু শুনতে পাবে না।


নানা রকম ক্যামেরা শট :

স্ক্রীপ্টে ক্যামরা এঙ্গেল বিষয়ে বলে দেয়াটা খুব ভাল চোখে দেখা হয় না। বলে দেয়া উচিত ও না। এটি ডিরেক্টরের বিষয়। তবু এটি জেনে রাখা ভাল। কেননা স্ক্রীপ্টরাইটারের সেক্ষেত্রে কল্পনা করতে সহজ হয়। কোন কোন বিশেষ ক্ষেত্র অবশ্য ক্যামেরা শট স্ক্রীপ্টে বলে দেয়া যায়। তবে খুবই সীমিত সেক্ষেত্রে।

কিছু কিছু ক্যামেরা শট হল -

লঙ শট ( এল এস) : ক্যামেরা দুর থেকে ধরা হয়।

মিডিয়াম শট ( মিডশট বা এমএস) : সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত শট। দৃশ্যে দুই তিনজন কথা বলছে এটি নির্দিষ্ট দুরত্ব থেকে ধরা হচ্ছে যাতে সবাইকে দেখা যাবে।

ক্লোজশট (সিএস) : কাছ থেকে নেয়া।

ক্লোজআপ শট ( সি/ইউ) : চরিত্রের মুখ কাছ থেকে ধরা।

এছাড়াও আছে টাইট সি/ইউ বা চরিত্রের কান নাক গলা বা চোখ ধরা।
টু শট মানে দুইটা চরিত্রের এমএস, থ্রি শট মানে তিনটা চরিত্রের এমএস।


এইতো গেল নানা রকমের শট। মনে রাখতে হবে, কিভাবে শট নেয়া হবে তা দেখিয়ে দেয়া আপনার কাজ না। স্ক্রীপ্ট রাইটারের দায়িত্ব কাহিনী সাজানো চরিত্র নির্মান, ডায়লগ তৈরি। ক্যামেরার কাজ ডিরেক্টরের।
তাই সেসব ক্ষেত্রে একান্তই ক্যামেরার কাজ বলে দেয়া দরকার। যেমন আপনি বলতে চান দুর থেকে দেখা যাচ্ছে অমুক আসছে। তাহলে লঙ শট উল্লেক না করে একদম সরাসরি বলতে পারেন দুর থেকে দেখা যাচ্ছে। তাতে ডিরেক্টরের সাথে ইগোর দ্বন্দে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম :)






(ক্রমশ)


ডিসক্লেইমার: প্রথম পর্বের পাচমাস পড়ে দ্বিতীয় পর্ব পোষ্ট করায় আন্তরিক দু:খিত। কিন্তু তৃতীয়পর্ব তাড়াতাড়ি আসবে :)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:১১
২৪টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×