ঘুম ভাঙার পর 'মাই বেস্ট ফ্রেন্ড' [আমার ওয়ান থেকে এসএসসির ক্লাসমেট এবং 'ব্যক্তি' আমার উপর প্রভাব বিস্তারী দুজনের প্রথমজন; দ্বিতীয়জন হল বাপ্পি (বিজয় আহমেদ, কবি)]-এর সাথে কথা হলো, প্রতিদিনের মতো, শুয়ে শুয়েই। সাড়ে 9টা বাজে। ও ওঠে পড়তে বলল। এত্তো সকালে ওঠে কী করব! উঠব কি উঠব না করতে করতে, বোধ করি, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আবার ঘুম। ঘুমের কালে তো আর টের পাই না, কখন এলো ঘুম; টের পেলাম সাড়ে 12টায়। মোড়ামুড়ি করলে আবারো কয়েকঘন্টা হুঁশ থাকবে না, উঠে পড়লাম। অস্ট্রেলিয়ার খেলাটা দেখা দরকার। অ্যাশেজ-এ আমি অস্ট্রেলিয়ার সাপোর্টার, ভালো সাপোর্টারই বলা যায়। কারণটা ইংল্যাণ্ড। আর যাই হোক, ইংল্যান্ড আর পাকিস্তান [এশিয়ার দোহাইয়ে পাকিস্তানের সাপোর্ট করেন অনেকেই। তাদের অধিকাংশ ক্রিকেট আর রাজনীতিকে এক না করার পক্ষে। শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, পাকিস্তান শব্দটাই আমার কাছে জঘণ্য-ঘৃণ্য মনে হয়। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। আমার দেশের ইতিহাসকে ভালোবাসি। '1971' আর 'পাকিস্তান'_ শব্দ দুটোর যে সম্পর্ক, তাতে #... (বোধ করি বিবেচকের জন্য ইঙ্গিতই যথেষ্ট, '#...'-এর জায়গায় কী বসবে, তা তারা বুঝে নেবেন] _ এ দুটি দলের সাপোর্টকিছূতেই করতে পারি না। ভেতর থেকেই আসে না। বরং ওরা হারলে, শোচনীয়ভাবে হারলে খুশি হই।
ক্রিকেট আমার দ্বিতীয় পছন্দের খেলা। প্রথমটা টেনিস। এবং অবশ্যই 'ওম্যান টেনিস'। ছোটবেলায় বাংলাদেশ বেতারে 8টা 5-এর খেলাধূলার খবর শুনতাম মূলত টেনিসের জন্য। স্টেফি গ্রাফের [জার্মান, কিংবদন্তি টেনিস তারকা] সাফল্য আমাকে আনন্দিত করে তুলত। এ আনন্দের কারণটা সরল এবং পবিত্র: পত্রিকার খেলার পাতায় পরদিন তার ছবি ছাপা হবে, আর আমি রেগুলার অভ্যেসমত তা কেটে প্লল্লাস্টিকে মুড়িয়ে রাখবো, সযত্নে। আমার যখন শৈশব যাই-যাই করছে, পত্রিকায় স্টেফি গ্রাফের ছবি দেখে দেখে 'টেনিস' শব্দটার সাথে পরিচিত হয়েছি। যদিও তার খেলা কোনোদিনই 'লাইভ' দেখতে পারিনি টিভিতে, রিটায়ার্ডের পর এখন কোনো কোনো চ্যানেল পুরনো ম্যাচগুলো দেখাচ্ছে অবশ্য, আমি আগ্রহবোধ করি না। টিভির স্টেফির চেয়ে পত্রিকা ও রেডিওর স্টেফি আমার কাছে অনেক সত্য, অনেক জ্যান্ত। স্টেফির রিটায়ার্ডের দিনটা আমার ব্যাপক মন খারাপের গেছে। মাঠের স্টেফিকে পত্রিকায় পাবো না বলেই হয়তো! আর স্টেফি ও আন্দ্রে আগাসীর বিয়ের খবরটায় আমার দু'ধরনের অনুভূতি হয়। যে ছেলেগুলোকে সারা জীবন আমার ঈর্ষা হবে, তাদের অন্যতম আগাসী। এই আগাসী ব্যাটা এতোই শয়তান (!) , সে আমার পছন্দের দুই জন মানুষকে [ব্রুক শিল্ডস ও স্টেফি গ্রাফ; 'দ্য ব্লু লেগুন' ছবির ব্রুক শিল্ডে আমৃতু্য বিমোহিত আমি। যদিও ব্রুক শিল্ডসকে পরে আর ভালো লাগেনি আমার, আমি আগ্রহীও নই ওর আর কোনো ছবি দেখতে, ওর সম্পর্কে কিছু জানতে-শুনতে...] বিয়ে করেছে, তাদের সঙ্গে থেকেছে-থাকছে, হাসছে-হাসাচ্ছে, ঘুমঘুম মুখ দেখেছে-দেখছে... ( ভা ব লে কে ম ন লা গে না ! ) !
