কার দোষঃ শ্রদ্ধাঞ্জলি, সুকুমার রায়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
শাস্তি দিলে শাস্তি পেত মিস্তিরিটা সবথেকে!
কিন্তু নাকি দোষটা ছিল সুরকিমাখা মশলাতে।
মশলা মাখে কেমন করে ডাকো বেকুব লোকটাকে!
সদ্য গড়া দেয়াল কেন এমন হবে ঠেক দিতে?
ট্যাবনা বলে পাত্রখানি মশলা হলো গোলমেলে?
শাস্তি তবে কুমোর পাবে--ঢপ গড়েছে বেখেয়ালে!
খেয়ালেরই দোষ ঘটে তো, শাস্তি পাবে সেই মেয়ে!--
চমকেছিল ওমন করে সে-ই না অমন দৌড় দিয়ে!
শাস্তি দিলে শাস্তি পাবে স্বর্ণকারে কম কিসে?--
নোলকখানি পৌঁছে দিলে মেয়েটি থাকে নিজদেশে!
মুক্তো ছাড়া স্যাকরা বাপু গড়বে সেটা কোন হুঁশে?
সাগর সেঁচে ডুবুরি এল সেই-তো প্রায় দিন শেষে!
করলে বিচার, শুনলে কিছু? ডুবুরীরই বা দোষ কিসে!
ডুব দিয়েছে ভোর বেলাতে দেখেছে জল ঢের চষে--
ঝিনুক আছে অনেক তবে মুক্তোদানা নেই তাতে।
শুক্তি থাকে সাগর জলে;- দোষটা যাবে কার সাথে!
*সুকুমার রায় এর 'কার দোষ' গল্পটিকে ছড়ায় রূপান্তর করবার চেষ্টা। শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মূল গল্পটি -
কার দোষ
এক রাজা তাঁর বাড়ির পাশে একটা প্রকাণ্ড উঁচু দেয়াল তুলবার হুকুম দিলেন। দেয়ালটি কিন্তু শেষ হওয়ামাত্র হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল। রাজা তো রেগেই অস্থির! তখনই হুকুম দিলেন,”বেঁধে আনো রাজমিস্ত্রিকে! এখনই তাকে আচ্ছা করে ঠ্যাঙা দেওয়া হোক আর কয়েদ করা হোক।”
রাজমিস্ত্রিকে ধরে আনা হতেই সে বলল,” মহারাজ! আমার কী দোষ? সুরকির মসলা খারাপ ছিল, আমি কী করব?”
তখনই লোক গিয়ে সুরকিওয়ালাকে ধরে নিয়ে এল। সে বলল,”দোহাই হুজুর! আমার কোনো দোষ নেই। আমি তো মসলা ঠিক করে মেশাতে কত চেষ্টা করলাম, কিন্তু মেশাবার পাত্রটা এমন বিশ্রী করে বানিয়েছে কুমোরে, যে, সেটা দিয়ে কিছুতেই ভালো করে মেশানো যায় না।”
অমনি আবার লোক ছুটলো কুমোরকে ধরে আনতে। কুমোর এসে কেঁদে বলল,” মহারাজ, আমার কী দোষ? একে তো তাড়াতাড়ি মসলার গামলা গড়তে দেওয়া হয়েছিল, তার ওপর আবার গড়বার সময়ে একটি মেয়ে আমার বাড়ির সামনে দিয়ে ছুটে যেতে-যেতে আমাকে এমনি চমকে দিল, যে পাত্রটার গড়নই খারাপ হয়ে গেল।”
মেয়েটিকে তখনই রাজার লোকেরা গিয়ে ধরে নিয়ে এল। সে বলল,”মহারাজ! আমার কোনোই দোষ নেই! ও বাড়ির সামনে দিয়ে যাবারও আমার কোনো দরকার ছিল না। একজন স্যাকরাকে আমার কানের দুল গড়তে দিয়েছিলাম। বাড়িতে এসে দুলজোড়া দিয়ে যাবার কথা ছিল তার। কিন্তু সেদিন আমার চলে যাবার কথা; তবুও কিছুতে সে দুল দিল না দেখে আমাকে তার বাড়িতে ছুটে যেতে হয়েছিল। কুমোরকে চমকে দেবার কোনো উদ্দেশ্যই ছিল না আমার।”
রাজার হুকুমে স্যাকরাকে ধরে আনা হলো। সে বলল,”মহারাজ, আমার কী দোষ বলুন? মুক্তোওয়ালা মুক্তো দিয়ে যায়নি সময় মতো--সেজন্যই তো আমার দুল গড়তে দেরি হলো।”
মুক্তোওয়ালাকে ধরে আনা হলো; সে বলল,”মহারাজ! আমি তো মুক্তো পাবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ডুবুরিতে ভালো মুক্তো তোলেনি, তার আর আমি কী করতে পারি বলুন?”
তখন ডুবুরিকে ডাকা হলো। সে এসে বলল, ”মহারাজ! আমার দোষ এর মধ্যে কী হলো বলুন? শুক্তিতে যদি ভাল মুক্তো না জন্মায় তো আমি আর কোত্থেকে আনি?”
তখন সকলে মাথা চুলকোতে আরম্ভ করল। শুক্তি তো সমুদ্রের তলায়, কাজেই শেষ পর্যন্ত আর কাউকে শাস্তি দেওয়াই হলো না।”
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট
পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:
وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন
মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)
ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)
০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।
ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।