=================================
ঐদিন বাজারে গিয়ে রাশেদের খুব বাজে একটা অভিজ্ঞতা হলো। প্রথমে গিয়েছিলো সে ডিম কিনতে। গিয়ে দোকানিকে বলেছিলো-
"ডিম দেন তো !"
দোকানদারঃ "কুন দিক দিয়া দিমু?"
রাশেদ দাঁত কিড়মিড় করে বললোঃ "মানে?"
রাশেদের কথা শুনে দোকানদার দাঁত বের করে হাসলো।
রাশেদঃ "ফাইজলামি না কইরা ডিম দেন এক হালি"
দোকানদারঃ "আমি কি মুরগী নাকি হাঁস যে ডিম দিমু ! ফাইজলামি তো আপনে করতেছেন !"
রাশেদঃ "আরে কি আজব, তাইলে আমি ডিম পাবো কই এখন? এই যে আপনের দোকানে ডিম দেখা যাইতেছে। এইগুলা কিসের জন্য রাখছেন তাহলে?"
দোকানদার গম্ভীর গলায় বললোঃ "তা' দেওয়ার জন্য। আমি আর আমার বৌ এগুলির উপ্রে বয়া বয়া তা' দেই......"
রাশেদ দৃশ্যটা কল্পনা করে শিউরে ওঠে। তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো- এক ডজন ডিমের ওপর দোকানদার বসে বসে তা' দিচ্ছে। তাঁর চারপাশ ঘিরে আছে অনেকগুলি মোরগ-মুরগী......
"পাগল নাকি, ধুর মিয়া লাগবো না আপনের ডিম!"- রাশেদ গজগজ করতে করতে তরকারির বাজারের দিকে রওনা হলো। এবারে অবশ্য "লাউ দেন তো" বলতে গিয়ে সামলে নিলো নিজেকে। যদি ডিমওয়ালার মত লাউওয়ালাও বলে বসে- "কুন দিক দিয়া দিমু?" তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে...... রাশেদ সতর্ক গলায় বললো- "দেখি, লাউ দেখি ।"
দোকানদার রাশেদকে লাউ দেখালো......
রাশেদঃ "ভালো হবে তো !"
লাউওয়ালাঃ "খুবই ভালো। শান্ত, ভদ্র, ভালো ফ্যামিলির লাউ।"
রাশেদের মেজাজটা আগেই খারাপ ছিলো। এখন আরো খারাপ হয়ে গেলো। সে তীক্ষ্ণ গলায় বললো- "ঐ মিয়া, আমি কি এই লাউরে বিয়া করমু নাকি? এর বংশপরিচয় আপনের কাছে কে জানতে চাইছে......"
লাউওয়ালাঃ "আপনেই তো জিজ্ঞাস করলেন......"
রাশেদঃ "আপনে এক কাজ করেন, লাউ এর ব্যবসা বাদ দিয়া ঘটকালির ব্যবসায় নামেন..."- গজগজ করতে করতে লাউ না কিনেই মাছের বাজারের দিকে রওনা হলো সে। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে দেখলো- মাছের বাজারের বদলে স্কুলের ক্লাশরুমে এসে ঢুকেছে, আর ক্লাশ টিচার ধমকের গলায় বলছেন- "এইডা কি ক্লাশ নাকি মাছের বাজার...... চোপ !!"
রাশেদ বিড়বিড় করে বললোঃ "এইডা ক্লাশ না স্যার, আসলেই মাছের বাজার। মাছওয়ালা কি আপনে? এই রুই মাছের কেজি কত?"
ক্লাশ টিচার বললেনঃ "৫০০ গ্রাম পাঙ্গাস মাছ ১৩০ টাকা হইলে এক কেজি রুই মাছ কত হবে- ঐকিক নিয়মে বাইর কর !"
"পাঙ্গাস মাছ আসলো কোথা থেইকা স্যার। তাছাড়া ......" রাশেদ আরো কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো। সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? ! মাছওয়ালার সাথে সে অংক নিয়ে আলাপ করছে কেন?!! "এখন রাখেন, পরে নিবো নে মাছ"- বলে সে হুড়মুড় করে অন্য দোকানে গেলো। ভাবলো অল্প কিছু সিজনাল ফল কিনে নিয়ে আজকের মত বাসায় ফেরত যাবে......
রাশেদঃ "এই কাঁঠাল কি মিষ্টি হইবো?"
কাঁঠালওয়ালাঃ "মিষ্টি খাইতে চাইলে মিষ্টি কিনলেই তো পারেন। কাঁঠাল কিনতে আইছেন ক্যান?"
রাশেদ (দাঁত কিড়মিড় করে) : "সোজা কথার সোজা উত্তর দেন। এই কাঁঠাল কার্বাইডে বা ফরমালিনে পাকানো কি না?"
কাঠালওয়ালাঃ "আরে নাহ ! কিলায়া পাকাইছি। কাঁঠালরে পাওনাদার মনে কইরা কিলাইছি......"
রাশেদ নির্ভয়ে কাঁঠাল কিনলো। যেহেতু পাওনাদার মনে করে কিলিয়েছে, সুতরাং এই কাঁঠাল খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
সত্যিই কাঠালটা খুব ভালো ছিলো। বাসার সবাই খেয়ে খুব প্রশংসা করলো। রাশেদ নিজেও খুব তৃপ্তি করে খেলো। কাঠালওয়ালাকে একটা ধন্যবাদ জানাতে হবে......
***
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




