আমার বন্ধু শাকিল। নির্ভেজাল লোক। বয়সে আমার থেকে দুই বছরের বড়। সেই ছোটবেলা থেকে দেখেছি কোন প্রকার গোলমালে যায় না সে। এজন্যই ওর সাথে আমি মিশতাম বেশি। ছাত্র হিসেবে একটু নরমাল হওয়ায় সবার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখতো। কোন মেয়ের সাথে মেশা তো দুরের কথা। আমি যখন কোন বান্ধবীর সাথে কথা বলতাম সে তখন আমার কাছে আসতো না।
আমি তখন ইন্টার পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার এক বান্ধবীর(রাশিদা) সাথে পরামর্শ করলাম কি করে ওর এই মেয়ে ভীতি দুর করা যায়। দায়িত্বটা রাশিদা নিজেই নিল।
অনেক দিন কেটে গেছে। আমি ঢাকাতে লেখাপড়া করছি। ওরা রয়ে গেছে আমাদের সেই মফস্বল শহরেই। আমি ছুটিতে বাড়ি যাই কিন্তু ওদের সাথে দেখা হয় না। শাকিলদের বাড়ি পরিবর্তন করায় ওর বাড়িতে যাওয়া হয় না। গত মাসে আমি বাড়িতে যাওয়ার পর অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে, রাতুল, আমি রাশিদা। তোর কলেজ ফ্রেন্ড। আমি খুব বিপদে আছি। দয়া করে আমার সাথে একটু দেখা করবি?
ফোনে খুব বেশি কথা হয়নি আমাদের। দেখা করে জানতে পারলাম রাশিদা এতোদিন শাকিলের সাথে অভিনয় করতে করতে নিজেই তার প্রেমে পড়ে গেছে। কিন্তু শাকিল বেচারা এখন আর সেই আগের মতো নেই। রাশিদা ছাড়াও তার অনেক মেয়ে বন্ধু। রাশিদা কেঁদে ফেলল আমার সামনে। আমি ওকে সান্তনা দিয়ে বললাম, যা হবার হয়ে গেছে। এখন আর কেঁদে কি লাভ? তারচেয়ে ওকে ভুলে যা। বাবা মা যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক করে তাকে বিয়ে করে ফেল। আমার মনে হয় তুই নিজেকে সামলে নিতে পারবি।
১০ জুলাই আমি বাড়ি গিয়েছিলাম ওর বিয়ের দাওয়াত রক্ষা করতে। কিন্তু অত্যাধিক বৃষ্টির কারণে সেদিন যেতে পারিনি। পরের দিন ওকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তারপর আবার ঢাকা চলে এসেছি। শ্বশুর বাড়ি গিয়ে ফোন করে ধন্যবাদ জানিয়েছে আমাকে। তবে রাশিদার কল্যাণে বদলে যাওয়া শাকিলের কোন খবর আজও পাইনি। নিতেও চেষ্টা করিনি।
মুনীর চৌধুরীর সেই কবর নাটকের একটা সংলাপ মনে পড়ছে, "মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়। বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে অকারণে বদলায়।"
সত্যিই তাই আমরা কত তারাতারি বদলে যাই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




