প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ স্যার,
বইমেলায় একবার আপনাকে দেখার সুযোগ হয়েছিলো। আপনি অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন। আমার হাতে হিমুর সদ্যপ্রকাশিত একটা বই ছিলো, অন্যপ্রকাশ থেকে কেনা। গায়ে পরনে ছিলো হলুদ রঙের পাঞ্জাবি। তবে পা খালি ছিলো না, চামড়ার স্যান্ডেল ছিলো... আপনার অটোগ্রাফ নেবার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে দু-একটা কথা বলার সুযোগ হয়েছিলো। এটাই ছিলো পাঠক ও অন্ধভক্ত হিসেবে আমার পরিতৃপ্তি।
জানেন স্যার, ছোটবেলায় আমার আর আমার বড়বোন রাখির শখ কি ছিলো? নিজেদের জমানো পয়সা দিয়ে আপনার বই কেনা। বইয়ের দোকানে গেলে আমরা একসাথে দুই-তিন হাজার টাকার বই কিনে নিয়ে বাসায় আসতাম। আমাদের বাসায় একটা বড় বুক-শেলফ আছে। সেখানে আপনার এমন কোনো বই নেই, যা খুঁজে পাওয়া যাবে না। ২০১১ এর বইমেলায় কিনেছিলাম হিমু এবং একজন রাশিয়ান পরীসহ আরো কিছু বই। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে! কত ইচ্ছা ছিলো হিমু হবো। মা ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় হলুদ পাঞ্জাবিও বানিয়ে দিলেন। সেই পাঞ্জাবি পরে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে প্রথম প্রথম কী লজ্জা! গার্লস স্কুলের মেয়েদের হাসি... আমি সেইসব স্মৃতি আপনাকে বলতে পারি নি। আজ বলছি, স্যার। আপনার হিমু চরিত্রটা আমার জীবনে অসম্ভব প্রভাব ফেলেছে। হিমুকে নিয়ে প্রথম পড়ি যে বইটা, চলে যায় বসন্তের দিন। চমৎকার মানুষকে নিয়ে অসাধারণ কাহিনী। কী এক জাদুর চরিত্র! আমাদের স্পাইডারম্যান, সুপারম্যান বা ব্যাটম্যান নামের সুপারহিরো নেই, কিন্তু হিমু নামের একজন আছে, যে একজন মহান পুরুষ হবার সাধনা করে যায় প্রতিনিয়ত... হিমু আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে ভালো কাজ করতে হয়, অনেক জটিল সমস্যার সমাধান কীভাবে সহজেই করা যায়, বিপদে কীভাবে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়... কীভাবে মানুষকে কাছে নিয়ে এসে আবার দূরে ঠেলে দিতে হয়, মায়া কাটানোর জন্য। ঠিকই লিখেছিলেন, দুনিয়াতে সবই মায়া। এ কারণেই আজ কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে গেছে। ইচ্ছা হচ্ছে একবার শুধু নিউইয়র্ক গিয়ে আপনাকে দেখে আসি, সাধ কিংবা সাধ্য থাকলেও উপায় যে নেই! সময় নেই... যান্ত্রিক জীবনে বন্দি এখন। কিন্তু ভেতরের শৈশব-কৈশোরের হিমু আজন্ম লালিত হতে থাকবে, বুকের গভীরে।
আমার শৈশবের সেই পাঞ্জাবিটা এখনো আছে। আজো আমার হলুদ রঙ ভীষণ প্রিয়। আজও জোছনারাতে আমি রাস্তায় হেঁটে বেড়াই... জীবনের মহান বোধকে স্পর্শ করার ব্যর্থ প্রচেষ্টায়...
আপনি আজ নক্ষত্র হয়ে মিশে গেছেন অনন্তে... ওখানে হয়তো বা আপনার সময় কাটছে মহামতি ফিহার সাথে, ইরিনা কিংবা ওমেগা পয়েন্ট এর সেই মেয়েটার সাথে... ওখানেও কী হিমু আছে? আছে মিসির আলি বা শুভ্র? জরী-পরী, রূপা, বাকের ভাই, বড়চাচা, মীরা... ওখানেও কী বহে লিলুয়া বাতাস? জানা নেই স্যার, আপনার চলে যাবার খবরটা সবাইকে জানিয়েছি, প্রার্থনা করতে বলেছি, দেশি-বিদেশি বন্ধুদের। বিদেশি বন্ধুরাও জানে আমাদের বাংলাদেশের বিখ্যাত একজন লেখকের মহাপ্রয়াণ ঘটেছে। যাঁর বিখ্যাত চলচ্চিত্র "শ্যামল ছায়া" অস্কার পুরষ্কারের জন্য পাঠানো হয়েছিলো, নমিনেশন পায় নাই, তবে সেটা ছিলো মুক্তিযুদ্ধের জন্য সুযোগ্য চলচ্চিত্র। যাঁর নতুন ছবি "ঘেঁটুপুত্র কমলা" আসছে, মুক্তির অপেক্ষায়...
জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণাধারায় এসো...
এই গানটা শুনছি আর এক ধরণের শূন্যতা বোধ করছি। আপনার গানের পছন্দ কত সুন্দর।
এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে এসো...
কিংবা আপনার নিজের লিখা :
চান্নিপসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়...
স্যার, এই হিমুদেরকে ফেলে চলে গেলেন!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