স্টেফির জন্যই আমি টেনিসের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি এবং বাসার অন্যদের বিরক্ত করে ঘন্টার পর ঘন্টা 'হা' হয়ে টেনিস ম্যাচ দেখি (এবং সত্যিকার অর্থেই উপভোগ করি); তবে, ম্যাচটা যদি হয় শারাপোভার [মারিয়া শারাপোভা, রাশিয়া]। অন্য কারো ম্যাচের প্রতি আমার খুব একটা আগ্রহ নেই, এমনকি সানিয়া মির্জারও [সানিয়া মির্জা, ভারতের টেনিস তারকা, ওর নাম শুনলেই আমার বন্ধু মামুনের, মানে কবি মামুন খানের মুখ মনে পড়ে; সানিয়া আর ঐশ্বরিয়াকে নিয়ে কোনো কটু কথা শুনলেই মামুন তার স্বভাবিত ব্যঙ্গস্বরে রিপল্লাই করে: 'অ... বুইজ্সি, আপনেরা বৈদেশি মুরগী পছন্দ করেন, তা, লাবণ্যের কী বুঝেন হে?!!']। পত্রিকার কাটিংয়ের স্টেফি [কাটিংগুলো গ্রামে, আমার শখের বইয়ের তাকে রেখে এসেছি; 6 বছরে ইঁদুর কতোটা সাফ করলো ওদের? ভাবি। ভাবলে খারাপ লাগে না। ভালোও লাগে না। জমিয়ে কী হয় : 'কী ঘর বান্দিব আমি শূন্যেরও মাজার...'] আর টিভিতে লাইভ ম্যাচের শারাপোভা_ টেনিসের এই দুই অদৃশ্য মদে ডুবে ডুবে আমি আরো অলস হয়ে যেতে রাজি আছি।
সারাদিন খেলা দেখলাম। আমার 'সাবেক' সেকেণ্ড টিম ইন্ডিয়ার হারে ব্যাপক খুশি। আমি ভাই সাধারণ দর্শক, গাঙ্গুলি চান্স পাউক আর না পাউক, যতদিন গ্রেগ চ্যাপেল আছে, ততদিন আমি ইন্ডিয়ার সাফল্যে নাই, ব্যর্থতায়ও নাই! শুধু শচিনের ব্যাটিং ছাড়া ইন্ডিয়ার আর কিছুতে আমার আগ্রহ নেই। আজ, দক্ষিণ আফ্রিকার যখন শোচনীয় অবস্থা, ভেবেছিলাম ওদের রান অন্ততঃ দেড়শ' হোক। তাহলে শচিনের আরেকটা সেঞ্চুরির সম্ভাবনা থাকবে। চাইলাম কী, হলো কী! দণি আফ্রিকা 6 উইকেটে 76 থেকে 7 উইকেটে 274 করলো; আর শচিন?! মেজাজ খারাপ হলেও কিছু করার নেই। আজিজে যাওয়া হলো না আজ। অনেকদিন পর সারাদিন ঘরেই থাকলাম। এবং রাত দশটা পর্যন্ত টানা টিভি দেখলাম।
টিভিরুম থেকে সাড়ে 9 ঘন্টা পর সারা রাত্রির জন্য নিজের রুমে ফিরে কম্পিউটারে সিনেমা দেখবো না কোনো কিছু পড়ার চেষ্টা করব ভাবতে ভাবতেই 'ভাস্কর চক্রবর্তীর নির্বাচিত কবিতা' খুললাম এবং টাস্কি খেয়ে পড়লাম সামনে পড়া 'সরু গলি' [102 নম্বর পৃষ্ঠায় মুদ্রিত] কবিতাটাঃ
'পৃথিবীর যত সরু গলি আছে / এ-বছর / দেখা শেষ হবে // কখনো বিকেলবেলা সন্ধেবেলা / বন্ধুদের / মৃত সব বন্ধুদের মুখ মনে পড়ে // ভেতরে শরীর নেই কার জামা কার জামা ঝুলছে বারান্দায় // ডাক্তারখানায় আজ ভদ্র এক মহিলার চোখে জল / আর নয়া মোটরবাইকের / ব্রেক ঠিক আছে কিনা দেখে নিচ্ছে কে এক তরুণ // (কোথায় যে যাবে) // দিগন্তের সঙ্গে প্রিয় আজো দেখা হলো না আমার // শুধু দেখি কুয়াশায় ঢাকা বোবা আলো আর / সরু গলি / শহরের ঝিনুক ঢেঁকুর'।
_ এ কবিতাটি আমি লিখিনি? ভাস্কর লিখেছেন অনেক আগে, তবু কেন প্রথমবার পড়ার পরই মনে হচ্ছে, আমিই তো লিখলাম, এইমাত্র! তার মানে, 'দিগন্তের সঙ্গে প্রিয় আজো দেখা হলো না আমার' _এই বোধ আমারো?! তার মানে, 2006-এ আমি যা ভাবছি, ভেবে শব্দকে চুমু খেতে চেয়েছি যেভাবে, ভাস্কর তা অনেক আগেই, অনেক স্মার্টলি...! আমি জানি, এর মানে এই নয় যে, আমি ভাস্কর থেকে পিছিয়ে আছি [কবিতায় এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকার কোনো বিষয় নেই। যারা বলে, 'আছে', তারা 'সমালোচক', 'কবি' না]; এর মানে হল, আমার ও ভাস্করের চিন্তার পথটা কোনো কোনো জায়গায় এক হয়ে গেছে এবং এতে আমি খুশিও না, বেজারও নই। কেননা,
এ ই প থ অ দ্ভু ত ভা বে চি র কা ল ন তু ন
[রুদ্র আরিফ। খিলক্ষেত, ঢাকা। রবিবার। নভেম্বর 26, 2006। রাত 10টা 14 থেকে 11টা 26]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



